মানুষের নির্ভয়ে মুখ খোলার স্বাধীনতা নেই কেন? গণপিটুনির বিরুদ্ধে কোনও কার্যকরী পদক্ষেপ কেন করা হচ্ছে না? স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারমণ ও রেলমন্ত্রী পিয়ুস গোয়েলের উপস্থিতিতে কেন্দ্রীয় সরকারকে নিশানা করে প্রশ্নবাণ ছুঁড়ে দিলেন শিল্পপতি রাহুল বাজাজ। একই সঙ্গে সাংসদ প্রজ্ঞা ঠাকুরের গডসে বন্দনা নিয়েও সমালোচনা করেন বাজাজ গ্রুপের চেয়ারম্যান। দেশজুড়ে ভয়ের বাতাবরণের বিরুদ্ধে ইকনমিক টাইমসের এক অনুষ্ঠানে সরব হন শিল্পপতি বাজাজ। সমালোচনার মুখে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের জবাব, 'আমাদের এই বাতাবরণ শুধরে নেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করতে হবে।'
Advertisment
আর্থিক বছরের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে দেশের অর্থনীতিক বিকাশের হার কমেছে। বেড়েছে বেকারত্ব, কর্মচ্যূত্যির হার। কিন্তু এতদিন কোনও শিল্পপতি মুখ খোলেননি। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে বাজাজ গ্রুপের চেয়ারম্যান রাহুল বাজাজ বলেন, 'খোলাখুলিভাবে আমাকে বলতেই হচ্ছে ইউপিএ দুই সরকারের আমলে যে কারও সমালোচনা করা যেত। কিন্তু আপনাদের বিরুদ্ধে কিছু বলতে লোকে ভয় পায়। আপনারা কাজ করছেন, তা সত্ত্বেও মানুষ মনে করছেন সমালোচনা করলে সরকার খোলা মনে তা গ্রহণ করতে পারবে না।'
মঞ্চে একাধিক হেভিওয়েট কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর পাশাপাশি ছিলেন মুকেশ আম্বানি, আদিত্য বিড়লা, সুনীল ভারতী মিত্তলের মত শিল্পপতিরা। '
২০১২-১৩ আর্থিক বছরের চতুর্থ ত্রৈমাসিকের পর দেশের অর্থনীতির বিকাশের হার কমে দাঁড়িয়েছে ৪.৫ শতাংশে। ঝিমিয়ে পড়া অর্থনীতিতে চাঙ্গা করতে গত সেপ্টেম্বরেই কর্পোরেট কর ছাড়ের ঘোষণা করেছেন সীতারমণ। সেই সময় নানা শিল্পপতি কেন্দ্রীয় পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছিলেন। কিন্তু, অর্থনীতির বেহাল অবস্থা সমন্ধে কোনও শিল্পপতিই কিছু বলেননি। ফলে রাহুল বাজাজের প্রশ্ন তোলার বিষয়টি যথেষ্ট গুরুত্ববাহী। এর আগে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ও অর্থনীতিবিদ মনমোহন সিং বলেছিলেন, 'দেশের শিল্পমহল আতঙ্কে রয়েছে। বহু শিল্পপতি আমাকে বলেছেন আয়কর দফতর, ইডি সহ নানান সরকারি সংস্থার ভয়ে নতুন প্রজেক্ট স্থাপণ করা যাচ্ছে না। ফলে অর্থনীতিক বিকাশ কমছে। পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ।'
প্রকাশ্যে সমালোচনার জবাব দিতে গিয়ে ঢোক গিলতে হয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে। তাঁর কথায়, 'কারও ভয় পাওয়ার প্রয়োজন নেই। যদি তিনি বলে থাকেন ভয়ের পরিবেশ রয়েছে তবে আমাদের তা বদলের জন্য পদক্ষেপ করতে হবে।' তাঁর দাবি এনডিএ আমলেই সব থেকে কড়া সমালোচনা সম্ভব। শাহের আশ্বাস, 'সরকার অত্যন্ত স্বচ্ছাতার সঙ্গে চলছে। এখানে সমালোচনা করলে ভয়ের কিছু নেই। গঠনমূলক সমালোচনা করলে তার সত্যতা ও গুরুত্ব বুঝে আমরা পদক্ষেপের চেষ্টা করি।'
দেশের গণপিটুনির হার বাড়চ্ছে। কিন্তু সরকারের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ কই? বাজাজের প্রশ্নের উত্তরে অমিত শাহ বলেন, 'বিজেপি ও কেন্দ্রীয় সরকার গণপিটুণিকে সমর্থন করে না। তবে, এই ব্যাধি আগেও ছিল। এখনও রয়েছে। কিন্তু কোনও পদক্ষেপ হচ্ছে না এটা ভুল। বহু মামলা আদালতে বিচারাধীন। অনেকেই শাস্তি পেয়েছে।' তাঁর আর্জি বিষয়গুলি সংবাদ মাধ্যমে বেশি করে প্রকাশ পেলে সরকার উপকৃত হবে। প্রজ্ঞা ঠাকুরের মন্তব্য ঘিরেও বাজাজের মুখে সমালোচনা শোনা যায়। ভোপালের সাংসদ প্রজ্ঞা ঠাকুর সংসদে ক্ষমা চেয়েছেন বলে জানান প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং।