সংবিধানের মৌলিক কাঠামো নিয়ে প্রাক্তন CJI রঞ্জন গগৈয়ের মন্তব্যকে হাতিয়ার, কপিল সিব্বলের জবার কী বলেছেন প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড়?
আর্টিকাল ৩৭০ ধারার শুনানি চলাকালীন সময় ভারতের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চের সামনে সিনিয়র আইনজীবী কপিল সিবাল উল্লেখ করেন সোমবার সংসদে দেশের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের মন্তব্যকে।
ভারতের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈয়ের রাজ্যসভায় করা মন্তব্যকেই সুপ্রিম কোর্টে তুলে ধরেন সিনিয়ার আইনজীবী কপিল সিব্বল। সোমবার রাজ্যসভায় প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ দিল্লি পরিষেবা সংবিধানের মৌলিক কাঠামো লঙ্ঘন করে কি না, সেই প্রশ্ন তোলেন। তিনি একই সঙ্গে ভারতের প্রাক্তন সলিসিটর জেনারেল তেহমতান আর আন্ধ্যারুজিনার লেখা একটি বইয়ের প্রসঙ্গ টেনে এনে বলেন, বইয়ের লেখা অনুসারে আমার মনে হয়েছে, ‘সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর যে আইনশাস্ত্রের ওপর ভিত্তি করে রয়েছে, তা বিতর্কিত’।
৩৭০ ধারার সাংবিধানিক বেঞ্চের শুনানির সময় ভারতের প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চের সামনে সিনিয়র আইনজীবী কপিল সিবাল সোমবারের এই বিষয়টি উল্লেখ করেছিলেন। সিবাল মন্তব্য করেন, "আপনার একজন সম্মানিত সহকর্মী সংবিধানের মৌলিক কাঠামো তত্ত্বও সন্দেহজনক।" জবাবে CJI চন্দ্রচূড় বলেন, ‘অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিদের মতামত ব্যক্তিগত, বাধ্যতামূলক আদেশ নয়”।
এর সঙ্গেই প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় জবাব দেন, "যদি আপনি একজন সহকর্মীকেই উল্লেখ করেন, তাহলে আপনাকে সবসময় বর্তমান সহকর্মীকেই উল্লেখ করতে হবে। একজন বিচারপতি অবসর নিলে তার মন্তব্য মতামতে পরিণত হয়, বাধ্যতামূলক আদেশ নয়।"
এর প্রেক্ষিপ্তে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা বলেছেন, "আদালতে কী ঘটে তা নিয়ে যেমন সংসদ আলোচনা করে না, তেমনই সংসদে কী ঘটছে তা নিয়েও আদালতে আলোচনা না করাই উচিত। প্রত্যেকেরই বাক ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা আছে।"
ভারতের প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি (সিজেআই) এবং মনোনীত রাজ্যসভার সাংসদ রঞ্জন গগৈ সোমবার রাজ্যসভায় এনসিটি দিল্লি সরকার (সংশোধন) বিল, 2023-এর সমর্থন করার সময় বিলটি সংবিধানের মৌলিক কাঠামো লঙ্ঘন করে এমন উদ্বেগকে প্রকাশ করে, কেশবানন্দ ভারতী মামলায় ভারতের প্রাক্তন সলিসিটর জেনারেল (এসজিআই) টিআর অন্ধ্যরুজিনার একটি বইয়ের উল্লেখ করে বলেন, ‘সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর যে আইনশাস্ত্রের ওপর ভিত্তি করে রয়েছে, তা বিতর্কিত’। প্রাক্তন বিচারপতি গগৈ সংসদে তার প্রথম বক্তৃতা শেষে বলেন, আর্টিকাল 239AA সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করা হয়নি। তাই বিলটি সম্পূর্ণ বৈধ বলে তিনি যুক্তি দেন।
মামলায় সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করার কেন্দ্রের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে পিটিশনে বলা হয়েছে ৩৭০ ধারা বাতিল যার ফলে জম্মু ও কাশ্মীরকে আগে দেওয়া বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহার করা হয়েছে। মামলার পিটিশনকারীদের যুক্তি হল যে এটি বাতিল করা যুক্তরাষ্ট্রীয় নীতিকে লঙ্ঘন করে, যা সংবিধানের মৌলিক কাঠামোর অংশ হিসাবে বিবেচিত হয়।
দিল্লি পরিষেবা বিলের পক্ষে প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি (সিজেআই) এবং মনোনীত রাজ্যসভার সদস্য রঞ্জন গগৈ-এর মন্তব্যে বিরোধী দলগুলি তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে। এদিকে, মঙ্গলবার যখন সিনিয়র আইনজীবী কপিল সিব্বল ৩৭০ শুনানির সময় গগৈয়ের মন্তব্য আদালতে উল্লেখ করেছিলেন, তখন ভারতের প্রধান বিচারপতি (সিজেআই) ডিওয়াই চন্দ্রচূড় বলেন, যে ‘এটি তার ব্যক্তিগত মতামত’।
কংগ্রেস সোমবার রাজ্যসভার সদস্য রঞ্জন গগৈয়ের সংবিধানের মৌলিক কাঠামো নিয়ে প্রশ্ন তোলাকে আশ্চর্যজনক বলে অভিহিত করেছে। দল প্রশ্ন করেছে যে এটাই কী তাহলে সংবিধানকে সম্পূর্ণভাবে ভেঙে ফেলা শুরু করার জন্য বিজেপির একটি চক্রান্ত?