রীতিমতো বলিউডের চিত্রনাট্যকেও হার মানাবে দুষ্কৃতীদের কীর্তিকলাপ। সিধু মুসেওয়ালা খুনের ঘটনায় ধৃত দুষ্কৃতীদের জিজ্ঞাসাবাদে উঠে আসছে নিত্যনতুন তথ্য। গ্যাংস্টারদের কাজের ধরন সম্পর্কেও আঁচ পাচ্ছেন তদন্তকারী। আর, তাতেই তদন্তকারীদের চোখ মাথায় উঠেছে। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, খুন হওয়ার দিন (২৯ মে), মুসেওয়ালা বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ। তাঁর নন-বুলেটপ্রুফ গাড়ি তিনি নিজেই চালাচ্ছিলেন। সঙ্গে ছিলেন প্রতিবেশী গুরবিন্দর সিং ও খুড়তুতো ভাই গুরপ্রীত সিং।
ইতিমধ্যে এই খুনের ঘটনায় আট জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তার মধ্যে হরিয়ানা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে বেশ কয়েকজনকে। ধৃতদের মধ্যে সন্দীপ সিং ওরফে কেকদা হরিয়ানার সিরসা জেলার বাসিন্দা। মনপ্রীত সিং ওরফে মান্না ভাতিন্দা জেলার তালওয়ান্ডি সাবো এলাকার বাসিন্দা, মনপ্রীত বাহু ফরিদকোটের ধাইপাইয়ের বাসিন্দা, সরোজ মিন্টু অমৃতসরের দোদে কালসিয়া গ্রামের বাসিন্দা, প্রভদীপ সিধু ওরফে পাব্বি হরিয়ানার তাখত-মলের বাসিন্দা, মনু ডাগর হরিয়ানার সোনিপত জেলার রিউলি গ্রামের বাসিন্দা, পবন বিষ্ণোই এবং নসিব হরিয়ানার ফতেহাবাদের বাসিন্দা। ধৃতরা মুসেওয়ালা খুনের ঘটনায় দুষ্কৃতীদের আশ্রয় দেওয়া, তাদের অস্ত্র এবং গাড়ি সরবরাহ করা-সহ অন্যান্য সাহায্য করেছিল বলেই তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন।
পঞ্জাব পুলিশের অ্যান্টি গ্যাংস্টার টাস্ক ফোর্সের অতিরিক্ত ডিরেক্টর জেনারেল প্রমোদ বাণ মঙ্গলবার জানিয়েছেন, ধৃতদের মধ্যে সন্দীপ ওরফে কেকদার একটা বড় দায়িত্ব ছিল। কানাডায় ফেরার গ্যাংস্টার গোল্ডি ব্রার ও জেলবন্দি গ্যাংস্টার লরেন্স বিষ্ণোইয়ের ভাইপো শচীন থাপান তাকে একটা বড় দায়িত্ব দিয়েছিল।
ওই দুই গ্যাংস্টারের নির্দেশ অনুযায়ী, কেকদা নিজের কাছে একটি ট্যাব রেখেছিল। সেই ট্যাবে মুসেওয়ালার বিভিন্ন অনুষ্ঠান, তার বিভিন্ন কাজকর্মের ভিডিও এবং ছবি ছিল। কেকদাকে বলা হয়েছিল যাতে সে অনুরাগী হিসেবে মুসেওয়ালার কাছে নিজেকে তুলে ধরতে পারে। সেইমতো এই সব ছবি এবং ভিডিও ট্যাবে রেখেছিল ধৃত অভিযুক্ত। প্রমোদ বাণ বলেন, 'খুনের সময় মুসেওয়ালা যখন বাড়ি থেকে বের হচ্ছে, সেই সময় কেকদা তাঁর সঙ্গে সেলফিও তুলেছিল। মুসেওয়ালার বাড়ি ছাড়ার প্রমাণ হিসেবে সেই সেলফি চলে গিয়েছিল কানাডার গ্যাংস্টারের কাছে। একইসঙ্গে পৌঁছে গিয়েছিল খুনিদের কাছেও।'
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, খুনিরা জানত যে মুসেওয়ালা একা নন। তাঁর সঙ্গে রক্ষীরাও আছেন। গাড়ি যে মুসেওয়ালাই চালাচ্ছেন। সেটা নন-বুলেটপ্রুফ গাড়ি, গাড়ির নম্বর কত, সবই খুনিদের ফোনে জানিয়েছিল ধৃত সন্দীপ ওরফে কেকদা। ধৃতদের মধ্যে মনপ্রীত মান্না তার গাড়ি মনপ্রীত বাহুকে দিয়েছিল। আর, মনপ্রীত বাহু সেই গাড়িই ব্যবহারের জন্য দিয়েছিল মুসেওয়ালার খুনিদের। এই গাড়ি লেনদেনের গোটা পরিকল্পনাটা আবার সাজিয়েছিল সরোজ মিন্টু। যে গোল্ডি ব্রার আর শচীন থাপানের ঘনিষ্ঠ বলেই গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন। পুলিশের দাবি, ধৃত প্রভদীপ সিধু ওরফে পাব্বি খুনিদের আশ্রয় দিয়েছিল।
আরও পড়ুন- খুনের ১০ দিন পর, কেন আচমকা মুসেওয়ালার বাড়ি ছুটলেন রাহুল?
তদন্তকারীদের সন্দেহ, মুসেওয়ালার খুনের চক্রান্ত চলছিল জানুয়ারি থেকে। সেই জন্য জানুয়ারিতেই হরিয়ানা থেকে গোল্ডি ব্রারের দুই শাকরেদ এসে ঘাঁটি গেড়েছিল পাব্বির ঠিকানায়। পাব্বি ওই দুই ব্যক্তিকে মুসেওয়ালার বাড়ি ও আশপাশের অঞ্চলগুলোর খবর এনে দিত। ধৃত অপর অভিযুক্ত মনু ডাগর আরও দুই শুটারকে জোগার করেছিল। পাশাপাশি, শুটারদের গোটা দলটাকে পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দিয়েছিল। ধৃত পবন বিষ্ণোই এবং নসিব শুটারদের গাড়ি ভাড়া দিয়েছিল। সঙ্গে, তাদের পালাতেও সাহায্য করেছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ।
Read full story in English