রবিবার সকালে দিল্লির অক্ষরধাম মন্দিরে প্রার্থনা করতে পৌঁছেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনক ও তাঁর স্ত্রী অক্ষতা মূর্তি। একই সঙ্গে তিনি "হিন্দু হিসাবে গর্বিত” বলেও উল্লেখ করেন। ভারতে পা দিয়েই তিনি মন্দির দেখার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন।
জানা গিয়েছে সস্ত্রীক ঋষি সুনাক প্রায় এক ঘণ্টা মন্দিরে কাটিয়েছেন। অক্ষরধাম মন্দিরের পরিচালক, জ্যোতিন্দ্র দেভ বলেছেন, ঋষি সুনক খালি পায়ে মন্দিরের ভিতরে প্রবেশ করেন। তার সঙ্গে দেখা হওয়ার পর আমাদের মনে হয়েছিল যে তাঁর সনাতন ধর্মের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা ও ভক্তি রয়েছে’। তিনি আরও বলেন, "আমরা তাকে মন্দিরের চারপাশ ঘুরে দেখিয়েছি এবং উপহার হিসাবে তাকে মন্দিরের একটি মডেলও দিয়েছি। তিনি এখানে প্রতি মিনিট উপভোগ করেছেন..তার স্ত্রীও মন্দির দেখে মুগ্ধ। তিনি আমাদের জানিয়েছেন, যখনই আমি সুযোগ পাব, আমি মন্দিরে আসব,"
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সফরের আগে, মন্দিরের চারপাশে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়। এর আগে শুক্রবার, সুনাক বলেছিলেন যে তিনি রক্ষা বন্ধন উদযাপন করেছেন, কিন্তু কৃষ্ণ জন্মাষ্টমী উদযাপন করার সুযোগ পাননি, তাই তিনি একটি মন্দিরে গিয়ে "এর জন্য প্রার্থনা জানাতে চান" । পাশাপাশি তিনি বলেন, 'আমি হিন্দু হিসাবে গর্বিত'।
রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শুরু দ্বিতীয় দিনের সম্মেলন শুরু, 'ওয়ান ফিউচার' নিয়ে আলোচনা। তৃতীয় অধিবেশনের আগে, বিশ্ব নেতারা রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন রবিবার সকাল ৮টা থেকে রাজঘাটে বিশ্ব নেতাদের আগমন শুরু হয়। মহাত্মা গান্ধীর সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের পর, ভারত মন্ডপমের উদ্দেশ্যে রওনা হবেন রাষ্ট্রপ্রধানরা।
তৃতীয় অধিবেশন চলবে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত
ভারত মন্ডপমে সকাল ১০.১৫ তে একটি বৃক্ষ রোপণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। এরপর সকাল সাড়ে ১০টায় সামিট হলে অনুষ্ঠিত হবে তৃতীয় অধিবেশন 'ওয়ান ফিউচার'। এই অধিবেশন চলবে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত। এরপর বাকি দেশগুলোর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনার প্রক্রিয়া শুরু হবে।
গতকাল থেকে দু’দিনের জন্য শুরু হয়েছে জি-২০ সম্মেলন। উদ্বোধনী ভাষণে মোদী ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ’মন্ত্রে এগিয়ে চলার বার্তা দেন। করোনা পরিস্থিতিতে বিশ্বব্যপী সংকটের কথা উল্লেখ করে মোদী বলেন, ‘আমরা যদি করোনাকে হারাতে পারি, তাহলে এই সঙ্কটও আমরা কাটিয়ে উঠতে পারব’। একই সঙ্গে মোদী বলেন, ভারত গ্লোবাল সাউথের নেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে।
মোদী বলেন, ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ, সবকা প্রয়াস এর মন্ত্র আমাদের সকলের জন্য পথপ্রদর্শক হয়ে উঠতে পারে। ভারতের G20 প্রেসিডেন্সি দেশের ভিতরে এবং বাইরে ‘সবকা সাথের’ প্রতীক হয়ে উঠেছে। প্রধানমন্ত্রী মোদির বক্তৃতার মধ্য দিয়ে শুরু হয় শীর্ষ সম্মেলন। প্রধানমন্ত্রীর সামনে বসানো নেমপ্লেটে দেশের নাম ইন্ডিয়ার বদলে লেখা ছিল ‘ভারত’। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি টুইটারে লিখেছেন, “আশা ও বিশ্বাসের নতুন নাম – ‘ভারত’।”
পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী শনিবার ভারত-মধ্যপ্রাচ্য-ইউরোপ মেগা অর্থনৈতিক করিডর চালু করার কথা ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেন, ‘আজ আমরা সবাই একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং ঐতিহাসিক অংশীদারিত্বে পৌঁছেছি। আগামী সময়ে এটি ভারত, পশ্চিম এশিয়া এবং ইউরোপের মধ্যে অর্থনৈতিক একীকরণের একটি প্রধান মাধ্যম হবে।’ এই উদ্যোগে ভারত, সংযুক্ত আরব আমিরশাহি, সৌদি আরব, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ফ্রান্স, ইতালি, জার্মানি এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জড়িত। এদিকে, জি২০ গোষ্ঠীর সাম্প্রতিক সমস্যাগুলো মেটানোর ব্যাপারেও একটি ঐকমত্য ঘোষণা করেছে। প্রধানমন্ত্রী মোদী সম্মেলনের সময় শনিবার এমনটাই জানিয়েছেন। তিনি নয়াদিল্লিতে জি২০ নেতাদের বলেন, ‘সমস্ত বিভাগের কঠোর পরিশ্রমের ফলে, আমরা জি২০ নেতাদের শীর্ষ সম্মেলনের ঘোষণাপত্রে ঐকমত্য পেয়েছি। আমি এই ঐকমত্যের কথা ঘোষণা করে দিচ্ছি।’
প্রধানমন্ত্রী মোদী সদস্যদের একটি ‘আন্তর্জাতিক আস্থার ঘাটতি’ সমাপ্ত করার আহ্বান জানিয়ে এই দুই দিনের শীর্ষ সম্মেলনের উদ্বোধন করেছেন। তিনি ঘোষণা করেছেন যে গোষ্ঠীটি আফ্রিকান ইউনিয়নকে আরও প্রতিনিধিত্ব দেওয়ার লক্ষ্যে স্থায়ী সদস্যপদ দিয়েছে। মোদী বলেন, ‘আজ জি২০-র সভাপতি হিসেবে ভারত সমগ্র বিশ্বের কাছে এই বিশ্বব্যাপী আস্থার ঘাটতিকে প্রথমে একটি আস্থা এবং তারপর এক আত্মবিশ্বাসে রূপান্তরিত করার আহ্বান জানিয়েছে। এখন আমাদের সবার একসঙ্গে চলার সময়।’
কোন কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা ?
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, ইন্দো-প্যাসিফিক এবং দক্ষিণ চিন সাগরে চিনের উচ্চাকাঙ্ক্ষা নিয়ে গোষ্ঠীকরণের চেষ্টা যে বিভাজন তৈরি করেছে, তাকে সঙ্গে নিয়ে শনিবার জি২০ শীর্ষ সম্মেলন শুরু হয়েছে। ২০২২ সালে ইন্দোনেশিয়ায় শীর্ষ সম্মেলনের সময়, জি২০ গোষ্ঠী ইউক্রেনের যুদ্ধ নিয়ে গভীরভাবে বিভক্ত ছিল। কারণ, তখন ঘোষণায় উল্লেখ করা হয়েছিল যে বেশিরভাগ দেশ রাশিয়ার আক্রমণের জন্য নিন্দা করলেও ভিন্ন ভিন্ন মতামতও ছিল।
ইউক্রেন বলেছে যে যুদ্ধের ব্যাপারে জি২০-র যৌথ ঘোষণায়, ‘গর্ব করার মত কিছু নেই’। নয়াদিল্লিতে শনিবার জি২০ দেশগুলোর দ্বারা রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের যৌথ ঘোষণার পরে, ইউক্রেনের বিদেশ দফতর বলেছে যে এতে, ‘গর্ব করার মত কিছু হয়নি।’ ইউক্রেনের বিদেশ দফতর ঘোষণায় রাশিয়ার উল্লেখ না-করার জন্য ঘোষণাপত্রের সমালোচনা করেছে। এই ব্যাপারে ইউক্রেনের বিদেশ দফতরের মুখপাত্র ওলেগ নিকোলেনকো ফেসবুকে লিখেছেন, ‘এটা স্পষ্ট যে ইউক্রেনের পক্ষের অংশগ্রহণ (জি-২০ বৈঠকে) অংশগ্রহণকারীদের পরিস্থিতি আরও ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করতে পারত।’
জি২০ নেতাদের দ্বারা গৃহীত ঐকমত্যের ঘোষণায় ‘ইউক্রেনে ব্যাপক, ন্যায্য এবং স্থায়ী শান্তি’র আহ্বান জানানো হয়েছে। পাশাপাশি, সদস্য দেশগুলোকে ‘অঞ্চল দখলের জন্য শক্তি প্রয়োগের হুমকি দেওয়া থেকে বিরত থাকতে’ বা কোনও রাষ্ট্রের আঞ্চলিক অখণ্ডতার বিরুদ্ধে কাজ না-করতে আহ্বান জানানো হয়েছে। ঘোষণায় আরও জোরের সঙ্গে বলা হয়েছে যে, পরমাণু অস্ত্রের ব্যবহার বা ব্যবহারের হুমকি ‘গ্রহণযোগ্য’ নয়।
গতকাল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক, ইতালির প্রধানমন্ত্রী জর্জিয়া মেলোনি এবং জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার সঙ্গেও দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেছেন।পাশাপাশি ভারত, আমেরিকা, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, সৌদি আরব, সংযুক্ত আরব আমিরশাহী এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে 'ইন্ডিয়া মিডল-ইস্ট ইউরোপ ইকোনমিক করিডোর'-এর জন্য এমওইউ স্বাক্ষরিত হয়েছে।