বাংলার বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই প্রথমবার জনসভা করলেন নরেন্দ্র মোদী। মোদীর সফর উপলক্ষে নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে ফেলা হয়েছে হলদিয়া৷ নিরাপত্তার কারণে মূলমঞ্চের সামনে ৩০ ফুট অংশ ফাঁকা রাখা হয়েছে৷ এলাকায় মোতায়েন করা হয়েছে প্রায় ৪ হাজার পুলিশ৷ গোটা চত্বর ঘিরে রয়েছে ত্রিস্তর নিরাপত্তাবলয়৷ এদিনের মঞ্চ থেকেই মমতা ও তৃণমূল সরকারকে নিশানা করেন নরেন্দ্র মোদী।
কী কী বললেন মোদী?
নমস্কার!
- আজ মা গঙ্গার পাশেই এখানে আছি আমি। আর ওদিকে মা গঙ্গার উৎপত্তিস্থল উত্তরাখণ্ড এখন বিধ্বস্ত। ক্ষতি ও লোকসানের খবর আসছে ক্রমাগত। সে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখছি। উদ্ধারকাজ চলছে যুদ্ধকালীন তৎপড়তায়। সুরক্ষিত স্থানে সকলকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। সরকার সব রকম সাহায্য করছে।
- আমার প্রিয় মা, বোন ভাই ও বন্ধুরা। মেদিনীপুরের এই পবিত্র মাটিতে আসতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। মাতঙ্গিনী, ক্ষুদিরামের রক্তে ভিজেছে ভূমি। এই মাটির বীর সন্তান বিদ্যাসাগর মহাশয় বাঙ্গালিকে বর্ণ পরিচয় দিয়েছে।
- এই গ্যাসের লাইন হলে, রাস্তা হলে, রেলব্রিজ হলে এখানকার কৃষক-শ্রমিকরা অনেক সুযোগ পাবে। এলপিজি গ্যাস অনেক তাড়াতাড়ি পাওয়া যাবে। বাংলার মানুষের কর্মসংস্থান হবে।
- কলকাতায় দ্রুত মেট্রোর কাজ চলছে। এই বাজেটে কেন্দ্র সরকার এই বছরেও হাজার কোটি টাকা পশ্চিমবাংলার সড়ক বানানোর জন্য বরাদ্দ করেছে। পশ্চিমবঙ্গের সঙ্গে শিলিগুড়ি, পাঞ্জাব, বিজয়ওয়ারা যুক্ত হবে নতুনভাবে।
- রেলমন্ত্রক গত বছরের তুলনায় ২৫ শতাংশ বেশি খরচ করবে বাংলার জন্য। পূর্ব মেদিনীপুরের জন্য ফিসিং হাব বানানো হবে। যাতে মৎসজীবীরা উপকৃত হন।
- চা বাগানের জন্য বাংলার শ্রমিকদের হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। যাতে এখানকার চা বাগানে কর্মরত মা-বোনেরা সকলে ভাল থাকতে পারে।
- বাংলায় ৫ হাজার কোটি টাকার প্রকল্প উদবোধন করব। বাংলার অনেক জেলায় পাইপলাইনে গ্যাস পৌঁছবে।
- একসময় বাংলার শিক্ষা দেশকে দিশা দেখিয়েছিল। সেই বাংলা গতি আজ ঠিক নেই। যতটা এগিয়ে ছিল তা নেই। সেই গতি বজায় থাকলে আজ বাংলা কোথায় পৌঁছে যেত। সেগুলি কিছুই হয়নি।
- মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকারকে পরোক্ষ আক্রমণ করে মোদী বলেন, "এখন বাংলা আধুনিকতা চায়। গত ১০ বছরে এখানকার সরকার কটা কারখানা বানিয়েছে? স্টিল প্ল্যান্টগুলির কী হল? এখানকার রাজনীতি বাংলার বৃদ্ধির গতি কমিয়ে দিয়েছে।"
- বিকাশের রাজনীতি বাংলায় হয়নি। কংগ্রেস, বাম ভ্রষ্টাচার অত্যাচারে শীর্ষে ছিল। বিকাশ কিছুই হয়নি। ২০১১ সালে মমতা দিদি বাংলায় পরিবর্তনের আশ্বাস দিয়েছিল। দেশের সবাই ওকে ভরসা করেছিল। বাংলাও সেই আশ্বাসে বিশ্বাস করেছিল। বদলে নির্মমতা মিলেছে।"
- পরিবর্তন নয়, মমতা সরকার বাম সরকারের পুনর্জীবন এনেছেন। হিংসা, অপরাধী, ভ্রষ্টাচারের পুনর্জীবন এসেছে। তাই এত গরীবি বাড়ছে। কৃষকরা সুবিধা পাচ্ছেন না। সাধারণ মানুষের যা অধিকার তা এখানের সরকার ভোগ করছে। চাকরি তাহলে কীভাবে পাবে যুবকরা?"
- দিদিকে যদি এসব নিয়ে জিজ্ঞেস করা হয় তাহলে উনি চেঁচামেচি করে যান।
- 'ভারত মাতা কি জয়' বললে উনি রেগে যান, আর দেশের বিষয়ে কিছু বললে ওঁর তখন আর কিছু বলেন না।
- ভারতকে বদনাম করার সব রকম চেষ্টা করে যাওয়া হচ্ছে। এত কিছু হচ্ছে দেশ জুড়ে। কিন্তু এই বিষয়ে দিদির মুখ থেকে এটা কোনও কথা শুনেছেন?
- এদের সকলকেই বলছি দেশ এই ষড়যন্ত্রকারীদের ঠিক সময়ে সঠিক জবাব দেবে।
- মা-মাটি-মানুষের কথা বলেন অনেকে। কিন্তু দেশ মায়ের কথা ভেবে আওয়াজ তোলার সাহস নেই। আসলে এরা রাজনীতিকে অপরাধকরণ করেছেন।
- নন্দীগ্রামে যারা গুলি চালিয়েছেন, মানুষকে মেরেছেন তাঁদের কেন নিজেরা নিজেদের দলে নিচ্ছেন সেটা বাংলার মানুষ জিজ্ঞেস করছে। এটা সেই সরকার, যারা মানুষের দুঃসময় নিজেরা ভ্রষ্টাচারের রাজনীতি করে যায়।
- এত বড় আমফান ঘূর্ণিঝড়ে কেন্দ্র যখন টাকা পাঠিয়েছিল সেই টাকা কোথায় গেল সেটা বাংলার মানুষ খুব ভালভাবে জানে। আদালত পর্যন্ত বিষয়টি গিয়েছে।
- করোনার জন্য গোটা বিশ্ব ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর কেন্দ্র সেই সময় বাংলার জন্য তাড়াতাড়ি মুক্ত রেশনের ব্যবস্থা করেছিল। যাতে আমার ভাই বোনেরা না খেয়ে না থাকেন। কিন্তু কেন্দ্রের সেই রেশন এখানকার সরকার গরীবদের কাছে পৌঁছে দেয়নি।
- নন্দীগ্রামে যারা গুলি চালিয়েছেন, মানুষকে মেরেছেন তাঁদের কেন নিজেরা নিজেদের দলে নিচ্ছেন সেটা বাংলার মানুষ জিজ্ঞেস করছে। এটা সেই সরকার, যারা মানুষের দুঃসময় নিজেরা ভ্রষ্টাচারের রাজনীতি করে যায়।
- এত বড় আমফান ঘূর্ণিঝড়ে কেন্দ্র যখন টাকা পাঠিয়েছিল সেই টাকা কোথায় গেল সেটা বাংলার মানুষ খুব ভালভাবে জানে। আদালত পর্যন্ত বিষয়টি গিয়েছে।
- করোনার জন্য গোটা বিশ্ব ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আর কেন্দ্র সেই সময় বাংলার জন্য তাড়াতাড়ি মুক্ত রেশনের ব্যবস্থা করেছিল। যাতে আমার ভাই বোনেরা না খেয়ে না থাকেন। কিন্তু কেন্দ্রের সেই রেশন এখানকার সরকার গরীবদের কাছে পৌঁছে দেয়নি।
- বাংলার কৃষকদের প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধি প্রকল্পের সঙ্গে জুড়তেই দেয়নি এখানকার সরকার। বঞ্চিত করেছে তাঁদের। কত বড় অন্যায় করা হয়েছে ভাবুন। বাংলার কৃষকরা মমতাদিদিকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য যখন সুর তুলেছে তখন চিঠি পাঠিয়েছে কেন্দ্রে।
- ২৫ লক্ষ কৃষক নথিভুক্তের জন্য নাম পাঠিয়েছিল। কিন্তু এখানকার সরকার চায় না কৃষকরা টাকা পান। তাই মাত্র ৬ হাজারের নাম দেওয়া হয়েছে। কেন্দ্র এখনও সেই কৃষকদের টাকা পাঠাতে পারছে না। কারণ এই তৃণমূল সরকার। কিচ্ছু ব্যাঙ্ক বিবরণ দেওয়া হয়নি।
- এখানে বিজেপির ডবল ইঞ্জিনের সরকার আসুক আমি চাই। বাংলায় এবার আসল পরিবর্তন আসুক।
- এখনও নতুন শিক্ষানীতি চালু করেনি বাংলা। এক দেশ, এক রেশন কার্ড দেশে চালু হলেও, বাংলায় হয়নি।
- বাংলা ফুটবলের রাজ্য। কিন্তু তৃণমূল একের পর এক ফাউল করে চলেছে। খুব তাড়াতাড়ি বাংলা তৃণমূলকে রাম কার্ড দেখাবে।
- পিসি ভাইপোকে হটিয়ে দেওয়ার মন বাংলার মানুষ নিয়ে নিয়েছে। পিসি ভাইপোর জন্য যারা অশান্তিতে ভুগছিলেন সেই সব নেতারা এখন জয় শ্রী রাম করছেন। তাঁরা বাংলার জন্য কাজ করতে চায়।
এই সভা যেহেতু অধিকারি-গড়ে তাই রাজনৈতিক তাৎপর্যও রয়েছে যথেষ্ট। বাংলা সফর প্রসঙ্গে মোদী লিখেছেন, "‘আগামী কাল সন্ধ্যায়, আমি পশ্চিমবঙ্গের হলদিয়ায় থাকব। সেখানে একটি অনুষ্ঠানে, বিপিসিএল নির্মিত এলপিজি আমদানি টার্মিনালটি জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করব। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী উর্জা গঙ্গা প্রকল্পের অন্তর্গত ধোবি- দুর্গাপুর প্রাকৃতিক গ্যাস পাইপলাইন বিভাগ জাতির উদ্দেশে উৎসর্গ করব’।
সরকারি অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য আমন্ত্রণ পাঠানো হয়েছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় এবং তমলুকের তৃণমূল সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারি, কাঁথির সাংসদ শিশির অধিকারিদের। কিন্তু নবান্নের তরফে জানান হয়েছে এই অনুষ্ঠানে থাকতে পারবেন না মমতা।
Read the full story in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন