আগামী বছরই তেলেঙ্গানা বিধানসভা নির্বাচন। নির্বাচন হবে দক্ষিণ ভারতের অন্যতম রাজ্য কর্নাটকেও। একইসঙ্গে ত্রিপুরা, মেঘালয়, নাগাল্যান্ড, মিজোরামের মতো দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যও নির্বাচনের সাক্ষী হবে ২০২৩-এ। মধ্যপ্রদেশ, ছত্তিশগড়ের মতো মধ্যভারতের রাজ্যের পাশাপাশি পশ্চিম ভারতের রাজস্থানও মুখোমুখি হবে বিধানসভা ভোটের। আর এই সব রাজ্যেই ভক্তি আন্দোলন, পাশাপাশি বৈষ্ণব আন্দোলনের ভালো প্রভাব রয়েছে।
দেশের ভক্তি আন্দোলন বা ভক্তিবাদ বৈষ্ণব মতাদর্শের অন্যরূপ। যার যুগপুরুষ হিসেবে আপামর ভারত রামানুজাচার্যকে একবাক্যে স্বীকার করে নিয়েছে। আদি শংকরাচার্য এবং তাঁর দশনামী সম্প্রদায় যেমন শৈব সম্প্রদায়কে ঘুরে দাঁড়ানোর পথ দেখিয়েছে। তেমনভাবেই রামানুজাচার্যের হাত ধরে ঘুরে দাঁড়িয়েছে দেশের বৈষ্ণব আন্দোলন। যার প্রভাব শুধু দক্ষিণ ভারতেই না। উত্তর ভারতেও সমানভাবে প্রভাব বিস্তার করেছে। তাঁর গ্রন্থেই নতুন করে বৈষ্ণব আদর্শকে আপন করে নিয়েছে আপামর ভারত।
বর্তমান সমাজেও গুরু পরম্পরার হাত ধরে দেশের বৈষ্ণব সমাজে রামানুজাচার্যই আদি গুরু। যাঁর অনুগামী হিসেবে কবির থেকে ভক্ত কবি সুরদাসদের বাকি ভারত চিনে নিয়েছে। সেই রামানুজাচার্যের মূর্তিই
রবিবার উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তা-ও এমন এক রাজ্যে, যেখানে ক্ষমতায় বিরোধী তেলেঙ্গানা রাষ্ট্রীয় সমিতি (টিআরএস)। ১১৯ আসনের তেলেঙ্গানা বিধানসভায় টিআরএসের আসনসংখ্যা ১১৯। আর মোদীর দল বিজেপির আসল মাত্র তিন।
রামানুজাচার্যের ২১৬ ফুটের মূর্তিটি বসানো হয়েছে শামসাবাদে। মূর্তিটির নাম দেওয়া হয়েছে, 'স্ট্যাচু অফ ইকোয়ালিটি'। এরমধ্যে ইকোয়ালিটি বা সাম্যতা বৈষ্ণব মতাদর্শের অন্যতম আদর্শ। স্বভাবতই রামানুজাচার্যের প্রচারে অন্যতম বিষয় ছিল সাম্যতা। মূর্তি উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রীও তাঁর বক্তব্যে স্বভাবতই তুলে এনেছেন এই সাম্যের প্রসঙ্গই। বলেছেন, 'স্ট্যাচু অফ ইকোয়ালিটি যুব শ্রেণিকে অনুপ্রাণিত করবে। রামানুজাচার্যের মূর্তি তাঁর জ্ঞান, অস্পৃশ্যতার বিরুদ্ধে লড়াই এবং আদর্শের পরিচয়।'
কয়েক বছর আগেই রোহিত ভেমুলার আত্মহত্যার ঘটনায় উত্তাল হয়েছিল দেশ। রোহিত হায়দারাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়া ছিলেন। সেই সময় বিজেপি বা গেরুয়া শিবিরের বিরুদ্ধে উচ্চবর্ণের প্রতিনিধিত্বের অভিযোগ তুলেছিল বাম মনোভাবাপন্ন এবং বিরোধী দলগুলো। ২০১৬-র দু'বছর পর হওয়া বিধানসভা নির্বাচনে স্বভাবতই তেলেঙ্গানায় প্রত্যাশার চেয়েও খারাপ ফল করেছিল বিজেপি। এক্ষেত্রে বিজেপির বিরুদ্ধে ওঠা বর্ণভেদের অভিযোগ আগামী নির্বাচনে যাতে প্রভাব বিস্তার করতে না-পারে, সেব্যাপারে নিশ্চিত হতে চান গেরুয়া শিবিরের নেতারা। এক্ষেত্রে বিজেপির বড় হাতিয়ার হতে পারে রামানুজাচার্যের ভক্তিবাদ। যা অস্পৃশ্যতার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের প্রতীক হয়ে রয়েছে হিন্দুত্বের ইতিহাসে। রামানুজাচার্যের মূর্তি উদ্বোধনের মধ্যে দিয়ে শনিবার যেন তাই ২০২৩-এর প্রস্তুতিই শুরু হয়ে গেল।