বাংলাদেশ দিবসে দু’দিনের পড়শি দেশ সফরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। তাঁর বাংলাদেশ সফরের দ্বিতীয় তথা শেষদিনে সাতক্ষীরা এবং গোপালগঞ্জে সূচি ছিল তাঁর। সে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে সাতক্ষীরার জেশোরেশ্বরী মন্দির এবং ওরাকান্ডি মন্দিরে পুজো দেন প্রধানমন্ত্রী। জেশোরেশ্বরী কালীমন্দিরে কোভিড প্রতিরোধে প্রার্থনা করেন তিনি। এদিন পুজো দিয়ে বেরিয়ে নরেন্দ্র মোদী বলেন,’ মা কালীর সামনে প্রার্থনা করার সুযোগ পেলাম। মানবজাতিকে কোভিড মুক্ত করতে মায়ের কাছে প্রার্থনা করেছি।‘
এদিন বেলার দিকে শেখ মুজিবর রহমানের সমাধিস্থল পরিদর্শন করবেন প্রধানমন্ত্রী। এদিকে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এমনকী তিনি কারাবরণও করেছিলেন বলে শুক্রবার ‘মুজিব চিরন্তন’ অনুষ্ঠানে দাবি করেছেন নমো। তারপরই প্রধানমন্ত্রীর দাবি ঘিরে বিতর্ক চরমে। মুক্তিযুদ্ধের সময় মোদীর কারাবরণের প্রমাণ চেয়ে আরটিআই হল। আরটিআই দায়ের করেছেন ভুমিসন্তান অধিকার পার্টির সাধারণ সম্পাদক প্রণোজিৎ দে। প্রধানমন্ত্রীর দফতরের কাছে তথ্য-প্রমাণ দেওয়ার আর্জি জানানো হয়েছে।
কী বলেছেন মোদী?
বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ও মুজিবের জন্ম শতবর্ষ উদযাপনে দু’দিনের বাংলাদেশ সফরে গিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। এদিন দুপুরে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহিদদের স্মৃতিতে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেন প্রধানমন্ত্রী। তারপর গিয়েছিলেন বাংলাদেশের প্যারেড গ্রাউন্ডে। সেখানে ‘মুজিব চিরন্তন’ অনুষ্ঠানে বক্তব্য পেশ করেন নমো। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি পাকিস্তানি সেনার অকথ্য অত্যাচারের তীব্র নিন্দা করেন তিনি।
একইসঙ্গে মোদী জানান, তাঁর জীবনে প্রথম আন্দোলনগুলির অন্যতম হল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ। বলেন, ‘আমার বয়স তখন ২০-২২। আমি ও আমার বন্ধুরা ভারতে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সত্যাগ্রহে সামিল হয়েছিলাম। তার জন্য আমার জেলে যাওয়ারও সৌভাগ্য হয়েছিল।’
ভারত-বাংলাদেশ মৈত্রীর কথা বলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। সেই সঙ্গেই সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে একযোগে লড়াইয়ের বার্তা দেন নরেন্দ্র মোদী।
অপরদিকে, মুজিব শতবর্ষে ঢাকায় দাঁড়িয়ে ৫০ বছর আগের পাক বাহিনীর অত্যাচারের কথা তুললেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। স্মরণ করিয়ে দিলেন পাক বাহিনীর বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু মুজিবর রহমানের লড়াইয়ের কথা। এখানেই থামেননি তিনি। উল্টে সেই অত্যাচারের সঙ্গে আজকের পাক সন্ত্রাসবাদের প্রসঙ্গ মিশিয়েছেন তিনি। ঢাকায় দাঁড়িয়ে মোদী বলেছেন, ‘আমরা দুই দেশ গণতন্ত্রের শক্তিতে বলীয়ান। সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় আমাদের আরও সজাগ এবং ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। একসঙ্গে পারস্পরিক সহযোগিতার মাধ্যমে উন্নয়নের পথে এগিয়ে যাব আমরা।’
স্বাধীন প্রজতন্ত্রী বাংলাদেশের মুক্তি যুদ্ধের কথা বলতে গিয়ে বারে বারেই এদিন প্রধানমন্ত্রী স্মৃতির স্মরণীতে ডুব দিয়েছেন। প্রতিবেশীর স্বাধীনতায় নিজের লড়াইয়ের কথা তুলে ধরেন তিনি। মোদী বলেন, ‘পরাধীন বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য আমিও লড়াই করেছিলাম। সত্যাগ্রহ করে জেলে গিয়েছিলাম । সবাই একসঙ্গে সেইসময় মুক্তিবাহিনী গঠন করে লড়াই করেছেন।’
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানকে এদিন ‘গান্ধী শান্তি পুরস্কারে’ ভূষিত করা হয়। এই সম্মান প্রদানকে প্রত্যেক ভারতবাসীর গর্বের বিষয় বলে জানান প্রধানমন্ত্রী।
একইসঙ্গে, মোদী প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গাঁধীর কথাও স্মরণ করেন। বলেন, ‘বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর প্রচেষ্টা সর্বজন বিদিত। সেই সময় অটল বিহারী বাজপেয়ী বলেছিলেন, আমরা ইতিহাস তৈরি করতে চলেছি।’
প্রধানমন্ত্রী মোদী বলেন, ‘করোনাকালেও ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে বোঝাপড়া খুব ভাল ছিল। ভারতীয় ভ্যাকসিন বাংলাদেশের ভাইবোনেদের দিতে পেরে আমি আনন্দিত।’
করোনা আবহেও বাংলাদেশে মুজিব শতবর্ষ অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ায় এদিন প্রধানমন্ত্রী মোদীর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান সেদেশের প্রধানমন্ত্রী তথা মুজিব কন্যা শেখ হাসিনা।