ভারতের বিখ্যাত স্ট্যান্ড-আপ কমেডিয়ান রাজু শ্রীবাস্তব গতকালই প্রয়াত হয়েছেন। গত ১০ অগাস্ট ওয়ার্কআউট সেশন চলাকালীন তার হার্ট অ্যাটাক হয়। সেদিন তিনি যথারীতি ব্যায়াম করছিলেন। জানা গিয়েছে তিনি ট্রেডমিলে দৌড়ানোর সময় তিনি বুকে ব্যথা অনুভব করেন। ট্রেডমিল এমন একটি মেশিন যা আপনি এটি প্রতিটি ফিটনেস সেন্টারেই দেখতে পাবেন। আপনার দৌড়ানোর গতি কত, কত সময় আপনি দৌড়াচ্ছেন, সবকিছুই আপনি এই মেশিনের মাধ্যমে জানতে পারবেন। তবে জিম করাকালীন রাজু কত গতিতে বা কতক্ষণ দৌড়াছিলেন তা জানা যায়নি। সেই সময়েই তিনি বুকে ব্যথা অনুভব করেন এবং পরে জানা যায় যে তার হার্ট অ্যাটাক হয়েছে। সেই থেকেই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি।
শুধু রাজু নয়, এর আগেও টিভি অভিনেতা সিদ্ধার্থ শুক্লা এবং দক্ষিণ ভারতীয় অভিনেতা পুনিত রাজকুমারও হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তাঁর সম্পর্কেও একই কথা বলা হচ্ছিল যে তিনিও ওয়ার্ক আউট সেশনেই অসুস্থ হয়ে পড়েন। আপনি যদি লক্ষ্য করেন, দেখবেন যে তাদের প্রত্যেকের ক্ষেত্রেই বয়স খুব বেশি ছিল না। তবে কেন ওয়ার্ক আউট সেশনে থাকার সময়ই হার্ট অ্যাটাকের ঘটনা বেশি করে সামনে আসছে?
গবেষণায় দাবি করা হয়েছে যে হৃদরোগের সমস্যা কমাতে সব মানুষেরই নিয়মিত ব্যায়াম করা উচিত। এমতবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে যে জিম করার সময় কেন হার্ট অ্যাটাকের ঘটনা বাড়ছে?
জিমের সময় হার্ট অ্যাটাক কেন হচ্ছে তা জানতে আমরা সরাসরি কথা বলেছিলাম বিখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ অতীন বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে। চিকিৎসকের কথায়, “হার্ট অ্যাটাকের অনেক কারণ থাকতে পারে। জিম চলাকালীন হার্ট অ্যাটাকের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে যে আক্রান্ত ব্যক্তির ইতিমধ্যে হৃদরোগের ইতিহাস রয়েছে এবং সেই নিয়েই তিনি দীর্ঘসময় কঠোর শারীরিক পরিশ্রম করে চলেছেন। এছাড়াও ধূমপান-স্টেরয়েডের অধিক ব্যবহারের কারণেও অনেকেই হার্ট অ্যাটাকের শিকার হতে পারেন। অনেক সময় সাধারণত আমরা এই বিষয়গুলিতে মনোযোগ দিই না তবে এগুলো আমাদের গুরুতর সমস্যা সৃষ্টি করে। এমনকী মৃত্যুর দিকেও ঠেলে দিতে পারে”।
আরও পড়ুন : < সংক্রামক রোগের পাশাপাশি আতঙ্ক বাড়াচ্ছে ‘নন-কমিউনিকেবল ডিজিজেস’, আজই সাবধান হোন! >
ডাঃ বন্দোপাধ্যায় বলেন, “ যারা প্রায়ই জিমে যান তারা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব শরীর গঠনের জন্য প্রোটিন পাউডারের নামে অজান্তে স্টেরয়েড খাওয়া শুরু করেন। গবেষণায় দেখা যায় যে অল্প সময়ের জন্যও স্টেরয়েড গ্রহণ করলে হৃদপিণ্ডের স্থায়ী ক্ষতি হতে পারে। আপনি যদি দীর্ঘ সময় ধরে স্টেরয়েড ব্যবহার করেন, তাহলে আপনার অন্যান্য মানুষের তুলনায় গুরুতর হৃদরোগের ঝুঁকি অনেক বেশি হতে পারে। তরুণদের মধ্যে দ্রুত ক্রমবর্ধমান হার্ট অ্যাটাকের একটি বড় কারণ হিসেবে দেখা হচ্ছে”।
স্টেরয়েডের পাশাপাশি ধূমপানের অভ্যাস হার্ট ও ফুসফুসের স্বাস্থ্যেরও মারাত্মক ক্ষতি করে। ধূমপানের কারণে করোনারি ধমনী সরু হয়ে যায়, যার ফলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হৃদপিন্ডও ধীরে ধীরে দুর্বল হয়ে পড়ে। হার্টে রক্ত চলাচল কমে গেলে হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ে। এর উপর, আপনি যদি জিমে গিয়ে অতিরিক্ত পরিশ্রম করেন, তাহলে হার্টের উপর চাপ আরও বেড়ে যায়। এ কারণেও হার্ট অ্যাটাকের সমস্যা দেখা যাচ্ছে বেশিরভাগ তরুণদের মধ্যে।
জিমে কী কী বিষয় মাথায় রাখতে হবে
হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ সৌম্যজিত গুহ বলেন, হার্টকে সুস্থ রাখতে ব্যায়াম অবশ্যই প্রয়োজন, তবে আপনার যদি আগে থেকেই হার্ট সংক্রান্ত কোন ধরনের সমস্যা থাকে, তাহলে চিকিৎসকের পরামর্শে ঘরে বসেই ব্যায়াম করা একটি ভালো বিকল্প হতে পারে।
পাশাপাশি ট্রেনার ছাড়া জিমে ব্যায়াম করবেন না। জিমে যথাযথ বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা রয়েছে এটা এটা নিশ্চিত করা দরকার। এর কারণেও হার্টের সমস্যা হতে পারে। হার্টকে সুস্থ রাখতে যেকোন ধরনের স্টেরয়েড বা ধূমপানের মতো অভ্যাস এড়িয়ে চলা