সরকারের কাছ থেকে ভেন্টিলেটর বানানোর "সম্ভাবনা খতিয়ে দেখার" নির্দেশ পাওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যেই পাঞ্জাবে কাপুরথলার রেলওয়ে কোচ ফ্যাক্টরি (RCF) শনিবার মৌলিক ডিজাইনের একটি প্রোটোটাইপ (পরীক্ষামূলক মডেল) প্রকাশ করেছে, যার দাম বাজারে প্রাপ্ত অন্যান্য ভেন্টিলেটরের তুলনায় অনেকটাই কম।
Advertisment
এই প্রথম দেশের কোনও উৎপাদনকারী ইউনিট এই ধরনের সাফল্য পেল। প্রোটোটাইপের নাম দেওয়া হয়েছে 'জীবন', এবং এটি এখন চূড়ান্ত পরীক্ষার জন্য পাঠানো হবে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ (Indian Council of Medical Research বা ICMR)-এ, যার পরে দেশে COVID-19 অর্থাৎ নভেল করোনাভাইরাসের মোকাবিলায় বৃহত্তর স্তরে এটির উৎপাদন শুরু হবে। শনিবার এমনটাই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় ভারতীয় রেল-এর তরফে। RCF-এর নিজস্ব চিকিৎসাকর্মীরা এই নয়া ভেন্টিলেটর পরীক্ষা করে সেটিকে ইতিমধ্যে সবুজ সঙ্কেত দিয়ে দিয়েছেন।
RCF-এর জেনারেল ম্যানেজার তথা মেশিনটির প্রধান ডিজাইনার রভিন্দর গুপ্তা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, "কম্প্রেসর বাদ দিলে মেশিনের দাম পড়বে ১০ হাজার টাকারও কম। সব মিলিয়েও বাজারে যা মেশিন পাওয়া যায়, সেগুলির চেয়ে অনেকটাই কম দামে পাওয়া যাবে আমাদের মেশিন।" প্রসঙ্গত, গুপ্তা ভারতীয় রেলের ১৯৮৪ ব্যাচের মেক্যানিকাল ইঞ্জিনিয়ারিং অফিসার।
Advertisment
"এটিকে এমারজেন্সি ভেন্টিলেটর হিসেবে ব্যবহার করা যাবে। বানানোও সহজ, স্থানীয় কলকব্জা দিয়েই হয়ে যাবে," বলেন তিনি।
নতুন এই যন্ত্রটির কেন্দ্রে রয়েছে একটি কম্প্রেস করা বাতাসের কন্টেইনার, যা চালিত করবে 'অ্যাম্বু' ব্যাগটিকে, স্রেফ হাওয়া দিয়ে, সার্ভো মোটর বা পিস্টন বা লিঙ্ক মেকানিজম-এর মতো চলমান অংশ ছাড়াই। গুপ্তা বলেন, "এটি একদম নীরবে কাজ করবে। এবং এতে কোনও 'রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং' নেই। গোড়া থেকেই একেবারে মৌলিক ডিজাইন।"
অভিনব এই ভেন্টিলেটরের সৃষ্টির নেপথ্যে রয়েছেন ১০ জন রেলওয়ে ইঞ্জিনিয়ার এবং একদল চিকিৎসাকর্মী। যন্ত্রের মেধা স্বত্বাধিকার বা ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি রাইটস অবশ্য RCF-এর। যন্ত্রটির মাইক্রোপ্রসেসর-যুক্ত কন্ট্রোলার, এবং এটির সার্কিট তৈরি করেছে RCF-এরই একটি দল।
ভারতের অন্যতম প্রধান এই উৎপাদন ইউনিটে তৈরি হয় জার্মান ডিজাইনের লিঙ্ক হফমান বুশ রেলের কামরা। ভেন্টিলেটর তৈরি করার জন্য RCF প্রথমে নিজেদের ভাণ্ডারে প্রয়োজনীয় মালমশলার খোঁজ করে। যার ফলে নতুন যন্ত্রটির 'বডি' এসেছে রেলের কামরার অংশ থেকে, 'আর্গন ফ্লো মিটার' এসেছে লেজার ওয়েল্ডিং (ঝালাই) মেশিন থেকে, এবং কম্প্রেসর এসেছে একটি এয়ার কুলার থেকে। "বাক্সটা খুললে বুঝবেন যে যন্ত্রটা জটিল, কিন্তু সবটাই ১০ হাজার টাকার কমে," বলেন গুপ্তা।
দিল্লি এবং নয়ডা থেকে যন্ত্রের দুটি অংশ যোগাড় করতে হয় RCF-কে। ভাল্ভ আসে জাপানি ইঞ্জিনিয়ারিং সংস্থা এসএমসি কর্পোরেশন-এর নয়ডায় অবস্থিত ভারতীয় শাখা থেকে, এবং 'কন্ট্রিবিউশন কন্ট্রোলার' আসে ওখলায় অবস্থিত এ পল কোম্পানির কাছ থেকে। লকডাউনের বাধ্যবাধকতার কারণে দুটি অংশই আনাতে হয় 'ইমারজেন্সি ট্রান্সিট' পরিষেবা ব্যবহার করে সড়ক এবং রেল পরিবহণের মাধ্যমে।
আপাতত ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ মেডিক্যাল রিসার্চ-কে দেখানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রায়োগিক নথিপত্র প্রস্তুত করতে ব্যস্ত ডিজাইনার এবং ইঞ্জিনিয়াররা। আগামী সপ্তাহের মধ্যেই রেলওয়ে বোর্ডের নির্দেশ মেনে কাউন্সিলের কাছে পাঠানো হবে এই প্রোটোটাইপ।
আমাদের নিউজলেটার সদস্যতা!
একচেটিয়া অফার এবং সর্বশেষ খবর পেতে প্রথম হন