গত ১২ নভেম্বর ভোরে উত্তরাখণ্ডের সিল্কিয়ারায় নির্মীয়মাণ সুড়ঙ্গে ধস নেমেছিল। তারপর অতিক্রান্ত প্রায় ১০ দিন। এখনও অক্ষত রয়েছেন আটকে পড়া ৪১ জন শ্রমিক। ইতিমধ্যেই সুড়ঙ্গের মধ্যে ৬ ইঞ্চি পাইপ ঢুকিয়ে খিচুড়ি, জল দেওয়া হয়েছে। কীভাবে শারীরিক ও মানসিকভাবে আটকে পড়া শ্রমিকরা এখনও সুস্থ আছেন? জানা গিয়েছে, ওই সুড়ঙ্গের ওই স্বল্প পরিসরেই হাঁটাহাটি করছেন শ্রমিকরা, প্রযুক্তির মাধ্যমে পরিবারের প্রিয়জনদের সঙ্গে কথা বলানো হচ্ছে তাঁদের।
আটকে পড়া শ্রমিকদের মানসিক স্বাস্থ্যের তত্ত্বাবধানে সরকার-নিযুক্ত মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডঃ অভিষেক শর্মা তাঁদের বাঁচে থাকার ইচ্ছাশক্তির উপর জোর দিচ্ছেন। দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে চিকিৎসক শর্মা বলেছেন, 'আমরা শ্রমিকদের সঙ্গে ক্রমাগত যোগাযোগ রেখেছি, মনোবল বজায় রাখার জন্য যোগব্যায়াম, হাঁটাচলা এবং তাঁদের মধ্যে কথোপকথনকে উৎসাহিত করছি। ভিতরে আটকে পড়াদের মধ্যে একজন গব্বর সিং নেগি, যিনি আগেও একই রকম অবস্থায় ছিলেন। তাদের মধ্যে গব্বরই সবচেয়ে বয়স্ক, গব্বর বলেছেন আটকে পড়াদের আত্মবিশ্বাস যথেষ্ট।'
এতদিন শ্রমিকরা ভাত, ছানা ও শুকনো ফল খেয়েই বেঁচে ছিলেন। কিন্তু সোমবার ৬ ইঞ্চি সাপ্লাই পাইপ ধ্বংসাবশেষের মধ্য সড়ঙ্গের মধ্যে প্রবেশ করানো হয়েছে। ওই পাইপের মাধ্যমেই শ্রমিকদের কাছে কলা, আপেলের টুকরো, ডালিয়া এবং খিচুড়ি সরবরাহ করা হয়েছে। এই খাবারে বদল আনার কথাও ভাবছে প্রশাসন।
খুব শিগগিরই আটকে পড়া শ্রমিকদের কাছে মোবাইল ফোন ও চার্জার পৌঁছে দেওয়া হতে পারে। প্রশাসন পাইপের মাধ্যমে ভিজ্যুয়াল সংযোগ স্থাপনের জন্য এন্ডোস্কোপিতে ব্যবহৃত ক্যামেরাও আনছে। প্রশানের কর্তারা জানিয়েছেন, আটকে পড়া শ্রমিকরা তাঁদের প্রাতঃকৃত্যর জন্য ওই সুড়ঙ্গের ধ্বংসাবশেষ থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরে একটি এলাকা নির্ধারণ করেছে।
আরও পড়ুন Premium: সোশ্যাল মিডিয়ায় অবাধ বিচরণ ভুয়ো লোন অ্যাপের, কীভাবে খপ্পড়ে পড়ছেন সাধারণ মানুষ?
প্রচণ্ড প্রতিকূল পরিস্থিতি সত্ত্বেও, শ্রমিকরা ভাগ্যবান যে সুড়ঙ্গের মধ্যে একটি প্রাকৃতিক জলের উৎস রয়েছে৷ ডাঃ শর্মা বলেছেন, 'সুড়ঙ্গে আটকে পড়া শ্রমিকরা ভাগ্যমান। ওখানে জলের যে উৎস রয়েছে সেখান থেকেই ওরা পানীয় এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাজের জন্য জল পেয়ে যাচ্ছে। তবে সুরক্ষার কারণে সুড়ঙ্গে ক্লোরিন ট্যাবলেট সরবরাহ করা হয়েছিল।'
সুড়ঙ্গের মধ্যে বিরাট ফাঁকা এলাকা রয়েছে। সেখানে প্রায় ২ কিলোমিটার জুড়ে হাঁটাহাটির জায়গা আছে। কয়েকদিন আগে, ওডিশা থেকে কয়েকজন সরকারি কর্মকর্তা যখন তাদের রাজ্যের পাঁচজন শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলতে আসেন, তখন তাদের জানানো হয়েছিল যে শর্মিকরা হাঁটার জন্য বেরিয়েছেন। তখন ওডিশাবাসী শ্রমিকার সুড়ঙ্গের অন্যপ্রান্তে ছিলেন।
ন্যাশনাল হাইওয়ে অ্যান্ড ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট কর্পোরেশন লিমিটেডের ডিরেক্টর আংশু মনীশ খালখো সুড়ঙ্গের মধ্যে প্রশাসনের সহায়তার বিশদ বিবরণ দিয়েছেন। তাঁর কথায়, 'আমরা প্রতি আধঘণ্টা অন্তর খাবার দিচ্ছি এবং প্রতি ২-৩ ঘণ্টায় যোগাযোগ বজায় রাখছি। বিভিন্ন রাজ্যের আধিকারিক, আত্মীয়স্বজন এবং চিকিৎসকরাও নিয়মিত ওদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন, আমাদের চ্যানেলের মাধ্যমে দ্বিমুখী যোগাযোগকে উৎসাহিত করা হচ্ছে।'
সুড়ঙ্গে বদ্ধ স্থান হওয়ায় সেখানে ঠান্ডা রয়েছে, তবে মশা সংক্রান্ত কোনও সমস্যা নেই। শ্রমিকদের স্নান বা পোশাক পরিবর্তনে কোন বিকল্প আছে? একজন প্রশানিক কর্তার কথায়, 'স্নান করা বা কাপড় পরিবর্তন সম্ভবত এখন আটকে পড়া শ্রমিকদের বিবেচনায় নেই।'