ইউক্রেনে আটকে পড়া ভারতীয় পড়ুয়াদের উদ্ধারের সবরকম ব্যবস্থা ইতিমধ্যেই সেরে ফেলেছে দিল্লি। কিন্তু অনেকক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছিল পড়ুয়ারা তাদের প্রিয় পোষ্যকে ছেড়ে একা বিমানে উঠতে রাজি হচ্ছিলেন না। এবার তাদের কথা ভেবে নয়া নির্দেশ জারি করল কেন্দ্র। নির্দেশে বলা হয়েছে এবার থেকে ইউক্রেন ফেরত কোনও পড়ুয়া সঙ্গের প্রিয় পোষ্যকে নিয়ে অনায়াসেই বিমানে উঠতে পারবেন। তাতে থাকবে না আর কোন বাধা। কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তে খুশির হাওয়া পড়ুয়াদের মধ্যে।
নির্দেশিকায় জানান হয়েছে, যুদ্ধবিধ্বস্ত ইউক্রেনের বিভিন্ন অংশে আটকে পড়া ভারতীয় পড়ুয়া এবং সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে জানানো হচ্ছে এবার থেকে ইউক্রেনে আটকে পড়া ভারতীয় পড়ুয়ারা তাঁদের সঙ্গে থাকা পোষ্যকে নিয়ে বিমানে উঠতে পারবেন। তবে সেক্ষেত্রে বেশ কিছু নিয়ম মানার কথা বলা হয়েছে যার মধ্যে রয়েছে পোষ্যটি কমপক্ষে একমাস বা তার বেশি সময় মালিকের সঙ্গে রয়েছে তা নিশ্চিত করতে হবে। সেই সঙ্গে পোষা প্রাণীর টিকাদানের শংসাপত্র/ বই/ টিকা দেওয়ার ইতিহাস ইত্যাদি বিষয়গুলি মেনে পোষ্য বিমানে উঠতে পারবে।
যদি টিকার শংসাপত্র না থাকে তবে পোষ্যকে ৩০ দিনের অ্যানিম্যাল কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। বুধবার এই মর্মে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে। প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে আর্য অলড্রিন ইউক্রেনে পড়ুয়া এক ভারতীয়কে রোমানিয়ার সীমান্তের কাছে একটি বাস তাঁকে নামিয়ে দেওয়ার পরে পাঁচ মাস বয়সী সাইবেরিয়ান পোষ্যকে নিয়ে তিনি প্রায় ২০ কিলোমিটার পথ পায়ে হেঁটেছিলেন। অন্য একটি ঘটনায় ঋষভ কৌশিকও প্রিয় পোষ্যকে ছাড়া ইউক্রেন ছেড়ে যেতে অস্বীকার করেছিলেন। কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তে স্বভাবতই খুশির হাওয়া ইউক্রেনের ভারতীয় পড়ুয়াদের মধ্যে।
গত বৃহস্পতিবার ইউক্রেনে হামলা করে রাশিয়া। তারা যদিও বলে ‘বিশেষ সেনা অভিযান’। সে সময় ইউক্রেনে আটকে ছিলেন প্রায় ১৬ হাজার ভারতীয়। এর পর থেকে ধীরে ধীরে সেদেশে আটকে পড়া ভারতীয়দের উদ্ধার করা হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১,৩০০ জনের বেশি নাগরিককে বিমানে চাপিয়ে দেশে ফেরানো হচ্ছে। তবু আটকে রয়েছেন হাজার হাজার। তাঁদের এবার নিরাপত্তা দেওয়ার আশ্বাস দিল রাশিয়া। জানাল ‘মানব করিডর’ করে ভারতীয় নাগরিকদের নিয়ে আসা হবে রাশিয়ায়।
বুধবার মস্কোর তরফে আশ্বাস দেওয়া হয়, খারকিভ, সুমি সহ ইউক্রেনের যুদ্ধবিধ্বস্ত অংশে আটকে পড়া ভারতীয়দের নিরাপদে রাশিয়ায় পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে। ভারতে নিযুক্ত রুশ রাষ্ট্রদূত ডেনিস আলিপোভ জানালেন, এই বিষয়ে দিল্লির সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে মস্কো। দ্রুত আটকে পড়া ভারতীয়দের ইউক্রেন থেকে বের করে আনা হবে। সেজন্য কোরিডোর তৈরি করা হচ্ছে। সেই নিয়েই এখন পরিকল্পনা চলছে।
আরও পড়ুন: যুদ্ধে সাত দিনে ১০ লক্ষ মানুষ ইউক্রেন ছেড়েছেন, ভয়ঙ্কর তথ্য রাষ্ট্রসংঘের
এদিকে টুইটারে ইউক্রেনের ভারতীয় দূতাবাস লিখেছে, এখনই খারকিভ ছাড়তে হবে ভারতীয় নাগরিকদের। তাঁদের সুরক্ষা এবং নিরাপত্তার জন্যই এই কাজ করতে হবে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব, পৌঁছতে হবে বাবায়ে, পেসোচিন এবং বেজলিউডোভকায়। ইউক্রেনীয় সময় সন্ধে ৬টার মধ্যে এই কাজ করতে হবে।
এও বলা হয়েছে, কোনও যানবাহন না পেলে পায়ে হেঁটে এই তিন জায়গায় পৌঁছতে হবে। পিসোচিনের দূরত্ব ১১ কিলোমিটার। বাবায়ের দূরত্ব খারকিভ থেকে ১২ কিমি। আর বেজলিউডোভকার দূরত্ব ১৬ কিলোমিটার। তার পরেই রীতিমতো আতঙ্ক ছড়িয়েছে খারকিভের ভারতীয়দের মধ্যে। প্রসঙ্গত, ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর হল এই খারকিভ। সবথেকে বেশি মেডিক্যাল কলেজ রয়েছে সেখানেই।