আজ দিল্লিতে আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী দেশের অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি এবং পলাতক শিল্পপতি ও রাজ্যসভা সাংসদ বিজয় মালিয়ার মধ্যে যোগসাজশের অভিযোগ এনেছেন। তাঁর দাবি, এই দুজনের মধ্যে সংসদে ১৫ মিনিটের বেশি সময় ধরে সাক্ষাৎ হয়েছিল, এবং তার প্রমাণ রয়েছে। "উনি (জেটলি) ইডি বা সিবিআই-কে কিছু জানান নি। এর মানে কী? একজন ক্রিমিনাল তাঁকে জানাল যে সে লন্ডনে পালিয়ে যাচ্ছে, অথচ উনি কেন কিছু করলেন না, সেই কৈফিয়ত দিতে উনি বাধ্য," বলেন রাহুল।
এর আগে বুধবার লন্ডনে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে মালিয়া দাবি করেন, ২০১৬ সালে দেশ ছাড়ার আগে তিনি সংসদে জেটলির সঙ্গে দেখা করেন এবং ব্যাঙ্কের বকেয়া ঋণ শোধ করার ইচ্ছে প্রকাশ করেন। জেটলি অবশ্য এই দাবি খণ্ডন করেছেন।
আরও পড়ুন: দেশ ছাড়ার আগে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছিলাম: বিজয় মালিয়া
আজকের সাংবাদিক সম্মেলনে কংগ্রেস নেতা এবং রাজ্যসভা সাংসদ পি এল পুনিয়া জানান, তিনি সে বছরের ১ মার্চ মালিয়াকে জেটলির সঙ্গে কথা বলতে দেখেন, এবং কথোপকথন চলে প্রায় ১৫ মিনিট ধরে, প্রথমে একটি করিডোরে, পরে সংসদের সেন্ট্রাল হলে। গতকাল জেটলি বলেছিলেন তিনি মালিয়াকে প্রত্যাখ্যান করেন, এবং তাঁর সঙ্গে কোনো কথা বলেননি। পুনিয়ার অভিযোগ যদি সত্যি হয়, তবে তা জেটলির মন্তব্যের সরাসরি বিপক্ষে যাচ্ছে।
পুনিয়ার আরও দাবি, সংসদের রেকর্ড ঘাঁটলে দেখা যাবে, মালিয়া ১ মার্চ, ২০১৬-তে অ্যাটেনডেন্স রেজিস্টারে সই করেছিলেন। "২০১৬ সালের পয়লা মার্চ আমি অরুণ জেটলি এবং বিজয় মালিয়াকে সংসদ ভবনের সেন্ট্রাল হলে চুপিচুপি কথা বলতে দেখি। এরপর আমরা মিডিয়ার দৌলতে ৩ মার্চ জানলাম, যে ২ মার্চ, ২০১৬-তে মালিয়া দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। বের করা হোক সংসদের সিসিটিভি ফুটেজ। দেখা যাক কে সত্যি বলছে। হয় আমি রাজনীতি ছেড়ে দেব, নাহয় ওঁকে (জেটলিকে) ছাড়তে হবে," বলেন পুনিয়া।
জেটলির পদত্যাগের দাবি জানিয়ে রাহুল বলেন, "অর্থনৈতিক অপরাধীদের ক্ষেত্রে পদক্ষেপ নেওয়ার দায়িত্ব অর্থমন্ত্রীর। এদিকে অর্থমন্ত্রী নিজেই তাদের সঙ্গে দেখা করেছেন। অর্থমন্ত্রী স্বীকার করেছেন মালিয়া তাকে জানিয়েছিল সে লন্ডন যাচ্ছে। কিন্তু অর্থমন্ত্রী কোনও পদক্ষেপ নেন নি। সিবিআই, ইডি, বা অন্য কোনও সরকারি সংস্থাকে জানান নি। কেন? ঠিক কী বন্দোবস্ত হয়েছিল? মিঃ মালিয়ার বিরুদ্ধে নিয়ন্ত্রণ নোটিশ জারি করা ছিল, যেটিকে পাল্টে সাধারণ বিজ্ঞপ্তি করে দেওয়া হয়। কে করল? শুধুমাত্র দুজনের কাছে সে ক্ষমতা আছে - প্রধানমন্ত্রী এবং অর্থমন্ত্রী।"
এর আগে সংবাদ সংস্থা এএনআই-কে দেওয়া এক বিবৃতিতে জেটলি জানান, ২০১৪ সালের পর থেকে বিজয় মালিয়াকে তিনি কোনও সাক্ষাৎকারের সময় দেননি। বিবৃতিতে জেটলি বলেছেন, "তবে যেহেতু উনি রাজ্যসভার সদস্য ছিলেন এবং মাঝে মাঝে অধিবেশনে আসতেন, একবার সেই সুযোগের অসদ্ব্যবহার করেছিলেন। আমি অধিবেশন থেকে বেরিয়ে আমার ঘরে যাওয়ার সময়ে উনি নিজের হাঁটার গতি বাড়িয়ে আমাকে ধরে ফেলেন, এবং বলেন, ‘আমি সেটলমেন্টের একটা প্রস্তাব দিয়েছি।’ আমি আগে থেকেই ওঁর ভুয়ো অফারের বিষয়ে জানতাম, ফলে আমি ওঁকে কথা বাড়ানোর সুযোগ দিইনি। আমি স্পষ্ট বলেছিলাম, আমার সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলে লাভ নেই, অফার থাকলে সে নিয়ে ব্যাঙ্কের সঙ্গে যেন উনি কথা বলেন। উনি আমার দিকে যে সব কাগজ বাড়িয়ে ধরেছিলেন, সেসব আমি হাতে নিয়ে দেখিনি। ওই একবার একটি বাক্য বিনিময় ছাড়া ওঁর সঙ্গে আমার কখনও যোগাযোগ হয়নি।”