"কাশ্মীর না ছত্তিসগড়? কোথায় কাজ করতে চান?" এ প্রশ্নের জবাবে বরাবর কাশ্মীরকেই বেছে নিতেন সিআরপিফ জওয়ানরা। কিন্তু ১৪ ফেব্রুয়ারি উপত্যকার রক্তাক্ত অভিজ্ঞতার পর হয়তো পছন্দের কর্মক্ষেত্রের তালিকা থেকে কাশ্মীর নামটাকে সরিয়েই রাখতে চাইবেন সিআরপিএফ জওয়ানরা। বৃহস্পতিবার কাশ্মীরের পুলওয়ামায় আত্মঘাতী বিস্ফোরণে নিভেছে ৪০ জন জওয়ানের প্রাণ। স্বাধীন ভারতের ইতিহাসে এত ভয়াবহ হামলা আগে দেখেনি উপত্যকা। সহযোদ্ধাদের এই রক্তাক্ত পরিণতিতে অনেকটাই ‘ধাক্কা’ খাবে বাহিনীর মনোবল। এমনটাই মত সংশ্লিষ্ট মহলের। তবে এই ধাক্কা সামলে ঘুরে দাঁড়ানোই এখন জওয়ানদের কাছে বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করা হচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে এক সিআরপিএফ আধিকারিক বললেন, "বাহিনীর মনোবলে একটা বড় ধাক্কা দিয়েছে এই হামলা। এই অভিজ্ঞতা থেকে বেরোতে বাহিনীর কিছুটা সময় লাগবে। কিন্তু আমরা ছত্তিসগড়েও বহু প্রাণহানি দেখেছি।" প্রসঙ্গত, ছত্তিসগড়ে মাওবাদী হামলায় সিআরপিএফ জওয়ানদের মৃত্যুর ঘটনা নতুন কিছু নয়। কিন্তু কাশ্মীরে একসঙ্গে এতজন সিআরপিএফ জওয়ানের মৃত্যু অন্য অভিজ্ঞতা বলেই মনে করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন: কুড়ি বছরে কাশ্মীরে সবচেয়ে প্রাণঘাতী জঙ্গী হামলা, মৃত কমপক্ষে ৪০
কাশ্মীরে হামলায় কমপক্ষে ৪০ জন জওয়ানের মৃত্যু হয়েছে। কিন্তু হতাহতের নিরিখে এর থেকেও বেশি সিআরপিএফ জওয়ানের মৃত্যু এর আগে হয়েছে এ দেশে। ২০১০ সালে ছত্তিসগড়ে মাওবাদী হামলায় নিহত হয়েছিলেন ৭৬ জন সিআরপিএফ জওয়ান। মাওবাদী হামলার জন্যই সিআরপিএফ জওয়ানরা ছত্তিসগড়ের বদলে কাশ্মীরকেই কর্মক্ষেত্র হিসেবে বাছেন। এ প্রসঙ্গে এক সিআরপিএফ আধিকারিক বললেন, "যদি কোনও সিআরপিএফ জওয়ানকে জিজ্ঞেস করা হয়, কাশ্মীর না ছত্তিসগড়, কোথায় কাজ করবেন, তবে তিনি কাশ্মীরকেই বাছবেন।"
সিআরপিএফ জওয়ানদের চোখে কাশ্মীর বরাবরই ‘শান্ত’ জায়গা ছিল। কিন্তু ছবিটা পাল্টাতে শুরু করল ২০১৬ সাল থেকে। হিজবুল মুজাহিদিন জঙ্গি বুরহান ওয়ানির মৃত্যুর ঘটনা ঘিরে অশান্তির আগুন জ্বলেছিল উপত্যকায়। এ ঘটনার পর থেকেই একের পর এক অশান্তি-বিক্ষোভে তেতে রয়েছে ভূস্বর্গ।
আরও পড়ুন: পাকিস্তানকে দেওয়া ‘মোস্ট ফেভারড নেশন’-এর তকমা প্রত্যাহার ভারতের
সূত্র মারফৎ জানা গিয়েছে, যেভাবে বৃহস্পতিবার হামলা চালানো হয়েছে, তা জওয়ানদের মনে প্রভাব ফেলবে। এ প্রসঙ্গে একজন আধিকারিক বললেন, "এতটাই বড় মাপের হামলা হয়েছে যে, আমরা দেহগুলি শনাক্ত করতে পারছি না। কয়েকটি দেহ পুরোপুরি বিকৃত হয়ে গিয়েছে। ওই দেহগুলি চিহ্নিত করতে হলে আমাদের ডিএনএ পরীক্ষা করাতে হবে।" সিআরপিএফ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১৬ সালে বুরহান ওয়ানির মৃত্যুর ঘটনার পর থেকেই ফের শুরু হয়েছে সন্ত্রাসবাদী হামলায় আইইডি অর্থাৎ ইম্প্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইসের ব্যবহার।