যুদ্ধের চারদিন পর, দীর্ঘ টালবাহানা শেষে আলোচনার টেবিলে ইউক্রেন ও রাশিয়া। বেলারুশ সীমান্তে দুই দেশের প্রতিনিধিরা আলোচনায় বসেছেন বলে সংবাদসংস্থা রয়টার্সকে জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভোলোদিমির জেলেনস্কির উপদেষ্টা মিখাইলো পোডোলিয়াক। এর আগে আলোচনায় বসার শর্ত হিসাবে প্রেসিডেন্টের দফতর সাফ জানায়, ইউক্রেন ভূখণ্ড থেকে সেনা প্রত্যাহার এবং সংঘর্ষবিরতি করলে তবেই রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনায় বসা হবে।
এদিকে, রাষ্ট্রসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক প্রধান ব্যাচেলেট বলেছেন, অন্তত ১০২ জন নিরীহ নাগরিক যুদ্ধের বলি হয়েছেন। তার মধ্যে সাতটি শিশু রয়েছে। চারদিন আগে রাশিয়া ইউক্রেনে হামলা চালানোর পর এই হত্যালীলা করেছে রুশ সেনা। পাশাপাশি, ৩০৪ জন গুরুতর জখম হয়েছেন। তাঁর দাবি, প্রকৃত পরিসংখ্যান হয়তো এর চেয়ে অনেক বেশি হবে।
এদিকে যুদ্ধের ভয়াবহতার মাঝে ভারতীয় পড়ুয়াদের ইউক্রেন থেকে উদ্ধারে তৎপর নিউদিল্লি। আতঙ্ক আর উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়ে ইউক্রেন থেকে ২১৯ জনের প্রথম ভারতীয় দল মুম্বাই বিমানবন্দরে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানে ফিরল শনিবার। ফলে, অভিভাবকার স্বস্তি পেলেন। এদিন রোমানিয়ার বুখারেস্ট থেকে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান ২১৯ ডাক্তারি পড়ুয়াকে মুম্বাইয় বিমানবন্দরে ফিরিয়ে আনলে তাঁদের স্বাগত জানান কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীষূষ গোয়েল। বুখারেস্ট থেকে দিল্লির পথে এয়ার ইন্ডিয়ার দ্বিতীয় বিমানও। সেই বিমানে ফিরছেন আরও ২৫০ জন ভারতীয়। তবে প্রথম দফায় ৪৭০ জনের বেশি ভারতীয় পড়ুয়া রোমানিয়ায় এসেছেন যাদের প্রায় সবাই ডাক্তারি পাঠরত। আয়ার ইন্ডিয়ার বিশেষ বিমানে তাদের ভারতে ফিরিয়ে আনা হয়। এয়ার ইন্ডিয়ার পাইলট শিবানী কালরা যিনি এই প্রক্রিয়ায় অংশ নিয়েছিলেন তিনি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে জানিয়েছেন, "প্রক্রিয়ার অংশ হতে পেরে গর্বিত"।
তিনি এক সাক্ষাতকারে জানিয়েছেন, 'সাধারণ ভাবে ডিউটিতে বেরোনোর সময় এই দৃশ্য দেখতে আমি অভ্যস্ত নই, সেদিন মা এসে আমাকে জড়িয়ে ধরল। যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পড়ুয়াদের উদ্ধার করতে যাচ্ছি, এক এক সম্পূর্ণ ভিন্ন অভিজ্ঞতা।আমি নিজেও দারুণ ভাবে উৎসাহী ছিলাম। সেই সঙ্গে কিছুটা চাপা আতঙ্কও মনের মধ্যে কাজ করেছিল। আমার কাছে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ ছিল, পড়ুয়াদের নিরাপদে দেশের মাটিতে ফিরিয়ে আনা। অবশেষে আমি পেরেছি। আমি এই প্রক্রিয়ার অংশ হতে পেরে গর্বিত। আমার বাবা, ভাই পরিবার সকলেই উদ্বিগ্ন ছিল। আমি মাটি ছোঁয়ার সঙ্গে সঙ্গে সকলে নিশ্চিন্ত হয়েছিল’।
প্রায় তিন বছরের বেশি সময় ধরে এয়ার ইন্ডিয়ার পাইলট হিসাবে দক্ষতার সঙ্গে কাজ করছেন কালরা। তিনি আরও জানান 'আমি যখন বুদাপেস্টে পৌঁছে ছাত্রদের সঙ্গে দেখা করি, তখন তারা সবাই ভয় ও আতঙ্কের মধ্যে ছিল।। আমি তাদের সঙ্গে কথা বলে তাদের সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেছি। আমরা তাদের আশ্বস্ত করেছি যে তারা নিরাপদে বাড়িতে পৌঁছে যাব। তারা ফিরে আসার জন্য উত্তেজিত আমরা যখন দেশের মাটিতে নামলাম তখন সবাই হাততালি দিচ্ছিল। আমি গেট থেকে বেরিয়ে এসে দেখি পরিবারগুলো হাততালি দিয়ে স্বাগত জানাচ্ছে এ এক অন্যরকম অভিজ্ঞতা। আমার সঙ্গে এই প্রথম এরকম কিছু ঘটল। আমি কৃতজ্ঞ যে আমি এই সুযোগ পেয়েছি”।