প্রথম চিত্র, খাম্মামের এক বেসরকারি স্কুলের প্রিন্সিপাল এখন ঠেলা গাড়ি করে ইডলি, ধোসা এবং বড়া বিক্রি করছেন।
দ্বিতীয় চিত্র, রাঁচিতে সামাজিক বিজ্ঞানের এক শিক্ষিকা ধান ক্ষেতে কাজ করছেন।
তৃতীয় চিত্র, নালগোন্ডার এক ইংরেজির শিক্ষক ইন্সুরেন্স পলিসি বেচতে শুরু করেছেন।
ভাইরাস সংক্রমণে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড প্রায় স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। রুটি রুজি হারিয়ে পথে নামতে বাধ্য হয়েছে আমজনতা। সংক্রমণের তোয়াক্কা না করেই। মাঝারি ও ক্ষুদ্র শিল্পে যেমন আঘাত এসেছে। তেমন দেশ দেখেছে সাম্প্রতিক সময়ের সবথেকে বড় পরিযায়ী মিছিল।
সবথেকে বড় ধাক্কা এসেছে বেসরকারি স্কুলের শিক্ষকদের কাছে। টাকা না থাকায় অভিভাবকরা যেমন সময় মত ফিজ দিতে পারছেন না। তেমন স্কুল কর্তৃপক্ষও অর্ত্যের জন্য শিক্ষকদের বেতন দিতে পারেননি। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই এই শিক্ষকরা ছিলেন পরিবারের একমাত্র রোজগারে। তাঁদের অর্থ উপার্জন বন্ধ হয়ে যাওয়ার অর্থ পরিবারই সমস্যার মুখে পরে যাওয়া। পাটনা, রাঁচির মত ছোট শহরে শিক্ষকরা এখন গ্রামে ফিরে খেত মজুরের কাজও করতে পারবেন না। "জুলাই-আগস্টের মধ্যে স্কুল চালু না হলে আরো পরিস্থিতি খারাও হয়ে পড়বে।" বিহারের শেখপুরার ২৮ বছরের এক শিক্ষক বিদ্যাসাগর জানাচ্ছিলেন এমনটাই।
তেলেঙ্গানার বেসরকারি স্কুল শিক্ষকদের এসোসিয়েশনের প্রধান সাব্বির আলি জানালেন, "অভিভাবকদের রোজগারে টান পড়ায় স্কুলের ফিজ জমা করতে পারেনি। তাই স্কুল কর্তৃপক্ষও শিক্ষকদের বেতন দিতে পারেননি।"
পাটনায় একটি বেসরকারি স্কুল চালান সঞ্জয় কুমার। তিনি গভীর হতাশা নিয়ে বললেন, "আমরা অনলাইন ক্লাস চালু করেছি। তবে তাতেও অভিভাবকরা ফিজ দিতে পারছেন না। অনেকের কাছেই স্মার্টফোন নেই, ইন্টারনেটে কানেকশন নেই। আমরা হয়ত একসঙ্গেই ডুবতে চলেছি।"
সানডে এক্সপ্রেসের তরফ থেকে বেশ কিছু শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। যাদের কাছে চ্যালেঞ্জ ভাইরাস সংক্রমণের মোকাবিলা এবং সুস্থ জীবন যাত্রা চালু রাখা।
মারাগানি রামবাবু,
বয়স- ৩৬
প্রিন্সিপাল
বেতন- ২২,০০০ টাকা
বর্তমান আয়- শূন্য
তেলেঙ্গানার খাম্মামে ইংলিশ মাধ্যম মিলেনিয়াম স্কুলের প্রিন্সিপাল ছিলেন। তবে লকডাউন চালু হতেই স্কুল কর্তৃপক্ষ এর তরফে জানিয়ে দেওয়া হয়, আপাতত তাঁকে আর প্রয়োজন নেই। কপর্দকশূন্য অবস্থায় পরিবারের ভরণ পোষণের জন্য ঠেলা গাড়ি করে এখন ইডলি, বড়া, ধোসা বিক্রি করছেন লকডাউন শিথিল হওয়ার পর থেকেই। জানালেন, দিনের শেষে লাভ থাকে প্রায় ২০০ টাকার।
বদেতি রবি,
বয়স- ৩০
নালগন্ডা, শিক্ষক
বেতন- ১৬,০০০ টাকা
বর্তমান আয়- শূন্য
তেলেঙ্গানার নালগন্ডার নাকরেকল এলাকায় ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের শিক্ষক ছিলেন। স্কুল ম্যানেজমেন্ট এর তরফে তাঁকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, পুনরায় ডেকে নেওয়া হবে। এপ্রিল মাস থেকে বেতন মেলেনি। এক বন্ধুর পরামর্শে তিনি আপাতত ইন্সুরেন্স বিক্রি করছেন। বর্তমানে মাসিক আয় মাত্র ৫০০০ টাকা। এই অর্থে তিনি আর টানতে পারছেন না। জানিয়ে দিলেন প্রতিবেদকের কাছে।
লগনলাল মাহাতো,
বয়স- ৪০
সামাজিক বিজ্ঞানের শিক্ষক
বেতন- ৫,০০০ টাকা
বর্তমান আয়- শূন্য
ঝাড়খণ্ডের রাঁচির সরস্বতী শিশু বিদ্যামন্দিরে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিশুদের শিক্ষক ছিলেন। মাসের শেষে ৫০০০ টাকা আয় নির্দিষ্ট ছিল। এপ্রিল মাস থেকে বেতন বন্ধ হয়ে যাওয়ার পরেই সমস্যার সূত্রপাত। স্ত্রী সহ তিন সন্তান রয়েছে। বড় ছেলে কলেজে যায়। উপায়ন্তর না দেখে দেড় বিঘা জমিতে চাষ আরম্ভ করেছেন তিনি। আগে শ্রমিকের প্রয়োজন হলেও, নিজেই কায়িক শ্রম দিয়ে সেই ঘাটতি পূরণ করছেন কারণ শ্রমিকের টাকা কোথায়!
মুটুক লাল,
বয়স- ৬৮
অংকের শিক্ষক
বেতন- ৪৯৩০ টাকা
বর্তমান আয়- শূন্য
রাঁচির প্রস্তাবিত উচ্চ বিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য তিনি। এপ্রিল মাসে শেষবার ৪৯৩০ টাকা বেতন পেয়েছেন। তারপর, আবার কবে পাবেন জানেন না! জানালেন, "আমাদের স্কুলে মাত্র ১৫০-২০০ টাকা মাসিক বেতনে ছাত্ররা পড়ে। এখন ওরা আর অর্থ দিতে পারছে না। এককাপ চা পান করার অর্থও নেই আমার কাছে।" আপাতত পুত্রের উপর নির্ভরশীল তিনি। পুত্রের একটি মোবাইল সারাইয়ের দোকান রয়েছে।