Advertisment

'কামান দেগে মশা মারা যায় না', প্রয়োজন সঠিক পদক্ষেপের

"সমীক্ষা বলছে, ডেঙ্গি শুরু হয় যখন বর্ষা চলে যাওয়ার সময় হয়, তাই সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে মরশুম শুরু হওয়ার আগেই। ডেঙ্গি শুরু হলেই সরকার নড়েচড়ে বসে, তার আগে কোনোরকম পদক্ষেপ নেয় না।"

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

ডেঙ্গি লেখার বিষয়ে সরকারের আপত্তি আছে। এবছর আমরা চাপাচাপি করলে কোন গুলোকে ডেঙ্গি বলা যাবে, কোন গুলোকে বলা যাবে না তার একটা গাইড লাইন বার করে সরকারডেঙ্গি লেখার বিষয়ে সরকারের আপত্তি আছে। এবছর আমরা চাপাচাপি করলে কোন গুলোকে ডেঙ্গি বলা যাবে, কোন গুলোকে বলা যাবে না তার একটা গাইড লাইন বার করে সরকার

খাস কলকাতা থেকে শহরতলি; এবছর ডেঙ্গির হানা অব্যাহত। বেড়ে চলেছে মৃতের তালিকা। গতকালে একই দিনে ডেঙ্গিতে মৃত্যু হয়েছে দুজনের। বেসরকারি সূত্রে খবর, এবছর রাজ্যে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত এই মূহুর্তে ৪,৫০০ জনের কাছাকাছি। এঁদের মধ্যে মৃত্যু হয়েছে ৩১ জনের। পাশাপাশি সরকারি হাসপাতাল সূত্রে খবর, ডেঙ্গি সন্দেহে ভর্তি হয়েছেন প্রায় ৩,০০০ জন, মৃত্যু হয়েছে পাঁচজনের।

Advertisment

কিন্তু কেন ফের ডেঙ্গি? কি পদক্ষেপ তাহলে নিচ্ছে পশ্চিমবঙ্গের স্বাস্থ্যদপ্তর? এবছর ডেঙ্গিতে আক্রান্তের সংখ্যা কম বলে দাবি করেছে সরকার। পুরসভা যতই বিষয়টিকে এড়িয়ে যাক না কেন, হাসপাতাল নার্সিংহোমে ঢুঁ মারলে ডেঙ্গি আক্রান্ত রোগী চোখে পড়বেই। এই মূহুর্তে কয়েকজন ডেঙ্গি সন্দেহে ও অজানা জ্বরে ভর্তি হয়েছেন নীলরতন সরকার হাসপাতালে। হাসপাতাল সূত্রে খবর, জ্বরের কারণ এখনও জানা যায়নি। তবে এদের মধ্যে একজন ডেঙ্গি আক্রান্ত হতে পারেন বলে সন্দেহ করছেন চিকিৎসকরা।

আরও পড়ুন:‘তিতলি’র প্রভাবে এ রাজ্যে বৃষ্টি, পর্যটকশূন্য দিঘা

ডাক্তার রেজাউল করিম বলেন, "ডেঙ্গি লেখার বিষয়ে সরকারের আপত্তি আছে। এবছর আমরা ডাক্তাররা চাপাচাপি করলে কোন জ্বরকে ডেঙ্গি বলা যাবে, কোনগুলোকে বলা যাবে না, তার একটা গাইডলাইন প্রকাশ করে সরকার। সমীক্ষা বলছে, ডেঙ্গি শুরু হয় যখন বর্ষা চলে যাওয়ার সময় হয়, তাই সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে মরশুম শুরু হওয়ার আগেই। ডেঙ্গি শুরু হলেই সরকার নড়েচড়ে বসে, তার আগে কোনোরকম পদক্ষেপ নেয় না।" ডঃ করিম প্রশ্ন তুলেছেন, "কেউ অসুস্থ হয়ে পড়ার পর তো ডাক্তারদের কাজ, সরকারের ভুমিকা এখানে কোথায়?"

তিনি আরও বলেন, "কামান দেগে যেমন মশা মারা যায় না, তেমনি ব্লিচিং পাউডার ছড়িয়েও কাজ হয় না। মানুষকে গণ উদ্যোগে সামিল করতে হবে।" তাঁর বক্তব্য, "রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীর তো অনেক অনুরাগী; তিনি যদি ডেঙ্গি মরশুমের আগে রাস্তায় নেমে এলাকা পরিষ্কার করার উদ্যোগ নেন, তাহলে সমর্থকরাও দেখাদেখি এই কাজ করতে উদ্যোগী হবেন। মাঝেমাঝে হঠাৎ করে একদিন হুজুগ তুললে তা কার্যকর হয় না। এমন এক উদ্যোগ নিতে হবে যাতে আমজনতাও যুক্ত হতে পারে। সরকার যতটা ছবি তুলে সোশাল সাইটে পোস্ট করা নিয়ে ব্যস্ত, ততটা জোর দিয়ে কাজ করে না।"

ডেঙ্গি হলেই যে মানুষ মারা যাবেন এমনটা নয়। বেশিরভাগ ডেঙ্গিই ভয়াবহ আকার নেয় না। এক্ষেত্রে উদাহরণস্বরূপ বলা যেতে পারে, সর্দিজ্বরের সঙ্গে ডেঙ্গির কোনো ফারাক নেই। তবে শতকরা দশভাগ ডেঙ্গি আক্রান্তের ক্ষেত্রে রোগ খারাপ দিকে যেতে পারে। তাই প্রথম উদ্দেশ্য হচ্ছে খারাপ প্রজাতির ডেঙ্গি চিহ্নিত করা। রক্ত পরীক্ষা করার পর এনএস-১ একশোর মধ্যে যদি সত্তর জনের ভেতরেও পাওয়া যায়, তাদের মধ্যে কতজনের হেমারেজিক শক ডেঙ্গি হতে পারে, সেইটা আগে পরীক্ষা করে দেখা দরকার। আইজিএম সহ বিভিন্ন প্রোটোকলের মধ্যে দিয়ে গিয়ে প্রথমে জানা দরকার কোন জ্বর মারাত্মক অবস্থা ধারণ করতে পারে। তারপর সেভাবে প্রয়েজনীয় ট্রিটমেন্ট শুরু করা দরকার। সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে, আরও প্রচার বাড়াতে হবে, বলছেন ডাক্তাররা।

আরও পড়ুন:আপনার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য কী, বলবে আপনার হাতের লেখাই

গত পরশু ধুম জ্বরে আক্রান্ত হয়ে আরশিয়ানা পারভিনকে ভর্তি করা হয় কামারহাটির সাগরদত্ত হাসপাতালে। সেখান থেকে তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় নীলরতন হাসপাতালে। বুধবার দুপুরে মৃত্যু হয় ওই বছর ১৩-র মেয়েটির। ডেথ সার্টিফিকেটে উল্লেখ করা হয়েছে ডেঙ্গির হেমারেজিক শকে মৃত্যু হয়েছে তার।

তবে শুধু কামারহাটির আরশিয়ানাই নয়, কামারহাটি এলাকার ২৯ নং ওয়ার্ডে অনেকেই ডেঙ্গিতে বারংবার আক্রান্ত হয়েছেন। বাসিন্দাদের দাবি, পুরসভার কোনো হেলদোল নেই সেভাবে। কিন্তু পুরপ্রধান গোপাল সাহা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলাকে বলেন, "আমরা যথাযথ পদক্ষেপ নিয়েছি ডেঙ্গি প্রতিরোধের জন্য। এলাকাকে পরিষ্কার রাখার জন্য যা যা ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন সবটাই করা হয়েছে কামারহাটি পুরসভার তরফ থেকে। কারোর মৃত্যু সত্যি দুঃখজনক। কিন্তু এই এলাকা ডেঙ্গি আক্রান্ত হয়েছে মানে এখানেই তার আঁতুড়ঘর, এমনটা ভেবে নেওয়ার কোনো কারণ নেই। বাইরে থেকেও ডেঙ্গি মশায় আক্রান্ত হতে পারেন কেউ।"

শুধু কামারহাটিও তো নয়, ডেঙ্গির আক্রমণ থেকে সুরক্ষিত নেই রাজ্যের বহু এলাকা। কলকাতা তাদের মধ্যে একটি। সচেতনতা বৃদ্ধি করা ছাড়া আর কোনও পন্থা আছে কি? চিকিৎসা করে কি রোগ নির্মূল করা যায়?

Dengue
Advertisment