কৃষি আইনের বিরুদ্ধে পাঞ্জাব-হরিয়ানায় কৃষকদের প্রতিবাদ অব্যাহত। রাজ্য-জাতীয় সড়ক অবরোধ, টোল প্লাজায় ধর্না, রেল রকোর মাধ্যমে প্রতিবাদ জারি রয়েছে। আর এতেই কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ক্ষতি হচ্ছে রেল ও জাতীয় সড়ক মন্ত্রকের। এখনও পর্যন্ত পাওয়া হিসাব অনুসারে এই দুই রাজ্যে প্রায় ২০০ কোটি টাকার রাজস্বহানি হয়েছে ভারতীয় রেলের। পরিষেবা না দিতে পারায় চলতি মাসের ৭ তারিখ পর্যন্ত ৫৫ লক্ষ টাকা যাত্রীদের ফিরিয়ে দিতে হয়েছে রেলকে। পাঞ্জাব ও হরিয়ানায় রাজস্ব ক্ষতির হার যথাক্রমে ৭.৫ ও ৩.৫ কোটি টাকা।
Advertisment
উত্তরাঞ্চল রেলের তরফে জানা গিয়েছে, পাঞ্জাবে ৩৩ জায়গায় রেল লাইনের উপর বলে রয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। ফলে যাত্রী বা পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল বন্ধ। মহামারী পরিস্থিতিতেও ২৪ সেপ্টেম্বর এই প্রতিবাদ আন্দোলনের আগে পাঞ্জাবের মধ্যে দিয়ে ১৪ যাত্রীবাহী ট্রেন ও ২৮টি পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল করছিল।
রেলের ফিরোজপুর ডিভিশনের দেওয়া তথ্য অনুসারে, পাঞ্জাব থেকেই প্রতিদিন রেলের রাজস্ব বাবদ আয় ছিল গড়ে ১৪ কোটি টাকা। বিপুল খাদ্যশস্য অন্যত্র যাওয়ার ফলেই এই আয় হত। এই সূত্রেই বলা যায়, গত ১৫ দিনে পাঞ্জাবে ২১০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। চলতি বছর, ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পাঞ্জাব থেকে ৬৫০টি ট্রেন যাতায়াত করেছে। রেলের আয় হয়েছে ৩২৭ কোটি টাকা। যা গত বছর সেপ্টেম্বর মাসের আয়ের প্রায় ১১৪ শতাংশ বেশি।
সেপ্টেবরের ৯ ও ২৩ তারিখ পাঞ্জাব থেকে যথাক্রমে ১,৬৫০ ও ১,৫৬৮ ওয়াগন পূর্ণ করিয়ে ইতিমধ্যেই রেকর্ড গড়েছে রেলের ফিরোজপুর ডিভিশন। ডিভিশনাল ম্যানেজার রাজেশ আগারওয়ালের আক্ষেপ, 'রেলের সম্পত্তির কোনও ক্ষতি হয়নি। কিন্তু আয় বিপুল হারে কমেছে। সড়ক পথেও পণ্য আমদানি-রফতানি বন্ধ।'
Advertisment
রেলের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছে স্থানীয় ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো। আন্দোলন উঠলেই যাতে পণ্য অন্যত্র পাঠানো যায় সেদিকে লক্ষ্য রাখা হয়েছে।
স্থানীর সরবরাহ যাতে ব্যাহত না হয় তার জন্য পণ্যবাহী ট্রেন চালাতে দিতে আন্দোলনকারী কৃষকদের আর্জি জানানো হয়েছে। এইভাবে নাগাড়ে অবরোধ চললে দেসের অন্যত্রও খাদ্যসামগ্রীতে টান পড়তে শুরু হবে বলে আশঙ্কা। এমনকী ওই দুই রাজ্যেরও গুদামগুলোও লোকসানের মুখ দেখবে।
তবে, বুধবারই আন্দোলনকারীরা জানিয়ে দিয়েছে রেল রোক চলবে। তাঁদের যুক্তি লকডাউনে এক মাস পণ্যবাহী ট্রেন চলাচল করেনি। কিন্তু অসুবিধার মধ্যে কেউ পড়েনি। আর এখন মাত্র আট দিনেই সবকিছুর এত ক্ষতি হচ্ছে বলে যে প্রচার চলছে তা মেনে নেওয়া যায় না। মুখ্যমন্ত্রীর তরফে তাই পণ্যবাহী রেল অবরোধ তুলে নেওয়ার আর্জি পরস্পর বিরোধী।
রেল বন্ধ থাকায় চরম সমস্যায় যাত্রীরাও। অনেক সময় পাঞ্জাব থেকে কোনও মতে দিল্লি বা অন্য রাজ্যে গাড়ি করে গিয়ে ট্রেন ধরতে হচ্ছে। গত ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে পাঞ্জাবে ৩২৫টি যাত্রীবাহী ট্রেন বাতিল হয়েছে কৃষক আন্দোলনের জেরে।
রেলের পাশাপাশি চরম রাজস্ব ক্ষতির সম্মুখীন জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষও। পাঞ্জাবে ১৮ ও হরিয়ানায় ১৯ টোল প্লাজা বন্ধ। দুই রাজ্য মিলিয়ে প্রায় ১১ কোটির রাজস্ব ইতিমধ্যেই ক্ষতি হয়ে গিয়েছে। লাধোয়াল টোল প্লাজা থেকে দৈনিক প্রায় ৭৫ লক্ষ টাকা আয় করত জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ। এখন যা সম্পূর্ণ বন্ধ।
১৫ অক্টোবরের আগে অবরোধ আন্দোলন উঠবে বলে মনে করছে না প্রশাসন। কৃষক আইন রাজ্যে লাগু সংক্রান্ত বিষয়ে পাঞ্জাবে বিশেষ অধিবেশন ডাকার জন্য এই দিন পর্যন্তই আপাতত সময়সীমা দিয়েছে আন্দোনকারী কৃষকরা। উল্লেখ্য, বর্তামেন টোল না দিয়েই জতীয় সড়ক দিয়ে যান চলাচল করতে পারছে। অনেকে ক্ষেত্রেই আবার স্বেচ্ছা টোল জমা করা হচ্ছে। এর পাশাপাশি, বেসরকারি পেট্রল পাম্পগুলোতেও ধর্না চলছে।