রাফাল চুক্তি সংক্রান্ত নথিপত্রের ওপর বিশেষ অধিকার দাবি করে কেন্দ্রের আবেদনের ওপর বৃহস্পতিবার রায় মুলতুবি রাখল সুপ্রিম কোর্ট। রাফাল চুক্তি মামলায় সুপ্রিম রায়ের পুনর্বিবেচনা চেয়ে যে আবেদন করা হয়েছিল, সেই আবেদনের সঙ্গে জমা করা হয়েছিল বেশ কিছু চুক্তি সংক্রান্ত নথিপত্র, যেগুলি আপাতত বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছে।
আবেদনের শুনানির রেকর্ড থেকে এই "ফাঁস হয়ে যাওয়া" নথির অপসারণ চেয়ে অ্যাটর্নি জেনারেল কে কে বেণুগোপাল প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের নেতৃত্বাধীন তিন-সদস্যের বেঞ্চকে জানান, বিশদ অনুমতি ছাড়া রাষ্ট্র-সংক্রান্ত নথি প্রকাশ্যে আনা যায় না, যেহেতু সেগুলির ওপর বিশেষ অধিকার রয়েছে সরকারের। এভিডেন্স অ্যাক্ট বা সাক্ষ্য আইনের ১২৩ নম্বর অনুচ্ছেদ এবং আরটিআই (তথ্য অধিকার আইন)-এর কিছু অংশ উদ্ধৃত করে বেণুগোপাল বলেন, "এভিডেন্স অ্যাক্টের সংস্থান অনুযায়ী, সংশ্লিষ্ট বিভাগের অনুমতি ছাড়া আদালতে কেউ কোনও গোপন নথি পেশ করতে পারেন না।"
২০১৮ সালের ১৪ ডিসেম্বর রাফাল মামলায় রায়দান করে সুপ্রিম কোর্ট, যে রায় পুনর্বিবেচনার আবেদনের শুনানি চলছে প্রধান বিচারপতি গগৈ, এবং বিচারপতি এস কে কাউল ও বিচারপতি কে এম জোসেফকে নিয়ে গঠিত তিন-সদস্যের বেঞ্চের সামনে। ওই বেঞ্চের বক্তব্য, কোনও বিবাদের ক্ষেত্রে তথ্য অধিকার আইনের অগ্রাধিকার রয়েছে অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের ওপর।
আরও পড়ুন: রাফাল তথ্য চুরি প্রসঙ্গে সরকারি হুমকির বিরুদ্ধে সংবাদ মহলের গর্জন
"কোন বিশেষ অধিকারের কথা বলছেন আপনি? ওঁরা (আবেদনকারীরা) তো ইতিমধ্যেই আদালতে ওই নথিপত্র পেশ করেছেন। আরটিআই-এর ২২ এবং ২৪ নম্বর অনুচ্ছেদ অনুযায়ী যে কোনও ইন্টেলিজেন্স এবং সুরক্ষা সংস্থাও দুর্নীতি এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন সংক্রান্ত তথ্য সরবরাহ করতে বাধ্য," অ্যাটর্নি জেনারেলকে জানায় বেঞ্চ। উত্তরে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা সবকিছুর উর্দ্ধে। "ওঁরা (আবেদনকারীরা) চুরি করা নথি পেশ করেছেন। রাষ্ট্র সংক্রান্ত নথি অনুমতি বিনা প্রকাশ্যে আনা যায় না।"
যে তিন আবেদনকারী রাফাল সংক্রান্ত সমস্ত জনস্বার্থ মামলা খারিজ করা সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পুনর্বিবেচনা প্রার্থনা করেছেন, তাঁরা হলেন দুই প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী যশবন্ত সিনহা ও অরুণ শৌরি, এবং অ্যাডভোকেট প্রশান্ত ভূষণ। এ বিষয়ে অবশ্য শীর্ষ আদালতের স্পষ্ট বক্তব্য, কেন্দ্রের প্রাথমিক আপত্তির নিষ্পত্তি হলে তবেই মামলার বিশদে যাওয়া হবে।
রাফাল নথি জনসমক্ষেই রয়েছে: প্রশান্ত ভূষণ
অ্যাটর্নি জেনারেলের যুক্তির বিরোধিতা করে প্রশান্ত ভূষণ বলেন, রাফাল সংক্রান্ত নথি ইতিমধ্যেই প্রকাশ পেয়ে গিয়েছে এবং জনসমক্ষেই রয়েছে। "প্রতিটি নথি জনসমক্ষে রয়েছে। আদালত কী করে তা অস্বীকার করতে পারে?" প্রশ্ন করেন তিনি। তাঁর কথায়, আরটিআই অ্যাক্টের বিধান অনুযায়ী, জনস্বার্থের স্থান সবার উপরে, এবং কিছু ইন্টেলিজেনস সংস্থা-সংক্রান্ত নথি বাদে আর কোনও তথ্যের ক্ষেত্রেই বিশেষ অধিকার দাবি করা যায় না। ভূষণের আরও বক্তব্য, "রাফাল যুদ্ধবিমান কেনার ক্ষেত্রে দুই সরকারের মধ্যে কোনও চুক্তি নেই, যেহেতু ফ্রান্স ভারতকে ৫৮,০০০ কোটি টাকার এই ডিলের ওপর সার্বভৌম গ্যারান্টি দেয় নি।"
এই আবেদনের শেষ যেদিন শুনানি হয়, সেই ৬ মার্চ তিন-সদস্যের বেঞ্চের সামনে কেন্দ্রের হয়ে আদালতে সওয়াল করতে এসে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, যুদ্ধবিমান সংক্রান্ত নথি প্রতিরক্ষা মন্ত্রক থেকে চুরি হয়ে গেছে এবং সে চুরির তদন্ত চলছে। তাঁর সওয়াল, রাফাল চুক্তি নিয়ে আবেদনকারীরা যে নথির উপর ভরসা করে রয়েছেন, তা গোপন ও গোপনীয়তা আইন লঙ্ঘনকারী। সরকারের তরফ থেকে হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়, দেশের দুটি সংবাদ মাধ্যম ও একজন উকিলের বিরুদ্ধে অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টের আওতায় "ফৌজদারি পদক্ষেপ" নেওয়া হবে। বেঞ্চের সামনে এই মর্মে আর্জিও জানান বেণুগোপাল।
প্রথমে সংবাদ মাধ্যম দুটির নাম না করলেও পরে তিনি বলেন, “দ্য হিন্দু এবং এএনআই-এর কাছে যা যা নথি আছে, সেগুলি চুরি করা নথি”। কিন্তু তার এক দিনের মধ্যেই নিজের অবস্থান ১৮০ ডিগ্রী বদলে বেণুগোপাল জানান, আবেদনকারীরা যে নথিগুলি জমা দিয়েছেন, সেগুলি চুরি করা হয় নি, মূল নথির ফোটোকপি মাত্র।