আসামে জাতীয় নাগরিকপঞ্জীর তালিকা নিয়ে দেশজুড়ে চলছে তুমুল চর্চা। এনআরসি-র তালিকা থেকে ৪০ লক্ষ মানুষের নাম না থাকা নিয়ে সরব হয়েছেন দেশের অনেক রাজনীতিকই। সরকারের এহেন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে সরবও হয়েছেন অনেকে। এমন প্রেক্ষাপটেই মুখ খুললেন এনআরসি-র রাজ্য কো-অর্ডিনেটর প্রতীক হাজেলা। এখানে রইল সাক্ষাৎকারের কিছু অংশ...
এনআরসি-র তালিকায় যে ৪০ লক্ষ মানুষের নাম নেই, কী বলবেন?
এটা আইনি প্রক্রিয়া, সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতেই করা হয়েছে। ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়ায় ওই সংখ্যক মানুষের বৈধতা যাচাই করা যায়নি। তাই এনআরসি-র তালিকায় ওদের নাম ওঠেনি। তবে এনআরসি-তে নাম তোলার জন্য ওঁরা ফের আবেদন করতে পারবেন।
এই ৪০ লক্ষ মানুষ কি অনুপ্রবেশকারী?
না, ওদের অনুপ্রবেশকারী বলা যায় না। ওঁরা ওঁদের পরিচয়পত্র প্রমাণের আরও একটা সুযোগ পাবেন। তারপরই এনআরসি-র চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করব আমরা।
এনআরসি তালিকায় ২.৮৯ কোটি মানুষের নাম রয়েছে, এঁরা কি বৈধ?
ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়ায় এঁরা এঁদের পরিচয়পত্র দেখাতে পেরেছেন। তবে এনআরসিতে নাম তোলা নিয়ে অনেকেই প্রশ্ন করতে পারেন, এটা ঠিক না ভুল। সুতরাং এখনই এ নিয়ে চূড়ান্তভাবে কিছু বলা সম্ভব নয়।
এটা তো একটা বিশাল প্রক্রিয়া। এ কাজ করতে গিয়ে কি কোনও ভুল হয়নি?
হ্যাঁ, ভুল তো হতেই পারে। এটা ম্যানুয়ালি করা হয়েছে।
একটা পরিবারের কয়েকজন এনআরসি তালিকায় রয়েছেন, যেখানে একই পরিবারের অন্যরা নেই, কী বলবেন?
৩.২৯ কোটি মানুষ তাঁদের নাগরিকত্ব নিজেরাই তুলে ধরেছেন। এটা পরিবার ভিত্তিক নাগরিকত্ব নয় কিন্তু। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, স্বামী ১৯৭১ সালের আগের বাসিন্দা, যেখানে স্ত্রী হয়তো নন। এর উল্টোটাও আবার হয়েছে। গোপনীয়তার স্বার্থে আমরা এটা সামনে আনিনি। একই পরিবারের কয়েকজন সদস্য নিজেদের পরিচয়পত্র পেশ করতে পেরেছেন, অনেকে তা পারেননি।
আরও পড়ুন, NRC-তে নাম না থাকলেই ভোটার তালিকা থেকে বাদ নয়
তাঁদের জন্য কী উপায়?
প্রকৃত ভারতীয় নাগরিকদের এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হবেই। আগে আমরা ৩.২৯ কোটির মতো একটা বড় সংখ্যার দিকে তাকিয়েছিলাম। এখন আমরা আন্দাজ করতে পারি যে, ওই ৪০ লক্ষ মানুষের দাবি দাখিল করা হবে। সেক্ষেত্রে সংখ্যাটা আগের থেকে অনেকটাই কম। ফলে এই মানুষগুলোর উপর খুবই ভাল করে ফোকাস করতে পারব। কেউ যদি নিজেদের পরিচয়পত্র প্রমাণ করতে না পারেন, তাহলে তাঁর গ্রহণযোগ্যতার কোনও কারণ থাকা উচিত। অনেক ক্ষেত্রে দেখা গেছে এক ব্যক্তির উত্তরসূরী হিসেবে অনেকে তালিকাভুক্ত হওয়ার দাবি করেছেন। সম্পর্ক সত্যি হোক বা না হোক, যাচাই করার সময় দেখা গিয়েছে নথি ভুয়ো। এ সংক্রান্ত নথি যাঁরা ইস্যু করেন, তাঁরা জানিয়েছেন, এসব ধরনের নথি তাঁরা ইস্যু করেননি।
৪০ লক্ষের মধ্যে কত শতাংশ মানুষকে সম্ভাব্য সন্দেহের তালিকায় রাখছেন?
এটা একটা আইনি প্রক্রিয়া, আগেই বলেছি। কোনও আইনি প্রক্রিয়ায় অনুমানের ভিত্তিতে কিছু বলা ঠিক নয়। এটা স্পর্শকাতর বিষয়, যাতে সকলে এই প্রক্রিয়ায় সহজে অংশ নিতে পারেন, সে ব্যাপারে আমাদের নিশ্চিত হতে হবে। ভুলভাল কোনও প্রচার করে ভুল পথে সাধারণ মানুষকে চালনা করা ঠিক নয়। সেকারণেই আমরা জনগণের সঙ্গে সংযোগ রেখে চলছি। আমরা যখন এটা শুরু করি, সেই ২০১৫ সাল থেকেই প্রচার চালিয়ে সাধারণ মানুষকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি, যাতে সকলে এই প্রক্রিয়ায় অংশ নেন। আসামের নাগরিকত্ব দেশের অন্য রাজ্যগুলোর থেকে আলাদা। জনসাধারণকেই ফর্ম ফিল-আপ করতে হবে। সেকারণেই আমরা জনগণকে এ ব্যাপারে সজাগ করার কাজ করেছি আগেই। আমরা একটা কাল্পনিক পরিবার বানিয়েছিলাম, যে পরিবারে ৫-৬ জন সদস্য ছিলেন। কীভাবে পরিবারের সদস্যরা আবেদন করবেন? আবেদনপত্রে কী লিখতে হবে? তা বোঝাতেই এমনটা করেছিলাম। এ নিয়ে আমরা রীতিমতো প্রচার চালিয়েছিলাম।
আপনি ২০১৩ সাল থেকে এই পদে আছেন। কখনও রাজনৈতিক ভাবে আপনার ওপর চাপ দেওয়া হয়েছে?
সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে কাজ করছি। কোনওরকম হস্তক্ষেপ হলে রিপোর্ট করার কথা বলেছে শীর্ষ আদালত। আমি সাংবিধানিক কাজ করছি।
এমন কোনও পরিস্থিতি হয়েছে, যেখানে রাজনৈতিক চাপের কথা আপনাকে সুপ্রিম কোর্টে জানাতে হয়েছে?
একটা নির্দিষ্ট পদ্ধতিতে সুপ্রিম কোর্টের সঙ্গে কথা হয়। আদালত চাইলেই তবে তা প্রকাশ্যে আনা হয়। সুতরাং এ নিয়ে কিছু বলতে পারব না।
কোনও রাজনৈতিক নেতার ফোন পেয়েছিলেন কখনও?
এ ব্যাপারে কোনও মন্তব্য করব না।
এরপর এ ব্যাপারে কী করা হবে?
গত তিন বছরে আমরা ভেরিফিকেশন প্রক্রিয়ার মধ্যে গিয়েছি। আবারও আমরা জনগণকে এটা নিয়ে বোঝাব। স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিউরস (এসওপি) তৈরি করছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক। গতকালই এ মামলাটি পৌঁছেছে সুপ্রিম কোর্টে। মামলাটি পেশও করা হবে। আদালত যা নির্দেশ দেবে, সেইমতো আমরা কাজ করব।
সাধারণ মানুষের উদ্বেগ নিয়ে কী বলবেন?
আমার রাজ্যে আসুন, দেখলে বুঝবেন, এখানকার মানুষ অতটাও উদ্বিগ্ন নন, যতটা রাজ্যের বাইরের সকলে উদ্বেগে রয়েছেন। কয়েকজনের হয়তো এই প্রক্রিয়া নিয়ে আশঙ্কা রয়েছে। তবে একটা বড় সংখ্যক মানুষের আস্থা রয়েছে এই প্রক্রিয়ায়। ওঁরা নিজে থেকেই এ প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়েছেন। ৫২,০০০ সরকারি আধিকারিক কাজ করছেন। তাঁরাও তো জনগণেরই অংশ। তাঁরা তো বাইরে থেকে আসেননি।