উত্তর ভারতে বৃষ্টি অব্যাহত, ২৪ ঘন্টায় ৪ রাজ্যে বন্যা ও ভুমিধসের বলি ২০। রেকর্ড বৃষ্টির কারণে দিল্লি, হিমাচল এবং পাঞ্জাবে জনজীবন ব্যাহত। আগামী ৭ দিনের জন্য ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি করেছে আবহাওয়া দফতর। একই সঙ্গে যমুনা নদীর জলস্তর অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে।
বন্যা ও বৃষ্টির কারণে হিমাচল প্রদেশ-দিল্লি ও পাঞ্জাবে বিপর্যয় পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। বহু রাজ্যে সেতু, যানবাহন ও বাড়িঘর বন্যায় ভেসে গেছে। যমুনা নদীর জলস্তর এখনও বিপদসীমার ওপর দিয়ে বয়ে চলায় দিল্লিতে বন্যার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। পাঞ্জাব ও হরিয়ানায়ও বৃষ্টিপাত অব্যাহত রয়েছে। পাহাড় ও সমতলে বাড়ছে ভূমিধসের ঘটনা। শহরের পর শহর, গ্রামের পর গ্রাম, কৃষিজমি এখন জলের তলায়। টানা বৃষ্টিপাতের জেরে বহু রাজ্য সৃষ্টি হয়েছে বন্যা-পরিস্থিতি।
সোমবারই দিল্লিতে যমুনা নদীর জলস্তর বিপদসীম অতিক্রম করেছে। হিমাচলে ভারী বৃষ্টি ও ভূমিধসের কারণে মৃতের সংখ্যা বেড়েছে। জম্মু ও কাশ্মীর, উত্তরাখণ্ড, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ এবং রাজস্থানের অনেক এলাকায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। হিমাচল প্রদেশও প্রবল বৃষ্টিপাতের কবলে। ভূমিধসের কারণে রাজ্যে আরও চারজনের মৃত্যু হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী সুখবিন্দর সিং সুখু বলেছেন, ‘রাজ্যে প্রবল বৃষ্টি ও ভুমিধসের ঘটনায় দুই দিনে ১৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে মানালিতে আটকে পড়া ২০ জনকে উদ্ধার করা হয়েছে তবে প্রায় ৩০০ জন এখনও বিভিন্ন অংশে আটকে রয়েছেন।
সোমবার সিমলা-কালকা রেলপথে ভূমিধসের ঘটনা ঘটে, যার কারণে মঙ্গলবার পর্যন্ত ট্রেন চলাচল স্থগিত করা হয়। হিমাচল প্রদেশ জুড়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলি সোমবার এবং মঙ্গলবার বন্ধ রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সিমলা শহর থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে সিমলা-কালকা জাতীয় সড়ক পুরোপুরি বন্ধ। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বৃষ্টির কারণে জেলার ১২০ টির বেশি সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
পাঞ্জাব ও হরিয়ানার অনেক জায়গায় ভারী বৃষ্টিপাত অব্যাহত। বর্তমান পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে, পাঞ্জাব সরকার ১৩ জুলাই পর্যন্ত রাজ্যের স্কুলগুলি বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে। রাজস্থানে টানা বৃষ্টির জেরে জনজীবন পুরোপুরি বিপর্যস্ত। জয়পুরের বহু রাস্তা জলের তলায়। উত্তরাখণ্ডের বেশ কয়েকটি জেলায় দুই দিনের জন্য ভারী বৃষ্টির কমলা সতর্কতা জারি করা হয়েছে। হরিদ্বার, উধম সিং নগর, নৈনিতাল, চম্পাবত, পিথোরাগড়, বাগেশ্বর, আলমোড়া, পাউরি, দেরাদুন, তেহরি এবং চামোলির ১৩ জেলার মধ্যে ১১টিতে সোমবার ও মঙ্গলবার ভারী বৃষ্টির জন্য সতর্কতা জারি করা হয়ে। আজও সকাল থেকেই বৃষ্টিপাত শুরু হয়েছে। পাহাড়ে ভ্রমণ এড়াতে উত্তরাখণ্ড পুলিশ জনগণকে অনুরোধ করেছে। হরিদ্বারে, গঙ্গা নদীর জলস্তর ২৯২ মিটার রেকর্ড করা হয়েছিল, বিপদসীমার মাত্র দুই মিটার নীচে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সোমবার উত্তর ভারতে প্রবল বৃষ্টির বিপর্যয়ের মধ্যে সিনিয়র মন্ত্রী এবং কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিভিন্ন রাজ্যের সামগ্রিক পরিস্থিতি পর্যালোচনা করেছেন। পিএমও জানিয়েছে যে স্থানীয় প্রশাসন, এনডিআরএফ এবং এসডিআরএফ-এর দলগুলি ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করার জন্য কাজ করছেন। অত্যধিক বৃষ্টির কারণে মঙ্গলবার ভোরে উত্তরকাশী-গঙ্গোত্রী হাইওয়েতে ভুমিধসে চারজন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। এই অঞ্চলে অত্যধিক বৃষ্টির কারণে মঙ্গলবার ভোরে উত্তরকাশী-গঙ্গোত্রী হাইওয়েতে পাথরের ধাক্কায় তিনটি যানবাহন ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে অন্তত চারজন নিহত এবং বেশ কয়েকজন আহত হয়েছেন। রবিবার থেকে নাগাড়ে বৃষ্টিপাতের কারণবে হরিয়ানায় সাতজনের মৃত্যু হয়েছে এবং দুজন নিখোঁজ হয়েছেন।