টানা বৃষ্টিতে জলমগ্ন উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকা। বৃষ্টির দরুন এখনো পর্যন্ত উত্তরবঙ্গে দুজনের মৃত্যু হয়েছে। জলের তোড়ে ভেসে গিয়েছেন দুজন। জলের মাঝে আটকে গ্রামের পর গ্রাম। শুধু রাস্তাঘাট বা মাঠ নয়, বৃষ্টির জল ঢুকেছে গ্রামের ঘরগুলিতেও। গত দুদিনের টানা বৃষ্টিতে জলমগ্ন শহর শিলিগুড়িরও বিস্তীর্ণ এলাকা। জলবন্দি ডুয়ার্সের মানুষ। জলের তলায় রয়েছে একাধিক চাবাগান। বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে একাধিক নদী। তাই নদী তীরবর্তী এলাকায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যে সতর্কতা জারি করা হয়েছে। ব্যাতিক্রম নয় শিলিগুড়িও। শিলিগুড়ির মহানন্দা তীরবর্তী এলাকাতেও জারি করা হয়েছে সতর্কতা।
শিলিগুড়ি, লাটাগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, ময়নাগুড়ি, জলপাইগুড়ির, বানারহাটসহ বিস্তীর্ণ এলাকা এখনো জলের তলায় রয়েছে। সেচদফতর সূত্রে খবর গত ২৪ ঘন্টায় এখনো পর্যন্ত শুধুমাত্র শিলিগুড়িতেই ২৫৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস অনুযায়ী আগামী দুদিনও উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ এলাকায় ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। অন্যদিকে টানা বৃষ্টির জেরে ফুলে ফেঁপে উঠেছে উত্তরের নদীগুলি। তিস্তা, তোর্ষা, জলঢাকা,মহানন্দা সহ একাধিক নদীর জল বেড়েছে। ফলে বৃষ্টি কমলেও জল কবে নামবে সে বিষয়ে চিন্তিত প্রশাসনও।
অন্যদিকে পঞ্চনইয়ের বাঁধ ভেঙে জল ঢুকে জলমগ্ন শিলিগুড়ি পুরনিগমের বিস্তীর্ণ এলাকা। প্রবল বর্ষণের জ্বেরে মাঝরাতে পাঁচিল চাপা পড়ে শিলিগুড়ি শালবাড়ী এলাকায় মৃত্যু হয়েছে নারায়ণ মণ্ডল নামে এক ব্যক্তির। আহত হয়েছেন ওই পরিবারেরই আরো তিনজন। শহর লাগোয়া নদীগুলির জলস্তর বেড়ে যাওয়ায় জারি করা হয়েছে হলুদ সংকেত। তৈরি রাখা হয়েছে কুইক রেসপন্স টিম। শিলিগুড়ি পুরনিগম এলাকাছাড়া মাটিগাড়া নকশালবাড়ি বাগডোগরার বিস্তীর্ণ এলাকা জলের তলায় রয়েছে। বেশ কয়েকটি এলাকায় বাড়িতে জল ঢুকে যাওয়ায় স্বাভাবিক জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে।
সোমবার সকালে কলকাতা থেকে বাগডোগরায় আসা একটি উড়ানকে ফিরে যেতে হয়েছে।
আলিপুরদুয়ার জেলার কালচিনি ব্লকের গাগুটিয়া চা বাগানের বাসিন্দা গীতা মাঝি নালা পারাপার করতে গিয়ে জলের তোড়ে ভেসে যান। হাসিমারার ঘোড়ানালা প্লাবিত হয়ে বিভিন্ন এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়ে। এছাড়াও টোটোপাড়া সংলগ্ন একাধিক নদীর জল বেড়ে যাওয়ায় মূল শহরে থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় ওই এলাকা। বীরপাড়ার বিভিন্ন রাস্তার উপর দিয়ে জল বইতে থাকে। আলিপুরদুয়ার শহরে জল ঢুকে যাওয়ায় নৌকা নামাতে হয়। অন্যদিকে জলপাইগুড়ি জেলা ক্রান্তি রাজডাঙ্গা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় জলে ডুবে মৃত্যু হয়েছে সূর্য মল্লিক নামে এক বাসিন্দার। গাছের গুঁড়ি নিতে গিয়ে নৌকা ডুবে নিখোঁজ হয়েছে দুজন। বানারহাটে হাতিনালার জল উঠে বহু এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ওই এলাকায় রেল লাইনের নিচে থেকে মাটি সরে যাওয়ায় ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। লাটাগুড়িতে ডুবে যায় রাস্তা। ওদলাবাড়িতে সেচ বাঁধের বেশ কিছু অংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
অন্যদিকে আগামী বছর বন্যা পরিস্থিতি তৈরির আগেই তা নিয়ন্ত্রণের জন্য উদ্যোগ নিয়েছে সেচ দপ্তর। দপ্তরের উত্তর পূর্ব বিভাগের অধীনে থাকা শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার সেচ বিভাগের জন্য আগাম ৯৭ কোটি টাকা অনুমোদন করেছে রাজ্য সরকার। এছাড়াও বিচার বিভাগ গ্রামীণ পরিকাঠামো উন্নয়ন তহবিল থেকে ১৬ কোটি ৪০ লক্ষ টাকা মঞ্জুর হয়েছে। পুজোর পর থেকেই টেণ্ডার ডেকে কাজ শুরু হবে বলে সেচ দপ্তর সূত্রে জানা গিয়েছে। চিফ ইঞ্জিনিয়ার ধ্রুবজ্যোতি রায় জানিয়েছেন, '‘সব মিলিয়ে যা টাকা পাওয়া গিয়েছে তাতে বন্যা নিয়ন্ত্রণে ভালো কাজ করা যাবে। ভুটান পাহাড়ে বৃষ্টি সে সঙ্গে ডুয়ার্সে নদীগুলি দে বালি ডলোমাইট পাথর জমে অধিক হয় বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হচ্ছে। ভারত ভুটান যৌথ কো-অর্ডিনেশন কমিটির বৈঠকে আমরা বিষয়টি তুলে ধরব।’’
সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, স্টেট ডেভলপমেন্ট প্ল্যানের আওতায় এই প্রকল্পে, ৯৭ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। এতে শিলিগুড়ি সেচ বিভাগের জন্য ১৩ কোটি ৪ লক্ষ টাকা, কোচবিহার আলিপুরদুয়ার ও জলপাইগুড়ির জন্য ৮৪ কোটি টাকা বরাদ্দ হয়েছে। মূলত মুজনাই, ডায়না, তোরসা, তিস্তা, মহানন্দা, এই নদীগুলিতে বন্যা নিয়ন্ত্রণের কাজ করবে সেচ দপ্তর। এছাড়া বাঁধ নির্মাণ, নদীর চ্যানেল ইত্যাদি তৈরি করা হবে। সব মিলিয়ে কমবেশী মোট ৪৫টি কাজ করা হবে বলে জানা গিয়েছে।
প্রশাসন সাধারণ মানুষের পাশে রয়েছে বলে জানিয়েছেন শিলিগুড়ির মহকুমাশাসক সিরাজ দানেশ্বর। তিনি বলেন,নদী তীরবর্তী এলাকায় সতর্কতা জারি করা হয়েছে। জেলা প্রশাসন সমস্তরকম পরিস্থিতি মোকাবিকায় প্রস্তুত রয়েছে। মহানন্দা সহ বিভিন্ন নদীতে হলুদ সংকেত জারি করা হয়েছে। কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। কুইক রেসপ্নস টিমকে তৈরি থাকতে বলা হয়েছে। ত্রানেরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। পরিস্থিতি খারাপ হলে নদী তীরবর্তী এলাকার মানুষকে ত্রাণ শিবিরে সরিয়ে নিয়ে আসা হবে।