প্রথমে পাকিস্তানের 'মোস্ট ফেভার্ড নেশন'-এর স্বীকৃতি প্রত্যাহার। পাশাপাশি সেনাবাহিনীকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেওয়া প্রত্যাঘাতের। পুলওয়ামা-কাণ্ডের জেরে এবার নয়া পদক্ষেপ কেন্দ্রের, কাশ্মীরের পাঁচ বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের প্রদত্ত নিরাপত্তা এবং অন্যান্য সরকারি সুযোগসুবিধা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত ঘোষণা।
এক নির্দেশনামায় জম্মু-কাশ্মীর সরকারের তরফে জানানো হয়েছে, পাঁচ বিচ্ছিন্নতাবাদী কাশ্মীরী নেতাকে সরকারের তরফে দেওয়া নিরাপত্তা আজ সন্ধের মধ্যে তুলে নেওয়া হচ্ছে। যে পাঁচ নেতাকে চিহ্নিত করা হয়েছে, তাঁরা হলেন মিরওয়াইজ ওমর ফারুক, আব্দুল গনি ভাট, বিলাল লোন, হাশিম কুরেশি, শাবির শা। সরকারি নিরাপত্তা এঁরা আজ সন্ধে থেকে তো পাবেনই না, পাশাপাশি জারি হয়েছে সরকারি গাড়ি তুলে নেওয়ার নির্দেশও। দ্ব্যর্থহীন ভাষায় এই নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, কোনো কারণ বা অজুহাতেই এই নেতাদের কোনো অবস্থাতেই নিরাপত্তা বা সরকারি গাড়ি দেওয়া যাবে না।
আরও পড়ুন:বিদেশ মন্ত্রক ও সেনাবাহিনীর ওয়েবসাইট হ্যাক, দায়ী ভারত, অভিযোগ পাকিস্তানের
গাড়ি এবং নিরাপত্তাতেই শেষ নয়। এ ছাড়াও যদি কোনরকম সরকারি সুবিধা এঁরা ভোগ করে থাকেন এতদিন, পত্রপাঠ তা-ও প্রত্যাহার করার হুকুম জারি হয়েছে সরকারি নির্দেশিকায়। এবং আরও বলা হয়েছে, উক্ত পাঁচ নেতা ছাড়াও আর কোনও বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা কোনও সরকারি সুবিধা ভোগ করছেন কিনা, তা পুলিশ খতিয়ে দেখবে। যদি এমন কেউ থাকেন, তাঁরাও অবিলম্বে পড়বেন এই নির্দেশিকার আওতায়।
প্রসঙ্গত, কাশ্মীরের বিচ্ছিন্নতাবাদী হুরিয়ত নেতা সৈয়দ আলি শাহ গিলানি কোন সরকারি নিরাপত্তা পান না। যেমন পান না আরেক বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা ইয়াসিন মালিক। কিন্তু আজকের সরকারি নির্দেশিকায় উল্লিখিত পাঁচ নেতা সরকারি নিরাপত্তা পেতেন। পেতেন সরকারি গাড়িও। আজ সন্ধে থেকে পাকাপাকিভাবে উঠে যাচ্ছে সেই নিরাপত্তা-আচ্ছাদন। পুলওয়ামা-কাণ্ডের জেরে যে কেন্দ্র ক্রমশ আরও কঠোর এবং আপোষহীন অবস্থান নিতে বদ্ধপরিকর, আজকের নির্দেশিকায় সেটা স্পষ্টতর হয়ে গেল বলে মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
শনিবার এই বিষয়ে দিল্লিতে এক উচ্চপদস্থ বৈঠক করেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী রাজনাথ সিং। উপস্থিত ছিলেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত দোভাল, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র সচিব রাজীব গৌবা, এবং ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর প্রধান রাজীব জৈন। আলোচ্য বিষয় ছিল, সন্ত্রাসবাদী হামলার মাধ্যমে জম্মু কাশ্মীরের শান্তি বিঘ্নিত করার পাকিস্তানি প্রয়াসের বিরুদ্ধে নিরাপত্তা ব্যবস্থার পর্যালোচনা। ওদিকে জম্মু কাশ্মীরের স্বরাষ্ট্র সচিব রাজ্যের বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতৃত্বের সুরক্ষা ব্যবস্থার পর্যালোচনা করেন। এদের মধ্যে বেশিরভাগেরই সুরক্ষার দায়িত্বে ছিল রাজ্য পুলিশ।
আরও পড়ুন: জৈশের যাত্রাপথ: সংসদ হামলা থেকে পুলওয়ামা
পুলওয়ামা-কাণ্ডে আত্মঘাতী গাড়ি বোমা হামলায় ৪০ জন সিআরপিএফ জওয়ান নিহত হওয়ার পর বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতারা ঘটনার দায় চাপান "কাশ্মীর সমস্যার সমাধানে বিলম্বের" ওপর। এক বিবৃতিতে সৈয়দ আলি শাহ গিলানি, মিরওয়াইজ ওমর ফারুক, এবং ইয়াসিন মালিক জানান, "কাশ্মীরের মাটিতে যে কোনো হত্যার ঘটনায় দুঃখিত হন রাজ্যের প্রতিটি মানুষ এবং নেতা। কাশ্মীর সমস্যার সমাধানে বিলম্ব...কাশ্মীরের চরম ক্ষতি করছে।"
অন্যদিকে, নিরাপত্তা প্রত্যাহারের প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে মিরওয়াইজ ওমর ফারুক আরেকটি বিবৃতিতে বলেছেন, জামিয়া মসজিদ চত্বর থেকে তিনি বহুদিন ধরেই বলে আসছেন যে সরকার চাইলেই তাঁর নিরাপত্তা বলয় প্রত্যাহার করে নিতে পারে। অল পার্টি হুরিয়ত কনফারেন্সের এক মুখপাত্র জানান, "সরকার এবং কাশ্মীর বিরোধী মিডিয়া বারবার রাজ্যের প্রদত্ত নিরাপত্তার বিষয়টি নিয়ে রাজনৈতিক কারণে প্রশ্ন তুলেছে, এটা জেনেও যে এর ফলে বাস্তবের সমস্যার ছবি বিন্দুমাত্র পাল্টাবে না। কোনো হুরিয়ত নেতা এই নিরাপত্তা চান নি। উল্টে সরকার জোর করে নিরাপত্তা প্রদান করেছে। দেওয়ার সিদ্ধান্তও সরকারের ছিল, তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্তও তাই। এতে আমাদের কিছু এসে যায় না।"
Read the full story in English