তাঁর সামনে ছিল বিশাল চ্যালেঞ্জ,বহু মানুষের প্রাণ বাঁচানোর আর্তি। 'ফণী'র ছোবল থেকে ওড়িশাকে বাঁচানোর আপ্রাণ চেষ্টা করে গেছেন তিনি। 'ফণী' বিপর্যয়ের পর এই প্রথম সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাৎকার দিলেন ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী। ফণী দাপটে ভারতের এই পূর্ব উপকূলবর্তী অঞ্চলে প্রাণ হারিয়েছে ৪১জন মানুষ। তাদের কথা স্মরণ করেই তিনি বলেন বিশেষ রাজ্যর মর্যাদা না পেলে বিপর্যয়ের পর রাজ্যে যে বিপুল ক্ষয়ক্ষতি হয় তা পূরণ করা সম্ভব হয় না। তাই বিশেষ রাজ্যের মর্যাদা পেতে চায় ওড়িশা, জানালেন ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়ক। ওড়িশাকে দুর্যোগপ্রবণ রাজ্যের তকমা দিয়ে এই দাবি করেন তিনি। প্রতি বছর যেসব প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হয় ওড়িশাকে, তাঁর ভিত্তিতেই এই দাবি জানান তিনি।
সংবাদসংস্থা পিটিআইকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে নবীন পট্টনায়েক বলেন, "কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে আমাদের এটি অন্যতম একটি দাবি। প্রতি বছর প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের সম্মুখীন হতে হয় ওড়িশাকে। কেন্দ্র থেকে আমরা যে সাহায্য পাই তা মূলত সাময়িক কিছু পরিকাঠামোগত পুনর্নির্মাণের জন্য। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী কাজগুলো করার জন্য আমাদের রাজ্যের নিজস্ব তহবিল থেকে অনেক খরচ করতে হয়।" প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "এই মুহূর্তে আর্থিক ধাক্কায় জর্জরিত আমাদের অর্থমন্ত্রক। শুধুমাত্র এই কারণেই ওড়িশাকে আলাদা করে বিভাগের আওতায় আনা প্রয়োজন। গত পাঁচ বছরে ফাইলিন, হুদহুদ, তিতলি, এবার ফণী সামলাতে হয়েছে আমাদের। এছাড়াও প্রতি বছর ভয়ঙ্কর রকমের বন্যা সামাল দিতে হয়।"
আরও পড়ুন দিল্লি থেকে বলছি: বেশ কিছু প্রশ্ন, কিন্তু উত্তর পেতে সেই ২৩ মে
উল্লেখ্য, ২০০০ সালে প্রথম ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ গ্রহণ করেন পট্টনায়ক এবং পরবর্তীতে চার বার মুখ্যমন্ত্রী পদে আসীন হন তিনি। এই মূহুর্তে তাঁর রাজ্যের পরিকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য দাবি নিয়ে কেন্দ্রের কাছে আর্জি জানিয়ে বলেন, "আমরা দেশের অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় বৃদ্ধির হার বজায় রেখেছি, আর্থ-সামাজিক সূচকেও এগিয়ে আছি আমরা। কিন্তু এই বিশেষ রাজ্যের তকমা পেলে আমরা নিজেদেরকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব"। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বিবেচনা করে ফণীকে 'জাতীয় দুর্যোগ' ঘোষণা করা উচিত কিনা সে সম্বন্ধে জানতে চাইলে তিনি বলেন, একমাত্র ওড়িশাকে বিশেষ রাজ্যর মর্যাদা দিলেই এর সমাধান সম্ভব।
প্রসঙ্গত, ফণীর বিপর্যয়ের পর প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ওড়িশার জন্য ১০০০ কোটি টাকা অর্থ বরাদ্দ করেছিল এবং ফণী বিধ্বস্ত এলাকাগুলি পরিদর্শনও করেন। রাজ্যের দুর্যোগের আগে রাজ্য প্রশাসনকে সহযোগিতা করার জন্য মোদী জনগণের প্রশংসা করেন এবং পট্টনায়ককে তাঁর কাজের জন্য আলাদা করে ধন্যবাদও জানান। সবরকম সাহায্য করার প্রতিশ্রুতিও দেন নমো।
Chief Minister of Odisha Naveen Patnaik writes to Prime Minister Narendra Modi thanking the Union Government for the help rendered to the state during #CycloneFani and to consider sanctioning 5 lakh PMAY(G) special houses. pic.twitter.com/BMpYjG26Af
— ANI (@ANI) May 13, 2019
তবে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে পাওয়া প্রশংসাকে নিজের করে রাখেননি ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী। বরং তাঁর কাজকে 'টিমওয়ার্ক' বলেই দাবি করেন এবং আলাদা করে ধন্যবাদ দেন ওড়িশার প্রতিটি মানুষকে। তিনি স্বীকার করেছেন যে, বিধানসভা নির্বাচনের সঙ্গে ঝড়ের বিপর্যয় বিবেচনা করলে এটি তাঁর সরকারের পক্ষে আরও কঠিন কাজ ছিল। ফণীর মতো ঝড়ের সঙ্গে মোকাবিলা এর আগেও ওড়িশা করেছে কিন্তু এবারের বিপর্যয়ের মাত্রা অনেকটাই বেশি ছিল।
আরও পড়ুন ভুল করে বিজেপিকে ভোট, আক্ষেপে আঙুল কাটলেন তরুণ
ওড়িশাকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে কতটা চ্যালেঞ্জ নিতে হয়েছিল তাঁর সরকারকে, তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, "সরকারের তরফ থেকে জরুরী তৎপরতায় সবরকম পদক্ষেপ করা হচ্ছে"। তিনি আরও বলেন, "আমরা জনজীবনকে স্বাভাবিক আনতে সবরকম প্রচেষ্টা করছি। বিদ্যুতের পরিকাঠামো পুরোপুরি বিপর্যস্ত, বিশেষ করে পুরী এবং খুরদা জেলার কিছু অংশে বিদ্যুৎ আনা গেলেও বেশিরভাগ জায়গাতেই বিদ্যুৎ ব্যবস্থা ঠিক করা সম্ভব হয়নি। কয়েক লক্ষ ঘর-বাড়ি ধ্বংস হয়েছে, গাছপালা নষ্ট হয়েছে বহু, এমনকি জল সরবরাহও বন্ধ ছিল বেশ কিছুদিন। আগামী বর্ষায় বিপুল পরিমাণে বৃক্ষ রোপণ করার ভাবনা রয়েছে আমাদের।" ওড়িশাকে সাহায্যর হাত বাড়িয়ে দেবার জন্য বিশ্ব ব্যাঙ্কের কাছেও আবেদন জানান তিনি।
সংবাদসংস্থা থেকে যখন তাঁর কাছে জানতে চাওয়া হয় যে, কী শিক্ষা নিলেন এত বড়ো দুর্যোগ থেকে? বিজু জনতা দলের প্রধান নবীন পট্টনায়কের জবাব ছিল, " একটা সঠিক প্রস্তুতিপর্বই পারে বহু মানুষের জীবন বাঁচাতে"।
Read the full story in English