২০১৯-র ১৪ ফেব্রুয়ারিতে সিআরপিএফ কনভয়ের উপর ওই প্রাণঘাতী হামলায় প্রাণ গিয়েছিল ৪০ জন জওয়ানের। সেই মামলাতেই চলতি বছরের ফেব্রুযারিতে গ্রেফতার করা হয়েছে শাকির বশির মাগরে নামে পুলওয়ামার কাকাপোরা এলাকার হাজিবলের এক বাসিন্দাকে। পুলওয়ামাকাণ্ডে শাকির বশির মাগরের ভূমিকা হামলার জইশ-ই-মহম্মদের পরিকল্পনাকারী মহম্মদ উমর ফারুকের দ্বারা প্রবল প্রশংসিত হয়েছিল। পাকিস্তানে পাঠানো ভয়েস ম্যাসেজ থেকে এনআইএ জানতে পারে যে, শাকির বশির মাগরেকে ২০০১ সালে সংসদ হামলার আসামী আফজাল গুরুর সঙ্গে তুলনা করেছিলেন ফারুক।
সম্প্রতি পুলওয়ামাকাণ্ডে ১৩,৫০০ পাতার চার্জশিট দিয়েছে এনআইএ। সেখানেই উল্লেখ, শাকির বশির মাগরে জইশ জঙ্গি গোষ্ঠীর নতুন নিয়োগ ও সেই ছিল পুলওয়ামা হামলার মূল কারিগর। পরিকল্পনা তৈরির নেপথ্যে শাকিরের উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে।
২০১৮ সালের অক্টোবরে জইশ প্রধান মাসুদ আজহারের ভাগ্নে উসমান হায়দার নিহত হলে তার আরেক ভাগ্নে মহম্মদ উমরকে নিরাপত্তাবাহিনীর উপর হামলার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল বলে জানায় এনআইএ। তারপরই নিরাপত্তা বাহিনীর কনভয়ের উপর হামলার পরিকল্পনা চলে।
এনআইএ-র দাবি, শাকির জঙ্গিগোষ্ঠী জৈশ-ই-মহম্মদের সক্রিয় সদস্য। অভিযোগ, পুলওয়ামার আত্মঘাতী জঙ্গি আদিল আহমেদ দারকে আশ্রয় ও টাকা জুগিয়ে সাহায্য করেছিল শাকির। এনআইএ সূত্রে খবর, ২০১৮ সালের মাঝামাঝি পাকিস্তানি জঙ্গি মহম্মদ ওমর ফারুকের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। ফারুকই আদিল আহমেদ দারের সঙ্গে শাকিরের পরিচয় করায়। পরে শাকির জইশ-এর সদস্য হিসেবে কাজ শুরু করে। তখন থেকেই সে কাশ্মীরের বাসিন্দা আদিল এবং ফারুককে নিজের বাড়িতে থাকতে দেয়। ওই বাড়িতে দূরনিয়ন্ত্রিত বিস্ফোরক বা আইডি বানানোর কাজও করা হত। আবার এই শাকিরের উপরেই দায়িত্ব ছিল, জম্মু-শ্রীনগর হাইওয়েতে সিআরপিএফের কনভয়ের গতিবিধিতে নজর রাখার। এনআইএ-র দাবি, কী ভাবে হাইওয়েতে সিআরপিএফ জওয়ানদের গাড়ি যাতায়াত করে, সেই সম্পর্কে পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য আদিলকে দিয়েছিল এই শাকিব। তার ভিত্তিতেই বিস্ফোরক বোঝাই গাড়ি নিয়ে সেনা কনভয়ে হামলা চালায় আদিল।
এনআইএ-এর এক আধিকারিকের কথায়, 'মহম্মদ উমর পাকিস্তানের জইশ নেতৃত্বকে শাকিবের দেখভালের জন্য বলেছিলেন।' তদন্তকারীদের মতে, শাকিবের নিখুঁত পরিকল্পনাতেই হামলার পরিকল্পনা জঙ্গিদের পক্ষে সহজ হয় ও তার ব্যাপ্তি অনেকদূর ছড়িয়ে যায়।
জাতীয় তদন্তকারী সংস্থার গোয়েন্দারা জানতে পেরেছেন যে, পুলওয়ামার পর আরও একটি হামলার পরিকল্পনা করেছিল জঙ্গি গোষ্ঠী জইশ-ই-মহম্মদ। উমরের ফোন থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী সেই পরিকল্পনা অনেক দূর এগিয়েছিল। তারও নেপথ্যে ছিল শাকিব। কিন্তু বালাকোট এয়ারস্ট্রাইকের পর তা ভেস্তে যায়। পুলওয়ামকাণ্ডের এক মাসের মাথায় এনকাউন্টারে নিহত হয় উমরও। ভয়েস ম্যাসেজে দ্বিতীয় হামলার জন্য যে গাড়ির কথা বলা হয়েছিল তার সন্ধান অবশ্য মেলেনি। বিদেশি সাংবাদিক হত্যার পরিকল্পনা থাকলেও পাকিস্তানে স্থিত জইশ নেতৃত্বের হস্তক্ষেপে তা স্থগিত করে উমরের দল।
চার্জশিট অনুসারে এর আগে জঙ্গি দলে হয়ে কাজের কোনও রেকর্ড শাকির বশির মাগরের নেই। ২০১৮ সালে স্থানীয় মুদির দোকানের মালিক ও বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠীর হয়ে কর্মরত আব্বাস রাথের শাকিরকে এ দেশের জইশ নেতৃত্বের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল বলে জানতে পেরেছে এনআইএ। আগে সে পুলিশের ইনফর্মার হিসাবে কাজ করেছে। জননিরাপত্তা আইনে বন্দিও ছিল সে। পরে রাথের বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠীকে একযোগে কাজে সহায়তা করেছে।
Read in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন