Advertisment

রঞ্জন গগৈয়ের প্রজ্ঞা রাজ্যসভায় বিতর্কের মান বাড়াবে

কোনও প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি যদি কোনও দলের সঙ্গে যুক্ত না থেকে রাজ্যসভায় মনোনীত হন, তাঁর প্রবল বীক্ষা ও অভিজ্ঞতা উচ্চ কক্ষের বিতর্কের মান বাড়াবে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Ravi Shankar Prasad

রবি শংকর প্রসাদ

রঞ্জন গগৈয়ের রাজ্যসভায় মনোনয়ন নিয়ে যত বিতর্ক হয়েছে, সব উড়িয়ে দিলেন কেন্দ্রীয় আইন ও বিচারমন্ত্রী রবিশংকর প্রসাদ। লিজ ম্যাথিউয়ের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎকারের সংক্ষিপ্তসার।

Advertisment

মাত্র চার মাসের কম সময় আগে অবসরপ্রাপ্ত সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈকে রাজ্যসভায় মনোনীত করবার কারণ কী হতে পারে?

প্রথমত, ওঁকে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের বিভাগে মনোনীত করা হয়েছে, যে বিভাগে এর আগে রাজ্যসভায় মনোনীত হয়েছেন এম এস স্বামীনাথন, রাজা রামান্না, এমজিকে মেননের মত বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বরা। এর একটা ঐতিহ্য রয়েছে। কুলদীপ নায়ার, এইচ কে দুয়া, শোভনা ভারতীয়া প্রমুখ সাংবাদিকরাও তালিকায় রয়েছেন। আমি একটু ইতিহাস বলি। ১৯৫২-৫৩ সালে জওহরলাল নেহরু ওড়িশার রাজ্যপাল হিসেবে বিচারপতি ফজল আলিকে নিযুক্ত করেন। ভরতীয় বিচারব্যবস্থার আইকনিক চরিত্র হিসেবে পরিচিত মহম্মদ আলি করিম চাংলা, যিনি ১১ বছর বম্বে হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি ছিলেন, তাঁকে আমেরিকার ভারতীয় দূতের কাজের অফার দেওয়া হয়। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সেরা দূতদের অন্যতম, ব্রিটেনের হাই কমিশনার এবং পরে মানব সম্পদ উন্নয়ন ও বিদেশমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। এর পর কোকা সুব্বা রাও। তিনি দেশের প্রধান বিচারপতি ছিলেন। তিনি জাকির হুসেনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপতি পদের জন্য লড়েছিলেন। এতে কি বিচারবিভাগের স্বাধীনতা নষ্ট হয়েছে? কিচ্ছু হয়নি।

শ্রী রঞ্জন গগৈ, সাংসদ

আসল ঘটনা ঘটে ১৯৭০-এ ইন্দিরা গান্ধী ক্ষমতায় আসবার পর। তাঁর কাছে ভাল মতন সংখ্যাগরিষ্ঠতা ছিল। তিনি প্রথমে কে এস হেগড়ে, এ এন গ্রোভার, মণিলাল শেলাতের মত সিনিয়র বিচারপতিদের চেপে দিলেন। এ এন রায় হলেন প্রধান বিচারপতি। তাঁর প্রথম কাজ হল কেশবানন্দ ভারতী মামলা খারিজ করা। এটা হল বিচারবিভাগের সঙ্গে আপস।

এর পর জরুরি অবস্থা এল, বিচারপতিরা বদলি হলেন। জরুরি অবস্থার সময়ে যে বিচারপতি এইচ আর খান্না স্বাধীনতার মর্যাদা রাখার চেষ্টা করেছিলেন, তাঁকে দু মাসের মধ্যে প্রধান বিচারপতি পদ দিতে অস্বীকার করা হল। এলেন কে! এম এইচ বেগ, যিনি পরে রাজীব গান্ধীর কাছে পদ্মভূষণ পাবেন। পরের ঘটনায় আসুন। বাহারুল ইসলাম ছিলেন রাজ্য সভার কংগ্রেস সদস্য। তিনি আসাম বিধানসভায় লড়তে গিয়ে পরাস্ত হন। ১৯৭২ সালে তাকে হাইকোর্টের বিচারপতি করা হয়, ১৯৮০ সালে তিনি অবসর নেন। ইন্দিরা গান্ধী ৮০ সালে ক্ষমতায় ফেরার পর, তাঁকে অবসর থেকে তুলে এনে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি করা হয় এবং তিনি বেশ কয়েকটি প্রশ্নবোধক রায় দেন, যার মধ্যে রয়েছে জগন্নাথ মিশ্রের সমবায় কেলেংকারির মামলা। এর পর তিনি পদত্যাগ করেন এবং রাজ্যসভায় যান। রঙ্গনাথ মিশ্রের কথা ধরুন। শিখ গণহত্যা নিয়ে গঠিত কমিশনের তিনি শীর্ষে ছিলেন এবে তাঁর রিপোর্ট নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। তিনি প্রধান বিচারপতি হলেন। অবসরের পর তিনি জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান হন এবং শিখ দাঙ্গায় কংগ্রেসকে মুক্ত করে দেন। এরপর তিনি কংগ্রেসে যোগ দিয়ে রাজ্যসভায় আসেন।

বিচারপতিরা নির্বাচনের মাধ্যমে রাজনীতিতে এসেছেন, মনোনয়নের মাধ্যমে এসেছেন, রাজ্যপাল হয়েছেন, কিন্তু প্রতিষ্ঠানের বিশ্বাসযোগ্যতা কখনও নষ্ট হয়নি। পরিপ্রেক্ষিতটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

রঞ্জন গগৈয়ের ক্ষেত্রে নির্ণায়ক কী ছিল?

এটা তো রাষ্ট্রপতির ব্যাপার, যে ব্যাপারে তাঁকে বিশ্বাস করতে হবে। রাষ্ট্রপতি নিশ্চিতভাবেই পরামর্শ করে সিদ্ধান্ত নেন। কোনও প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি যদি কোনও দলের সঙ্গে যুক্ত না থেকে রাজ্যসভায় মনোনীত হন, তাঁর প্রবল বীক্ষা ও অভিজ্ঞতা উচ্চ কক্ষের বিতর্কের মান বাড়াবে।

এদিক থেকে আমি আপনাকে প্রশ্ন করি। যদি একজন সম্পাদককে মনোনীত করা হয় - দুজন সম্পাদককে মনোনীত করা হয়েছে, কুলদীপ নায়ার ও এইচ কে দুয়া। তার মানে কি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে?  ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের স্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ হয়েছে! একজন সংবাদপত্রের মালিক শোভনা ভারতীয়াকে মনোনীত করা হয়েছে। তার মানে কি তাঁর কাগজ সমালোচনা বন্ধ করে দিয়েছে? না।

সরকার এ সিদ্ধান্তে কীভাবে পৌঁছল? কে সিদ্ধান্ত নিলেন? আপনি জানতেন?

আমি এ নিয়ে মন্তব্য করব না।

কিন্তু বিজেপি এমন একটা দল যারা এ ধরনের পদক্ষেপের জন্য কংগ্রেসের সমালোচনা করে এসেছে সর্বদা! এখানে তফাৎ আর কী রইল?

এ সরকারের নেতৃ্ত্বে য়েছেন নরেন্দ্র মোদী। রাজনাথ সিং, ভেঙ্কাইয়া নাইডু, প্রয়াত সুষমা স্বরাজ, অরুণ জেটলির মত নেতা-নেত্রীরা জরুরি অবস্থার বিরুদ্ধে লড়েছেন। আমরা স্বাধীনতার জন্য সংগ্রাম করেছি, ব্যক্তিগত স্বাধীনতা, বিচারবিভাগের স্বাধীনতা, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা। আমাদের দয়া করে শেখাতে আসবেন না। এটাই আমাদের অঙ্গীকার এবং আমাদের স্ট্যান্ডার্ড।

বিচারপতি রঞ্জন গগৈ রাফাল, এনআরসি এবং রামমন্দিরের মত রাজনৈতিক সংবেদনশীল বেশ কিছু মামলায় রায় দিয়েছেন, যে রায় বিজেপির পছন্দের। এ অবস্থায় তাঁকে মনোনয়ন দেওয়ার অর্থ নাগরিকদের মনে সন্দেহের বাতাবরণ তৈরি করা নয়?

আপনারা কি সুব্বারাও থেকে চাগলার ক্ষেত্রে এরকম বলেছিলেন! বাহারুল ইসলাম বা রঙ্গনাথ মিশ্রের ক্ষেত্রে এটাই কারণ ছিল! এখন এ তর্ক করে কী হবে? জরুরি অবস্থা খারাপ একটা সময় ছিল। কংগ্রেসের কোনও মুখ নেই।

এই রায়গুলো মেরিট দিয়ে দেখতে হবে। তথ্য প্রমাণ আনার সাপেক্ষে সেগুলো কি ভাল রায় ছিল? রাম লালার একজন প্রাক্তন আইনজীবী হিসেবে আমি নিশ্চিত জানি, যে কোনও নিরপেক্ষ আদালতে এর চেয়ে ভাল রায় হতে পারত না। দুর্ভাগ্যজনক ভাবে এখন একটা ট্রেন্ড হয়েছে কিছু লোক সুপ্রিম কোর্টের করিডোর দিয়ে দেশের রাজনীতি নিয়্ন্ত্রণ করতে চায়। এরা ভারতের মানুষের হাতে পরাজিত হয়েছে। যখনই কোনও রায় তাদের মনোমত না হবে, এরা বলবে ন্যায় হয়নি।

প্রাক্তন বিচারপতিরা, যাঁরা গগৈয়ের সঙ্গে কলেজিয়ামে একযোগে সরকারি হস্তক্ষেপের অভিযোগ এনেছিলেন, তাঁরা তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন এবং বলেছেন এর ফলে বিচারবিভাগের স্বাধীনতা খর্ব হল। এ ব্যাপারে আপনার মত...

অনেক বিচারপতি রয়েছেন, এবং অনেক বিচারপতি রয়েছেন। আমি কোনও প্রাক্তন বিচারপতির সঙ্গে কোনও ইস্যুতে যোগ দিতে চাই না শুধু এ কথা বলা ছাড়া যে অনেক বিচারপতি রয়েছেন, অনেক বিচারপতি।

অ্যাটর্নি জেনারেল এম এস শেতলবাদের নেতৃত্বাধীন প্রথম আইন কমিশনের রিপোর্টে প্রস্তাব করা হয়েছিল ক্যাগের মত, বিচারপতিদের বিভিন্ন পদ থেকে  ?

এটা বৃহত্তর ইস্যু। তাঁদের একটা যুক্তি ছিল। আমি আইন কমিশনের রিপোর্টকে শ্রদ্ধা করি। কিন্তু বিচারপতিদের অবসরগ্রহণের পর তাঁদের কোনও নিয়োগ করা উচিত কিনা এ বিষয়টা সামগ্রিক ভাবে বিচার করা উচিত। এর মধ্যে ট্রাইবুনাল, অনেক কমিশন, এবং অনেক আরবিট্রেশনও পড়বে। সরকার যখন একটি পক্ষ, তখন তাহলে আরবিট্রেটরও হওয়া উচিত নয়।

Ranjan Gogoi
Advertisment