কংগ্রেসের অভিযোগ তিনি সেকুলার ভোট ভাগাভাগি করবেন। দক্ষিণপন্থীরা বলছে তিনি হিন্দুবিরোধী। এসবের উত্তরে প্রকাশ রাজ বলছেন ব্যাঙ্গালোর সেন্ট্রাল কেন্দ্রে তিনি লড়ছেন শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মহীনতার ইস্যুতে। একজন নাগরিক যখন চাকরির সমস্যা বা জলের সমস্যার মুখোমুখি হয়, এসব তার কাছে তুচ্ছ হয়ে যায়, বলছেন তিনি। তাঁর বক্তব্য একজন নির্দল প্রার্থীর ক্ষমতা কতদূর হতে পারে তা বোঝার সময় এসেছে।
এ বছরের গোড়াতেই প্রকাশ রাজ বলেছিলেন, তিনি নির্বাচনী রাজনীতিতে প্রবেশ করবেন। এখন তিনি বলছেন তাঁর প্রচার রোড শো বা বিশাল সভা নয়, রাস্তার কোণের সভা এবং কথোপকথনের উপরেই ভরসা করতে চান তিনি। "আমি অত্যন্ত সুনিশ্চিত যে এ দেশ দ্বিদলীয় রাজনীতির বিকল্পের জন্য প্রস্তুত। আমি গত ৬ মাস ধরে মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি।"
আরও পড়ুন, নির্বাচনী ইস্তেহার ও মানবাধিকার
আর একদিন বাকি প্রচারের। প্রকাশ রাজ বললেন তাঁর প্রচার সবে শুরু হয়েছে, এখনও ১৫ বছর রয়েছে তাঁর কাছে। তিনি বলেন, আমি কথা চালিয়ে যাব। আমি জানতে চাই, আমরা জানতে চাই কতজন মানুষ বিকল্প রাজনীতির জন্য প্রস্তুত।
আগে আপনি বলেছিলেন ভোটে লড়বেন না, কিন্তু এখন নির্বাচনী রাজনীতিতে ঢুকে পড়েছেন। কী এমন বদল ঘটে গেল?
প্রকাশ রাজ: আমি সবসময়েই ভাবতাম আমি যে কোনও ব্যবস্থাতেই বাইরের বিরোধী পক্ষ, এবং একজন শিল্পীর তেমনটাই হওয়া উচিত। কিন্তু আমরা মূল কারণ উপলব্ধি করলাম, সে কারণেই ঠিক করলাম যে আমি নির্বাচনী রাজনীতিতে ঢুকে পড়ব। সমস্ত দুর্নীতি এবং অপশাসনের মূলে রয়েছে নির্বাচনী পদ্ধতি। আমাদের মত লোকজন, সমাজের কারণেই এই জায়গায় পৌঁছেছে, প্রতিভার কারণে নয়। এমনটা ঘটেছে ভাষা বা ধর্ম নিরপেক্ষ ভাবেই। আমার মনে হয়েছে, আমাদের কমফর্ট জোন থেকে বেরিয়ে আসা উচিত দেশের স্বার্থে। আমাদের গণতন্ত্র, আমাদের কণ্ঠস্বর পুনরুদ্ধার করা উচিত।
এই দেশে নির্বাচন মানে ব্র্যান্ডিং, ইভেন্ট, মার্কেটিং এবং এখনই সেই সময়... যদি আমরা এখনই পদক্ষেপ না করি তাহলে তার দায় আমাদের। আমার পক্ষে কমফর্ট জোন ছেড়ে বেরিয়ে আসাটা জরুরি। আমি নিজে গরিব পরিবার থেকে এলেও আমাকে সারাজীবন আর টাকার কথা ভাবতে হবে না।আমার হারানোরও কিছু নেই, জয় করারও কিছু নেই।
জীবনে প্রাসঙ্গিকতা থাকা উচিত, এবং আমি নির্বাচন প্রক্রিয়াকে প্রাসঙ্গিক বলে মনে করেছি।
বিজেপি এবং কংগ্রেসের ইস্তেহার নিয়ে আপনার কী বক্তব্য?
প্রকাশ রাজ: এগুলো কীরকম চ্যারিটি অর্গানাইজেশনের মত। আমরা চ্যারিটি চাই না। একজন ৭২ হাজার টাকা দেবে, একজন ৬০০০ টাকা দেবে। আমাদের টাকা আমাদের ফেরত দিয়ে ন্যায় করবে... ১৫ লাখ টাকার কী হল! এগুলো ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতি। এসব পরিকল্পনাহীন, উদ্দেশ্যহীন।
আরও পড়ুন, ভোট দিতে যাওয়ার আগে মনে রাখবেন…
নরেন্দ্র মোদী কী বলছেন দেখুন। এরকম একজন প্রধানমন্ত্রীর জন্য আমি লজ্জিত বোধ করি। ওঁর পার্টির লোকেরা বলছে, তোমার আলি থাকলে আমার বজরংবলী আছে... এ কী ধরনের সাম্প্রদায়িক বক্তব্য! সাম্প্রদায়িকতাকে টেনে আনার কী দরকার! হিন্দু সন্ত্রাসবাদ বলে নাকি কিছু নেই! তাহলে গডসে কে!! দেশের জন্য এসব বেশি জরুরি না কি চাকরি সংকট বেশি গুরুত্বপূর্ণ! দেশ যে সব সমস্যার মুখে দাঁড়িয়ে সেগুলো নিয়ে কি আপনি কথা বলবেন! ভোটার ও প্রার্থীর মধ্যে কথোপকথনই রাজনীতি।
এবারের নির্বাচনে একটা কথা খুব শোনা যাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীর জন্য ভোট বনাম প্রার্থীর জন্য ভোট। এ নিয়ে আপনার কী মত ?
প্রকাশ রাজ: কী বোকা বোকা ব্যাপার! একজন নাগরিকের দায়িত্ব হল তাঁর এলাকা থেকে একজন সাংসদ নির্বাচন, সে কোন পার্টির তা ভোটারের কাছে গুরুত্বপূর্ণ নয়। ৫০০-র বেশি সাংসদ রয়েছেন, নেতা এবং বিরোধী নেতা নির্বাচন তাঁদের দায়িত্ব। আপনি মোদীকে চান বলে আপনি একজন ক্রিমিন্যালকে ভোট দেবেন! অথবা অকর্মণ্য কাউকে ভোট দেবেন! মোদী বা রাহুল গান্ধী কেউই আপনার কেন্দ্র চালাবেন না।
এ ব্যাপারে সংবিধান অত্যন্ত পরিষ্কার। সংবিধানে কোনও রাজনৈতিক দল নেই। দেশ গণতান্ত্রিক কিন্তু তার সমাধান প্রকৃতিগত ভাবে ফেডারেল। আমাদের বিভিন্ন ভাষা রয়েছে, ভিন্ন ভিন্ন সংস্কৃতি রয়েছে, রয়েছে বিভিন্ন ভূগোলও।
এই ভাগাভাগির সময়ে দাঁড়িয়ে কতজন মানুষ আপনার এসব কথা শুনবেন বলে মনে হয়?
প্রকাশ রাজ: আমি শুরু করেছিলাম একা। আমি একা নই। আপনারা বাস্তব পরিস্থিতি দেখছেন। ভাগাভাগি হয়ে গেছে বলে অন্য স্বর তোলা হবে না! আমি নিশ্চিত যে এই দুই রাজনৈতিক দলের বাইরে দাঁড়িয়ে দেশ বিকল্পের জন্য প্রস্তুত। আমি গত ৬ মাস ধরে মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি।
কংগ্রেস বলছে আপনার অবস্থানের কারণে সেকুলার ভোট ভাগাভাগি হয়ে যাবে। এ ব্যাপারে আপনার অবস্থান কী?
প্রকাশ রাজ: সেকুলার ভোট কথাটা ওরা ব্যবহার করছে। প্রথমত কংগ্রেস এ কথা বলতে পারে যদি তারা আসনটা জেতে। ওরা নিজেদের সেকুলার বলছে, সত্যি কি ওরা সেকুলার! ওরা বিজেপির ক্রিমিন্যাল পলিটিক্সটাই চালিয়ে যাচ্ছে। কার অনুমতি নিয়ে ওরা মুসলিম পার্টি বা ক্রিশ্চান পার্টি হয়ে উঠছে! ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা বুঝতে পেরে গেছেন যে তাঁদের ভোটব্যাঙ্ক হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
আমার ধারণা কংগ্রেস এবার সেকুলার ভোটের দাবি হারাতে চলেছে।
আপনি জিতলে সংসদে আপনার পলিসি কী হবে?
প্রকাশ রাজ: এখনকার পরিস্থিতিতে লাখ লাখ ভোট পাওয়া একজন সাংসদ দলের একটি ভোট হয়ে ওঠেন। একজন সাংসদ নিজের বিবেক অনুযায়ী কাজ করতে পারেন না, তাঁর দল যদি ভুল করে বা জনবিরোধী নীতি গ্রহণ করে তাহলেও না। আমাদের নির্দল সাংসদ প্রয়োজন, যারা দল নিরপেক্ষ। একজন নির্দল প্রার্থীর ক্ষমতা সংবিধানে দেওয়া রয়েছে। এখানে তেমনভাবে কাজ হয় না বলে আমরা সে সব জানি না।
আরও পড়ুন, আগামী সরকার হোক অনিশ্চিত সরকার
আপনি বিজেপি বিরোধী অবস্থান নিয়েছেন কিন্তু জোটের সঙ্গেও থাকবেন না বলে জানিয়েছেন।
প্রকাশ রাজ: একদম। আমাদের ইস্যুভিত্তিক সমর্থন দিতে হবে। শর্তসাপেক্ষে। আমাকে একজন জিজ্ঞাসা করেছিলেন নির্দল হিসেবে আপনি কী করবেন। আমি জিজ্ঞাসা করছি, সংখ্যাগুরুরা কী করেছে।
আপনি ক্ষমতার অলিন্দে যাওয়ার জন্য একজন সাংসদকে নির্বাচিত করছেন না। আপনারা দায়িত্বের অলিন্দে যাওয়ার জন্য তাঁকে নির্বাচিত করছেন। সবাই ক্ষমতার কথা বলে। ক্ষমতা আবার কী! সবটাই দায়িত্ব।
কামাল হাসান, রজনীকান্ত এবং আপনি, এঁরা সকলেই তামিলনাড়ুর ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি থেকে এসেছেন। ফিল্ম স্টারদের রাজনীতিতে আসা কি জরুরি?
প্রকাশ রাজ: উকিলদের রাজনীতিতে আসা জরুরি? ডাক্তারদের ভোটে লড়া জরুরি? আমরা সবাই এ দেশের নাগরিক। সকলের নিজস্ব ইস্তেহার রয়েছে, সবাইকে তাঁদের নিজেদের কথা মানুষকে বলতে দেওয়া হোক, মানুষ সিদ্ধান্ত নেবে। গণতন্ত্রে কোনও দল বা প্রার্থী জেতে বা হারে না। মানুষ যদি ভুল প্রার্থী নির্বাচন করে তাহলে হারে, ঠিক প্রার্থী নির্বাচন করলে জিতে যায়।
আপনি ফিল্ম স্টার থেকে রাজনীতিবিদ হয়ে উঠলেন কীভাবে?
প্রকাশ রাজ: আপনি আমাকে ফিল্ম স্টার হিসেবে দেখছেন কেন! অভিনেতা হিসেবে পরিচিতি মানে নিজের রোল এবং পার্ট মনে রাখা। কিন্তু দেশ আমাকে চেনে আমার অবস্থানের জন্য, আমি যে গ্রাম দত্তক নিয়েছি তার জন্য, আমার সামাজিক কাজের জন্য, নিজের কমফর্ট জোন ছেড়ে বেরিয়ে আসার জন্য। আমি তো অভিনয় বা মিউজিকের কথা বলছি না। আমি বলছি জল সংকট কীভাবে মেটানো যায়। এটা অভিনয় নয়। এটা ভাবনার পদ্ধতি।
আপনি ব্র্যান্ড রাজনীতির কথা বলছিলেন, এখন আপনাকে হিন্দু বিরোধী ব্র্যান্ড দেওয়া হয়েছে, এর বিরুদ্ধে লড়বেন কীভাবে?
প্রকাশ রাজ: আমি এর বিরুদ্ধে লড়বই না। আমরা এর বিরুদ্ধে লড়ব। মানুষের সঙ্গে কথা বলে। ততক্ষণ পর্যন্ত যতক্ষণ না আমাদের প্রজাতন্ত্র আমরা ফিরে পাই, অংশগ্রহণকারী গণতন্ত্র ফিরে পাই। গণতন্ত্র এবং প্রজাতন্ত্রের ধারণা আজ বিপন্ন।
অমিত সাহ বলেছেন বিজেপি ক্ষমতায় এলে হিন্দু, বৌদ্ধ এবং শিখ ছাড়া সব অনুপ্রবেশকারীদের দেশের বাইরে ছুড়ে ফেলা হবে।
প্রকাশ রাজ: অমিত শাহ কে! লোকে তাঁকে কী ভাবে চেনে। গুন্ডা হিসেবে চেনে। আমি ওকে হেরো হিসেবেও ভাবি না। ও নিজে যা, তা-ই বলে। আমি ওকে উপেক্ষা করতে চাই।
প্রচারের আর একদিন বাকি। কী করবেন?
প্রকাশ রাজ: আমার একদিন বাকি নেই। আমার ১৫ বছর বাকি আছে। এটাই আমার জীবন, আমি সদ্য চলা শুরু করেছি। এই ভোটের জন্য আমার আর একদিন বাকি। আমি কথোপকথন চালিয়ে যাব। আমি, আমরা জানতে চাই কতজন বিকল্প রাজনীতির জন্য কত মানুষ তৈরি। সেই সংখ্যার উপর ভিত্তি করেই আমরা আমাদের পরবর্তী পদক্ষেপ স্থির করব।
Read the Full Story in English