রাজকোটে গেমিং জ়োনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে কমপক্ষে ৯ শিশু সহ ২৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার রাতভর চলে উদ্ধারকাজ। রবিবার সকালেও উদ্ধার অভিযান চলছে।
Advertisment
মেঝেতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে রয়েছে চাপ চাপ রক্ত! ভিতরে চামড়া পোড়ার গন্ধ। এলোমেলো ভাবে পড়ে রয়েছে জুতো-চটি! এক অগ্নিকাণ্ড গ্রাস করেছে ২৭টি তরতাজা প্রাণ। পুলিশ ও দমকলকর্মীদের আশঙ্কা, ভিতরে আরও কয়েকজন আটকে থাকতে পারেন। তাই এখনও জারি রয়েছে উদ্ধারঅভিযান। তবে তাদের বাঁচার আশা প্রায় নেই বলেই আশঙ্কা প্রশাসনের। আগুন কীভাবে এতটা ভয়াবহ আকার নিল কীভাবে?
শনিবার বিকেল সাড়ে চারটে নাগাদ রাজকোটের গেমিং জ়োনে আগুন লাগার খবর পাওয়া মাত্রই সঙ্গে সঙ্গেই ঘটনাস্থলে পৌঁছয় দমকল ও পুলিশ। কিন্তু, আগুন নিয়ন্ত্রণে আসার বদলে যতই সময় বাড়তে থাকে আগুন আরও ছড়িয়ে পড়ে। রাত পর্যন্ত চেষ্টা করেও আগুন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনতে পারেনি দমকল বিভাগ। পুলিশের তরফে গেমিং জ়োনের মালিক সহ তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
Advertisment
আদৌ কী এই গেমিং জোনে ছিল কোন এনওসি? উঠেছে সেই প্রশ্নও। যথাযথ অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল না ওই গেমিং জোনের। সামনে এসেছে এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য।
এদিকে রাজকোটের গেমিং জোনে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, প্রাক্তন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী সহ বহু রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব শোক প্রকাশ করেছেন। রাজ্য সরকার অগ্নিকাণ্ডের তদন্তের জন্য পাঁচ সদস্যের সিট গঠন করেছে। তিন দিনের মধ্যে ঘটনার রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।
শনিবার বিকেল ভয়াবহ এক অগ্নিকাণ্ড কেড়ে নিয়েছে ২৭টি তরতাজা প্রাণ। দুর্ঘটনায় নিহতদের মধ্যে রয়েছে বেশ কয়েকজন শিশুও। বর্তমানে ঘটনার তদন্তভার এসআইটির হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। তবে গুজরাটে এমন দুর্ঘটনা যে এই প্রথম ঘটল তা নয়। গত কয়েক বছরে, গুজরাট দেশের সবচেয়ে বিপজ্জনক কিছু দুর্ঘটনার সাক্ষী থেকেছে যাতে শ'য়ে শ'য়ে মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
গুজরাটের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হর্ষ সাঙ্ঘভি রবিবার সকালে বলেছেন, 'দুর্ঘটনার খবর পাওয়ার সাত মিনিটের মধ্যেই সেখানে হাজির হয় দমকলের একাধিক অঞ্জিন। ততক্ষণে গোটা গেমিং জোন আগুনের গ্রাসে চলে যায়'। মৃতদেহগুলি এমন ভাবে ঝলসে গিয়েছে যে দেখে শনাক্ত করার উপায় নেই। নিহতদের ডিএনএ টেস্টের জন্য মৃতদেহগুলি রাতারাতি গান্ধীনগরের ফরেনসিক সায়েন্স ল্যাবরেটরিতে (এফএসএল) পাঠানো হয়েছে'।
(নির্মল হরিন্দ্রনের এক্সপ্রেস ছবি)
এর আগে মোরবি সেতু দুর্ঘটনায় রাজ্যে প্রায় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়। এই ধরণের দুর্ঘটনার পেছনে কোথাও না কোথাও প্রশাসনের গাফিলতি বারে বারে সামনে উঠে এলেও পরিস্থিতির খুব একটা বদল হয়নি।
রাজকোটের এসিপি বিনায়ক প্যাটেল জানিয়েছেন, নিহতদের মধ্যে ১২ বছরের কম বয়সী চারজন শিশু রয়েছে। শনিবার ও গ্রীষ্মের ছুটির কারণে আরও বেশি সংখ্যায় শিশুরা তাদের অভিভাবকদের সঙ্গে গেমিং জোনে হাজির ছিলেন। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, অগ্নিকাণ্ডের পর জেনারেটরের জন্য রাখা ডিজেলের ক্যান এবং গো কার রেসিংয়ের জন্য রাখা পেট্রোলের কারণে আগুন আরও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।
রাজকোটের এই দুর্ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র প্যাটেল ঘোষণা করেছেন যে দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ হিসাবে ৪ লক্ষ টাকা করে দেওয়া হবে। পাশাপাশি আহতদের ৫০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণের ঘোষণা করা হয়েছে। দুর্ঘটনার পর গেমিং জোনের ম্যানেজার ও মালিককে আটক করেছে পুলিশ।