হামাস ও ইজরায়েলের মধ্যে চলমান যুদ্ধের এক মাস অতিক্রান্ত। গত ৭ অক্টোবর হামাস অতর্কিতে দক্ষিণ ইজরায়েলে হামলা চালায়, এরপর থেকে দুই পক্ষের মধ্যে চলছে তুমুল যুদ্ধ। যুদ্ধে এখন পর্যন্ত সাড়ে ১১ হাজারের বেশি মানুষ নিহত ও হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। গাজার পরিস্থিতি নিয়ে ক্রমাগত উদ্বেগ প্রকাশ করছে রাষ্ট্রসংঘ।
রাষ্ট্র সংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন যে ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় জ্বালানি প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়নি, প্রয়োজনীয় পরিষেবা বন্ধের কারণে ২.৩ মিলিয়ন (২৩ লাখ) প্যালেস্তাইনিদের জীবন ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। পাশাপাশি তিনি বলেন, গাজা শিশুদের কবর স্থানে পরিণত হয়েছে।
আরও পড়ুন: < বাতাসে বিষ! মানসিক চাপ, মুড সুইংয়ের কারণও দূষণ? চমকে যাওয়ার মত তথ্য প্রকাশ্যে >
বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু যুদ্ধে বিরতির ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন
হামাসে হাতে বন্দিদের মুক্তির বিনিময়ে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাবে কার্যত সায় দিয়েছেন নেতানিয়াহু। তবে তিনি বলেছেন, সাধারণ যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছেন। বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু আরও বলেছেন, যুদ্ধের পর অনির্দিষ্টকালের জন্য গাজার নিরাপত্তার দায়িত্ব ইজরায়েলের হাতে থাকবে। গাজায় অপহৃতদের সাহায্যের জন্য কৌশলগত বিরতি দেওয়া নিয়ে আলোচনা করতে সম্মত বলে জানিয়েছেন ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু। ইতিমধ্যে বিষয়টি নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সঙ্গে আলোচনাও শুরু করেছেন তিনি।
গাজার জনসংখ্যার ৭০ শতাংশ বাস্তুচ্যুত হয়েছে
সংবাদ সংস্থা এপি জানিয়েছে মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) গাজার এলাকায় আরেকটি হামলা শুরু করে ইজরায়েল। পুরো শহর ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। গাজার আনুমানিক ২৩ লাখ মানুষের মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশ তাদের বাড়ি ছেড়ে চলে গেছে। অনেকে ইজরায়েলের নির্দেশ মেনে উত্তর অংশ ছেড়ে দক্ষিণে আশ্রয় নিয়েছে। কিন্তু সেখানেও হামলা অব্যাহত রেখেছে ইজরায়েল।
আরও পড়ুন: < মাত্র ৫ বছরেই ৫০০ কোটির আউটসোর্সিং! লক্ষ্মীলাভের তালিকায় শীর্ষে কোন সংস্থা? >
এক মাসের যুদ্ধে কত মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন?
আল জাজিরার প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৭ অক্টোবর থেকে ইজরায়েলি হামলায় গাজায় কমপক্ষে ১০,৩২৮ প্যালেস্তাইনি নাগরিক নিহত হয়েছেন। একই সময়ে হামাসের হামলায় ১৪০০-এর বেশি ইজরায়েলি নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে। হামাস পরিচালিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রক জানিয়েছে, গাজায় নিহতদের মধ্যে ৪,১০০ জনেরও বেশি নাবালক ।
গাজার দক্ষিণাঞ্চলের তিনটি শহরে রাতারাতি বোমাবর্ষণ!
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গাজা উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী হামলা অব্যাহত রেখেছে। আইডিএফ বলেছে যে তারা সাম্প্রতিক লড়াইয়ে উত্তর গাজায় হামাসের একটি শক্ত ঘাঁটির নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে। আইডিএফ বলেছে যে তারা কয়েক ডজন মর্টার শেল লঞ্চার এবং সমুদ্র থেকে রাতারাতি হামাসের ঘাঁটি লক্ষ্য করে আক্রমণ করেছে।
গাজার ৩৫টি হাসপাতালের মধ্যে ১৫টি বন্ধ- দাবি WHO-এর
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তরফে দাবি করা হয়েছে গাজার ৩৫টির মধ্যে প্রায় ১৫টি হাসপাতাল বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সরাসরি হামলা বা জ্বালানির অভাবে এই সব হাসপাতাল বন্ধ হয়ে গেছে। বাকি হাসপাতালগুলো আংশিকভাবে তাদের পরিষেয়া চালু রেখেছে।
আইডিএফ টুইটারে একটি পোস্টে বলেছে, "৭ অক্টোবর গণহত্যার পর এক মাস হয়ে গেছে।" যদিও পৃথিবী হয়তো এগিয়েছে, কিন্তু আমাদের সেই সুযোগ নেই। হামাস এই যুদ্ধ শুরু করেছে, আমাদের লড়াই করতে হবে, এই যুদ্ধটি আমাদের জিততে হবে”। আইডিএফ বলেছে যে এটি মঙ্গলবার (৭ নভেম্বর) উত্তর গাজা থেকে সাধারণ মানুষদের জন্য একটি সেফ করিডোর খুলেছে।
গাজা শিশুদের কবরস্থানে পরিণত হচ্ছে
রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এক বড় বিবৃতিতে বলেছেন, ইজরায়েল ও হামাসের যুদ্ধে নিরীহ শিশুরাও মারা যাচ্ছে। রাষ্ট্রসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে একটি বড় বিবৃতি দিয়েছেন।আন্তোনিও গুতেরেস স্পষ্ট অভিমত ব্যক্ত করেছেন যে গাজা শিশুদের কবরস্থানে পরিণত হচ্ছে। সিএনএন এ তথ্য জানিয়েছে। গুতেরেস বলেন, "গাজার যুদ্ধ শুধু একটি মানবিক সংকট নয়, এটি তার চেয়ে অনেক বড়।" এটা মানবতার সংকট। এই যুদ্ধের প্রতি ঘণ্টায় যুদ্ধবিরতির প্রয়োজনীয়তা বাড়ছে এবং অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি করতে হবে।"গত এক মাস ধরে চলা এই যুদ্ধে রাষ্ট্রসংঘের ৮৯ সদস্য’র মৃত্যু হয়েছে বলেও দাবি করেছেন রাষ্ট্রসংঘ প্রধান।