পুলওয়ামা হামলার পর কেটে গিয়েছে চার বছর। দীর্ঘ সময় পর সেদিনের সেই প্রাণঘাতী আক্রমণ নিয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে মুখ খুলেছেন জম্মু ও কাশ্মীরের তৎকালীন রাজ্যপাল সত্যপাল মালিক। পুলওয়ামা নিয়ে বিস্ফোরক দাবি করেছেন তিনি। সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে তিনি দাবি করেছেন, পুলওয়ামার হামলার আগে সিআরপিএফ জওয়ানদের আকাশপথে নিয়ে যাওয়ার আবেদন করেছিল তিনি। কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রক তাতে আমল দেয়নি।
কেবল তাই নয়, প্রাক্তন রাজ্যপালের অভিযোগ, জওয়ানদের যে রাস্তা দিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল, সেই রাস্তার নিরাপত্তাও সঠিকভাবে খতিয়ে দেখা হয়নি। তাঁর সাফ অভিযোগ, দায়িত্বজ্ঞানহীনতার জন্যই এমনটা হয়েছে। সত্যপাল মালিকের আরও দাবি, মোদীই নাকি তাঁকে এই বিষয়ে মুখ না খোলার নির্দেশ দিয়েছিলেন। সত্যপাল মালিকের এই মন্তব্যকে হাতিয়ার করে মোদীর বিরুদ্ধে আসরে নেমেছেন বিরোধীরা।
প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি জম্মু-কাশ্মীরের পুলওয়ামায় সন্ত্রাসবাদী আক্রমণে প্রাণ হারিয়েছিলেন ৪০ জন সেনা জওয়ান। জঙ্গি সংগঠন জইশ-ই-মহম্মদ এই ঘটনার দায় স্বীকার করেছিল। তদন্তভার এনআইএ-র কাছে হস্তান্তর করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। এনআইএ এই মামলায় ১৩,৮০০ পৃষ্ঠার চার্জশিট দাখিল করে, হামলার জন্য জইশ-ই-মহম্মদ এবং পাকিস্তানকে দায়ী করা হয়েছে।
এই হামলায় প্রায় ৩৫ কেজি আরডিএক্স সহ ২০০ কেজি বিস্ফোরক ব্যবহার করা হয়েছে বলে অভিযোগপত্রে জানিয়েছে এনআইএ। একই সঙ্গে ১৯জনের নাম রয়েছে এই চার্জশিটে।এর মধ্যে রয়েছে জেইএম প্রধান মাসুদ আজহার, তার ভাই রউফ আসগার এবং আম্মার আলভি এবং তার ভাগ্নে মহম্মদ উমর ফারুক, যিনি এই হামলার মূল পরিকল্পনাকারী ২০১৮ সালের এপ্রিলে সালে ভারতে অনুপ্রবেশ করেন এবং পুলওয়ামা হামলার পরে ২০১৯ সালের মার্চে একটি এনকাউন্টারে নিহত হন তিনি। এদিকে এই হামলার ঘটনার পর সরকার জম্মু-কাশ্মীরে সমস্ত সেনাদের জন্য বিমান ভ্রমণের অনুমোদন দিয়েছে।
১৪ই ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ সিআরপিএফ-এর একটি কনভয়ে মারাত্মক গাড়ি বোমা হামলার ঘটনায়, ৪০ জওয়ানের মৃত্যু হয়। এই আক্রমণের পিছনে যে ত্রুটি ছিল জন্য তার জন্য অভ্যন্তরীণ তদন্ত শুরু করে বাহিনী। জানা গিয়েছে আইইডি হামলা সম্পর্কে অনেক তথ্য থাকলেও কনভয়ের নিরাপত্তায় বেশ কিছু ত্রুটি ধরা পড়ে। সূত্রের খবর অনুসারে জানা গিয়েছে তদন্তে উল্লেখ করা হয়েছে যে সংশ্লিষ্ট দিনে, কনভয়ে ৭৮টি গাড়ি ছিল, যার দৈর্ঘ্য ছিল অস্বাভাবিকভাবে দীর্ঘ। ফলে কনভয় খুব সহজেই হামলা চালাতে পারে জঙ্গিরা।
আরও জানা গিয়েছে ভোর সাড়ে তিনটে নাগাদ কনভয়টি যখন পুলওয়ামার মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল, তখন একটি গাড়ি পাশের রাস্তা থেকে হাইওয়েতে আসে এবং বিস্ফোরণের আগে কনভয়ের পঞ্চম বাসের কাছে চলে যায় সেটি। তদন্তে এক সিআরপিএফ সেনা জওয়ানের ভূমিকারও প্রশংসা করা হয়েছিল যিনি হাইওয়েতে যাওয়ার সময় গাড়িটিকে দেখেছিলেন এবং সেটিকে থামানোর চেষ্টা করেছিলেন। বিস্ফোরণে তিনিও নিহত হন।