দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে শনিবার মিশর পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রধানমন্ত্রী দেশের মাটিতে পা দিতেই মিশরীয় তরুণীর উষ্ণ অভ্যর্থনায় আপ্লূত হয়ে পড়েন মোদী। পরনে শাড়ি কন্ঠে 'শোলে' ছবির জনপ্রিয় গান ‘ইয়ে দোস্তি হাম নেহি তোরেঙ্গে’ গেয়ে প্রধানমন্ত্রী মোদীকে স্বাগত জানিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শনিবার (২৪ জুন) মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসির আমন্ত্রণে দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে কায়রো পৌঁছেছেন। ২৬ বছর পর কোনও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী প্রথম মিশরের দ্বিপাক্ষিক যাত্রা করেন। প্রধানমন্ত্রী মোদীর কায়েরোতে নামার পর টুইট করেছেন, "আমার বিশ্বাস রয়েছে যে এই যাত্রা মিশরের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক মজবুত করবে। প্রধানমন্ত্রী লিখেছেন, বিমানবন্দরে আমাকে স্বাগত জানাতে বিশেষ ব্যবস্থার আয়োজন করা হয়েছিল”।
এরই মাঝে সকলের নজর কেড়ে নেন এক মিশরীয় মহিলা। যিনি প্রধানমন্ত্রী মোদীকে স্বাগত জানাতে শোলে ছবির আইকনিক গান ‘ইয়ে দোস্তি হাম নেহি তোরেঙ্গে’ গেয়েছিলেন। সংবাদ সংস্থা এএনআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ওই মিশরীয় তরুণী জানিয়েছেন, ‘প্রধানমন্ত্রী মোদী তাকে বলেছিলেন যে ‘আপনি দেখতে অবিকল একজন ভারতীয়”। মোদীর মুখে এমন কথা শুনে রীতিমত আপ্লূত হয়ে পড়েন ওই তরুণী। গান শুনে হাততালিও দেন প্রধানমন্ত্রী মোদী।
সংবাদ সংস্থা এএনআই-এর শেয়ার করা একটি ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে মেয়েটি মোদীকে স্বাগত জানাতে ‘ইয়ে দোস্তি হাম নেহি তোরেঙ্গে’ গানটি গাইছেন। ওই তরুণী জানিয়েছেন, 'প্রধানমন্ত্রী মোদীর সঙ্গে দেখা করে খুব ভাল লাগল। তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন যে আমি কখনও ভারতে গিয়েছি কি না? তিনি আমাকে আরও জিজ্ঞাসা করেছিলেন আমি হিন্দি কোথা থেকে শিখেছি? উত্তরে আমি জানিয়েছি, ভারতীয় সিনেমা এবং গান শুনে আমি হিন্দি শিখেছি’।
দুই দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে শনিবার মিশর পৌঁছেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মিশরে পৌঁছে সেদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে এক বৈঠকও করেছেন মোদী। ব্যবসায়িক সম্পর্ক জোরদার করার বিষয়ে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যে আলোচনা হয়েয়। বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করার বিষয়েও আলোচনা হয়।
মিশরে বসবাসরত ৭০ জন অনাবাসী ভারতীয়’র সঙ্গেও দেখা করেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে 'প্রধান অতিথি' হিসাবে ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন মিশরের প্রেসিডেন্ট আবদেল ফাত্তাহ আল-সিসি। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার করার এবং দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা প্রসারিত করার একাধিক সম্ভাবনা নিয়ে আজই মিশরের প্রেসিডেন্ট আল-সিসির সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেবেন মোদী। ১৯৯৭ সালের পর এটি হবে কোনো ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রথম দ্বিপাক্ষিক সফর। মিশরের গ্র্যান্ড মুফতি শাওকি ইব্রাহিম আবদেল-করিম আল্লামের সঙ্গেও দেখা করেছেন মোদী। আলোচনায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি, উগ্রপন্থার মত একাধিক বিষয় উঠে এসেছে। এদিনের এই আলোচনায় ভারত ও মিশরের মধ্যে শক্তিশালী সাংস্কৃতিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা হয়। পাশাপাশি সামাজিক ও ধর্মীয় সম্প্রীতির বিষয়টিও আলোচনায় আসে। মিশরে প্রথম রাষ্ট্রীয় সফরে প্রধানমন্ত্রী মোদী রবিবার কায়রোর ঐতিহাসিক আল-হাকিম মসজিদ পরিদর্শন করবেন।
বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি টুইট করে জানিয়েছেন, "বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি, সবুজ হাইড্রোজেন, তথ্য প্রযুক্তি, ডিজিটাল লেনদেন প্ল্যাটফর্ম, ওষুধ এবং জনগণের মধ্যে যোগাযোগ সহ বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে সহযোগিতাকে আরও গভীর করার জন্য আলোচনা হয়েছে।"
প্রেসিডেন্ট আল-সিসি চলতি বছর প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ভারত সফর করেন। সফরের ছয় মাসের মধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর মিশর সফর ঘিরে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক আরও মজভূত হবে বলেই মনে করছেন ওয়াকিবহলমহল। এল-সিসি সেপ্টেম্বরে G-20 শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নিতে ভারত সফরে আসবেন। মিশরকে বিশেষ অতিথি হিসাবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।