প্রধানমন্ত্রী মোদীর এই স্কুল হয়ে উঠবে শিশুদের ‘অনুপ্রেরণা’। গুজরাটের ভাডনগরে যে স্কুল থেকে প্রধানমন্ত্রী মোদী তার প্রাথমিক শিক্ষার পাঠ নিয়েছিলেন, এবার সেই স্কুলই শিশুদের আগামীর অনুপ্রেরণা জোগাবে। ‘প্রেরনা’ প্রকল্পের অধীনে স্কুলভবনটিকে পুনর্নির্মাণ করা হচ্ছে। কাজ মোটামুটি শেষের পর্যায়ে। ‘প্রেরণা’ প্রকল্পের অধীনে স্কুলের পুনর্নির্মাণের উদ্দেশ্য হল এই স্কুলটি যেন শিশুদের জন্য ‘অনুপ্রেরণার কেন্দ্র’ হিসেবে গড়ে উঠতে পারে।
ঊনবিংশ শতাব্দীর শেষভাগে নির্মিত এই স্কুল ভবনটি পুরানো স্থাপত্য শৈলীতে আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া (ASI) সংস্কার করেছে। গুজরাটের ভাডনগরকে বিশ্বমানের পর্যটন স্থান হিসেবে গড়ে তোলার প্রস্তুতিও চলছে পুরোদমে। তৈরি করা হবে একটি বড় জাদুঘরও।
মিডিয়া রিপোর্ট অনুযায়ী, এই বছরের শেষের দিকে এই স্কুলভবনটি চালু হবে। এর জন্য একটি অনুষ্ঠান আয়োজনের সম্ভাবনা রয়েছে। দেশের প্রতিটি জেলা থেকে দুজন করে শিক্ষার্থী এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করবে। মোট ৭৫০টি জেলার প্রায় ১৫০০ পড়ুয়া এই কর্মসূচীতে মোদীর স্কুলে এসে আগামীর প্রেরণা নিতে পারবে।
মোদীর ছোটবেলার স্কুলে 'প্রেরণা' ট্যুর মোদীর সেই প্রাথমিক স্কুলকেই এবার ‘প্রেরণা: দ্য ভার্নাকুলার স্কুল’হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করছে সরকার। এক সরকারি আধিকারিকের কথায়, "এটা শুধু স্কুল নয়, শিক্ষা এবং মূল্যবোধের পাঠ। দেশের ৭৪০টি জেলার পড়ুয়াদের উৎসাহিত করতেই এই প্রয়াস, যার সূত্রপাত ভাডনগর থেকে।" ১৮৮৮ সালে তৈরি হয়েছিল এই স্কুল। ২০১৮ সালে বন্ধ হয়ে যায় পঠন-পাঠন। সরকারি আধিকারিক সূত্রে খবর, সাপ্তাহিক এই ট্যুরে প্রতিটি ব্যাচে থাকবে ৩০ জন করে পড়ুয়া।
স্কুলের প্রাক্তন ছাত্র সুরেশ দর্জি। এখন দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়া। সুরেশ ও তার ছোট ভাই স্কুলের শেষ ব্যাচের ১৯০ জন পড়ুয়ার মধ্যে ছিলেন। এই স্কুলেই ৬৭ বছর আগে ভর্তি হন দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সুরেশ বলেন, ‘আমাদের জন্য এ এক গর্বের বিষয়’। তিনি বলেন, ‘আমরা গর্বিত মোদী যে স্কুলে পড়তেন সেই স্কুলেই আমরা পড়াশুনা করেছি’। স্কুলের নথি অনুসারে, মোদি ১৩ জুন, ১৯৫৬-এ ভাডনগরের এই স্কুলে ভর্তি হন। স্কুলের প্রাক্তন হেডমাস্টার শরদ মোদী বলেন, "মোরারজি দেশাই এবং অটল বিহারী বাজপেয়ীর মতো মহান নেতারাও ঐতিহাসিক বিদ্যালয়ে তাদের নির্বাচনী সভা করেছেন’। ১৯৮৯ সাল পর্যন্ত, এই বিদ্যালয়ই ছিল ভাডনগরের পড়ুয়াদের জন্য একমাত্র প্রাথমিক স্কুল। বর্তমানে ১২টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে সেখানে। ১৯৭৫ থেকে ১৯৮৫ সালের মধ্যে এই বিদ্যালয় ছিল শীর্ষে। প্রায় ৫০০ পড়ুয়া স্কুলে পড়াশুনা করতেন। এমনটাই জানিয়েছেন স্কুলের প্রাক্তন শিক্ষক ভরতভাই প্যাটেল।
প্রস্তাবিত পরিকল্পনা অনুসারে ‘প্রেরণা: দ্য ভার্নাকুলার স্কুল’ ভারতকে অনুপ্রাণিত করার উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে। কীভাবে এই স্কুলের এক প্রাক্তনী আজ দেশের সর্বাধিনায়ক সেটাই আগামীর পড়ুয়াদের অনুপ্রেরণা জোগাবে।
অনন্ত ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ডিন জেসমিন গোহিল বলেছেন, প্রায় ৫০ থেকে ৬০ জন শিক্ষার্থীর একটি দল ২০২০ সালে স্কুলটি পরিদর্শন করেছিল। তারপরে আমরা স্কুলটি ঢেলে সাজানোর এবং শিক্ষার্থীদের জন্য এক সপ্তাহের প্রোগ্রাম সহ একটি ‘অনুপ্রেরণামূলক স্কুলে’ পরিণত করার জন্য একটি প্রাথমিক প্রস্তাব প্রস্তুত করি... আমরা রাজ্য পর্যটন বিভাগে প্রস্তাবটি জমা দিয়েছিলাম। প্রস্তাব অনুসারে, আটটি শ্রেণীকক্ষ বিভিন্ন থিমের উপর তৈরি করা হবে। একটিতে মোদীর জীবনকে সাতটি পর্বে প্রকাশ করা এবং সাতটি শ্রেণীকক্ষে প্রদর্শন করা হবে। আমি কে, ভারত এবং এর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য এবং আমি আমার দেশের জন্য কী করতে পারি, এই ভাবনাকে ছাত্র ছাত্রীদের মধ্যে ছড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হবে এই স্কুলে ট্যুরের মাধ্যমে’।
প্রকল্পে কর্মরত একজন সরকারী কর্মকর্তা বলেছেন, স্কুলভবনের মূল প্রাঙ্গনকে রেখেই ঢেলে সাজানো হবে এই ভবন। স্কুলভবনটি আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করেই তৈরি করা হচ্ছে। থাকবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির সুবিধাও”।