তিন দিনের গুজরাট সফরে রয়েছেন মোদী। এর মাঝেই ঘটে গিয়েছে ভয়াবহ সেতু বিপর্যয়। আগামীকালই শেষ হচ্ছে মোদীর গুজরাট সফর। আর আগামীকালই ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। সেতু বিপর্যয়ের জেরে বাতিল করা হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর একাধিক কর্মসূচী। মঙ্গলবার মোরবি যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
তথ্য অনুযায়ী, আগামীকাল বিকেলে মোরবি যাবেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। কথা বলবেন আহতদের সঙ্গে। দুর্ঘটনার পর নরেন্দ্র মোদী তার গুজরাট সফরের রোড শো বাতিল করেছেন। গান্ধীনগরে প্রস্তাবিত নির্বাচনী কর্মসূচীও বাতিল করেছেন তিনি। গুজরাটের মোরবি জেলায় সেতু বিপর্যয়ে মৃত্যু মিছিল। মাচ্ছু নদীর উপর ব্রিজ ভেঙে পড়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৩৩। গতকাল রাত থেকে একটানা চলছে উদ্ধারকাজ। রাতভর উদ্ধারকাজ চালিয়ে নদী থেকে বহু মানুষের নিথর দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছেন ৯৩ জন। সেনাবাহিনী-নৌবাহিনী-বিমানবাহিনীর যৌথ দল উদ্ধারাভিযান জারি রেখেছে।
সূত্রের খবর আগামীকাল তিনি মোরবি যাবেন এবং সেতু দুর্ঘটনায় যারা প্রাণ হারিয়েছেন তাদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করবেন। হাসপাতালে ভর্তি আহতদের সঙ্গেও দেখা করবেন প্রধানমন্ত্রী। রবিবার সন্ধ্যায় ঘটে যাওয়া এই বেদনাদায়ক দুর্ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ১৩৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন ৯৩ জন এবং ২০ জন গুরুতর আহত হয়েছেন, যাদেরকে মোরবি সিভিল হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে। একই সঙ্গে উদ্ধার করা হয়েছে প্রায় ২০০ জনকে। এর আগে, সোমবার স্ট্যাচু অফ ইউনিটির কাছে জাতীয় ঐক্য দিবস উপলক্ষে ভাষণে মরবি সেতু দুর্ঘটনার কথা উল্লেখ করে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
আরও পড়ুন : < ধর্ষণের প্রমাণ পেতে ‘টু ফিঙ্গার টেস্ট’ নয়, নির্দেশ সুপ্রিম কোর্টের >
সেতু দুর্ঘটনার জন্য "দুঃখ" প্রকাশ করেন মোদী এবং পাশাপাশি দুর্ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের পরিবারের প্রতি সমবেদনাও জানান। আবেগঘন কণ্ঠে প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, 'আমি একতা নগরে আছি কিন্তু আমার হৃদয় মরবি দুর্ঘটনায় দুর্গতদের পাশে রয়েছে। আমি আমার জীবনে এমন কষ্ট খুব কমই অনুভব করেছি। একদিকে আমার মন বেদনায় ভরা ,অন্যদিকে আমি অবিচল কর্তব্যের পথে।প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, এই শোকের মুহূর্তে সরকার সব রকম নিহতদের পাশে আছে। গুজরাট সরকার গতকাল থেকে ত্রাণ ও উদ্ধার তৎপরতা চালাচ্ছে। কেন্দ্রও রাজ্য সরকার এই দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসার যাবতীয় দায়ভার গ্রহণ করেছে। পাশাপাশি নিহতদের পরিবারকে সমবেদনাও জানান।
প্রধানমন্ত্রী মোদী ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রী ত্রাণ তহবিল থেকে এই ঘটনায় নিহতদের পরিবারের জন্য ২ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন। পাশাপাশি সেতু মেরামতির দায়িত্বে থাকা ওরেভা কোম্পানি এবং অন্যান্য আধিকারিকদের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই আইপিসির ৩০৪,৩০৮ এবং ১১৪ নম্বর ধারার অধীনে একটি এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। এই ঘটনায় মোরবি পুলিশ ও গুজরাট এটিএস ওরেভা কোম্পানির ৯ কর্মীকে আটক করেছে। প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, এই ৯ অভিযুক্তকে ধরতে গুজরাট ATS, রাজ্য গোয়েন্দা বিভাগ এবং মোরবি পুলিশ বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়েছিল। তাদের সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে এবং সন্ধ্যার মধ্যে গ্রেফতার করা যাবে।
জানা যায়, সম্প্রতি ওরেভা কোম্পানি সেতুটির মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের টেন্ডার পেয়েছিল। দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী, মেরামতের পর পরবর্তী ১৫ বছর ব্রিজটির রক্ষণাবেক্ষণ করার কথা ছিল কোম্পানির। ৭ মাস মেরামতের পর গত ২৬ অক্টোবর এই ক্যাবল সাসপেনশন ব্রিজটি জনসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়। পাঁচ দিন পর ৩০ অক্টোবর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে ৭টার মধ্যে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে সেতু।
মেরামতির জন্য সাত মাস আগেই গুজরাটে মাচ্ছু নদীর উপর সাসপেনশন সেতুটি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। পরে গত ২৬ অক্টোবর ওই সেতু খুলে দেওয়া হয়। জানা গিয়েছে, মোরবি পুরসভার ফিট সার্টিফিকেট ছাড়াও তড়িঘড়ি সাসপেনশন সেতুটি সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছিল। এ বছর মার্চেই মোরবির ওরেভা গ্রুপকে সেতুটি রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বরাত দেওয়া হয়েছিল। মাচ্ছু নদীর উপর উনিশ শতকের শুরুতে ঝুলতা পুলটি (সাসপেনশন ব্রিজ) তৈরি হয়েছিল। রবিবার ছট পুজোর দিন প্রায় দেড়শ জনের ভার বহন করতে না পেরে সেটি ভেঙে পড়ে।