Advertisment

গর্ভগৃহে ঠাঁই কার হাতে তৈরি রামলালার মূর্তি? রাম মন্দির উদ্বোধনের আগে চর্চা বিস্তর

অরুণ যোগীরাজ ৫১ ইঞ্চি মূর্তি খোদাই করতে শ্যাম শিলা বা নীল-কালো পাথর ব্যবহার করেছিলেন।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Arun Yogiraj Ram Lalla

ভাস্কর অরুণ যোগীরাজ, যার ভগবান রামের মূর্তি অযোধ্যার শ্রী রাম জন্মভূমিতে স্থাপনের জন্য নির্বাচিত হয়েছে। (পিটিআই ছবি)

মাত্র পাঁচ মিনিটের কথোপকথন, তার পর সারাদিন ফোন বন্ধ। প্রতিমা নির্বাচনের খবর অরুণ যোগীরাজের জীবন কতটা বদলে দেয়? এ বিষয়ে অরুণ যোগীরাজের স্ত্রী বিজয়া বলেন, 'তিনি সংবাদ মাধ্যমের মাধ্যমে এই খবর জানতে পেরেছেন। এই খবরে খুশি পুরো পরিবার'।

Advertisment

বর্তমানে দেশের সবচেয়ে বড় ইস্যু রাম মন্দির। রাম মন্দির উদ্বোধন নিয়ে দেশের সর্বত্র আলোচনা হচ্ছে। এদিকে, কর্ণাটকের প্রবীণ মূর্তি প্রস্তুতকারক অরুণ যোগীরাজের হাতে তৈরি মূর্তি রাম মন্দিরের জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে বলেই জানা গিয়েছে। এই খবর প্রকাশ্যে আসতেই প্রতিমাশিল্পী অরুণকে নিয়ে সর্বত্র আলোচনা চলছে। এ বিষয়ে তার স্ত্রী বিজয়ার জানান, 'এই খবর সামনে আসার পর তাঁর স্বামীর জীবনে আমূল বদল এনেছে'।

অরুণ যোগীরাজের স্ত্রী বিজয়া জানান, 'তার স্বামীকে এই বিষয়ে এখনি মুখ না খোলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়াও, তাঁকে রামের মূর্তি সংক্রান্ত কোনও প্রশ্নের উত্তর দিতেও বারণ করা হয়েছে'। তিনি বলেন, 'রাম মন্দিরে অরুণের তৈরি মূর্তি স্থাপনের খবর প্রকাশ্যে আসার পর তার জীবন সম্পূর্ণ বদলে গেছে। তিনি আমার সঙ্গে, বাচ্চাদের এবং পুরো পরিবারের সঙ্গে দিনে মাত্র পাঁচ মিনিট কথা বলেন। এরপর দিনভর তার ফোন বন্ধ থাকে। আসলে, তিনি ক্রমাগত কল পাচ্ছেন, যার কারণে তার কাজেও বিঘ্ন ঘটছে'।

অরুণ যোগীরাজের স্ত্রী বিজয়া তাঁর স্বামীর এই কৃতিত্ব সংবাদ মাধ্যমের কাছ থেকেই জানতে পারেন। তিনি বলেন, 'এই খবর পাওয়ার পর আমার সঙ্গে সঙ্গে খুশি গোটা পরিবার। সরকার বা প্রশাসনের পক্ষ থেকেও এ বিষয়ে এখনও নিশ্চিত করা হয়নি। একই সঙ্গে অরুণও এ বিষয়ে কিছু জানাননি'।

অরুণ এই প্রথম মূর্তি খোদাইয়ের কাজ করছেন না। তার পরিবার পাঁচ প্রজন্ম ধরে প্রতিমা খোদাইয়ের কাজ করে আসছে। অরুণের বাবা যোগীরাজও একজন দক্ষ প্রতিমাশিল্পী। অরুণ এমবিএ পাস। এর আগে তিনি একটি বেসরকারি সংস্থায় কাজ করতেন, কিন্তু ২০০৮ সালে তিনি চাকরি ছেড়ে দিয়ে তার পৈতৃক ব্যবসা অর্থাৎ মূর্তি খোদাই করা শুরু করেন।

ইন্ডিয়া গেটে সুভাষ চন্দ্র বসুর ৩০ ফুট উঁচু মূর্তিও তৈরি করেছেন অরুণ যোগীরাজ। আসলে, নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর এই মূর্তিটি ৮ সেপ্টেম্বর ২০২২-এ প্রধানমন্ত্রী মোদী নিজেই উন্মোচন করেছিলেন। এর আগে, এই মূর্তির জায়গায়, প্রধানমন্ত্রী মোদী ২৩ জানুয়ারি ইন্ডিয়া গেটে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর 'হলোগ্রাম মূর্তি' উন্মোচন করেছিলেন।

কর্ণাটকের বিখ্যাত প্রতিমাশিল্পী অরুণ যোগীরাজের তৈরি রাম লালার মূর্তি অযোধ্যার রাম মন্দিরে বসতে চলেছে। ২২ জানুয়ারি রাম মন্দির উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। প্রখ্যাত ভাস্কর্য শিল্পী অরুণ যোগীরাজ ৬ মাসের কঠোর পরিশ্রমে এই মূর্তি তৈরি করেছেন। এই মূর্তি অযোধ্যার রাম মন্দিরে স্থাপন করা হবে।

ট্রাস্টের একটি সূত্র জানায়, গত বছরের মে মাসে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রায় আটজন শিল্পীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, যাদের মধ্যে তিনজন নির্দিষ্ট শর্তে কাজ করতে রাজি হয়েছেন। অরুণ যোগীরাজ এমন একটি পরিবার থেকে এসেছেন যারা পাঁচ প্রজন্ম ধরে মূর্তি তৈরি করে আসছেন। অতীতে, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও তার কাজের প্রশংসা করেছেন।

যোগীরাজের স্ত্রী বিজয়া অরুণ দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে জানিয়েছেন, “আমি বা আমার স্বামী কেউই কোনও আনুষ্ঠানিক নিশ্চিতকরণ পাইনি তবে আমরা মূর্তি নির্বাচন সম্পর্কে সোশ্যাল মিডিয়া থেকে জানতে পেরেছি। আমার স্বামী গত ছয় মাস ধরে কঠোর পরিশ্রম করে অযোধ্যায় কাজ করে চলেছে"।

শ্বেত 'রাম ভাস্কর্য' করেছেন সত্যনারায়ণ পান্ডে, যাকে তার দুই ছেলে প্রশান্ত এবং পুনীত সাহায্য করেছিলেন। “এটি একটি বিরল মাকরানা মার্বেলের তৈরি। প্রশান্ত পান্ডে বলেছেন, " আমাদের পরিবার ৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মূর্তি তৈরির সঙ্গে যুক্ত। আমরা এখন বিশ্বাস করি যে এই বিরল মূর্তিটি রাম মন্দিরের জন্য বেছে নেওয়া হবে"।

২২ জানুয়ারি অযোধ্যায় রাম মন্দিরের উদ্বোধন। এর জন্য গত কয়েক মাসে রামলালার তিনটি মূর্তি খোদাই করা হয়েছে। এই মূর্তিগুলির মধ্যে কোনটি মন্দিরে বসবে সে বিষয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি রাম মন্দির ট্রাস্ট। মঙ্গলবার (২ জানুয়ারি) ট্রাস্টের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা এ তথ্য জানান।

উল্লেখ্য ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) নেতা এবং কর্ণাটকের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বি এস ইয়েদিউরপ্পা সোমবার (১ জানুয়ারি) রাজ্যের প্রখ্যাত শিল্পী অরুণ যোগীরাজকে অভিনন্দন জানিয়েছেন এবং বলেছেন যে তাঁর মূর্তিটি অযোধ্যার নতুন মন্দিরে পবিত্র করার জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে। তবে মন্দির নির্মাণকারী রাম জন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্ট এবিষয়ে তাদের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেনি।

ট্রাস্টের আধিকারিকরা জানিয়েছেন যে শঙ্করাচার্য বিজয়েন্দ্র সরস্বতী এবং অন্যান্য সাধুদের সাথে পরামর্শ করে ট্রাস্ট এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। ট্রাস্টের কর্মকর্তারা বলছেন, পুরোনো মূর্তিটি উৎসবের জন্য প্রাঙ্গণে রাখা হবে। তিনজন শিল্পী বিভিন্ন পাথর দিয়ে প্রভূ রামের মূর্তি খোদাই করেছেন। তাদের মধ্যে দুটির জন্য পাথর এসেছে কর্ণাটক থেকে এবং তৃতীয় মূর্তিটি রাজস্থান থেকে আনা পাথর দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে। এই মূর্তিগুলি খোদাই করেছেন জয়পুরের ভাস্কর সত্যনারায়ণ পান্ডে এবং কর্ণাটকের গণেশ ভাট এবং অরুণ যোগীরাজ।

যোগীরাজ বলেছিলেন যে তিনি যে মূর্তিটি তৈরি করেছিলেন তা রামমন্দির ট্রাস্ট বেছে নিয়েছে কিনা সে সম্পর্কে তিনি এখনও কোনও আনুষ্ঠানিক তথ্য পাননি। যোগীরাজ বলেন, 'আমি খুশি যে আমি দেশের তিনজন শিল্পীর মধ্যে ছিলাম যাঁদের 'রাম লালার' মূর্তি খোদাই করার জন্য নির্বাচিত করা হয়েছিল।

এর আগে, তিনি কেদারনাথে স্থাপিত আদি শঙ্করাচার্যের মূর্তি এবং দিল্লিতে ইন্ডিয়া গেটের কাছে স্থাপিত সুভাষ চন্দ্র বসুর মূর্তি তৈরি করেছিলেন। অন্য একটি সূত্র জানিয়েছে মকর সংক্রান্তি অর্থাৎ ১৪-১৫ জানুয়ারির মধ্যে ট্রাস্টের তরফে রাম লালার মূর্তির বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত ঘোষণা করা হতে পারে।

Ram Temple
Advertisment