শুধুমাত্র সরকারী অর্থ বরাদ্দের উপর নির্ভর করলে ঋণ ও দেনার বোঝা বাড়বে, বেসরকারি পুঁজিকে ত্রিপুরা এবং উত্তর পূর্বে জায়গা করে দিন, পরামর্শ দিলেন পঞ্চদশ অর্থ কমিশনের চেয়ারম্যান নন্দ কিশোর সিং।
বুধবার আগরতলায় মহারাজা বীর বিক্রম কিশোর মানিক্য বিমানবন্দরে নন্দ কিশোর সিং-এর নেতৃত্বে অর্থ কমিশনের এক প্রতিনিধিদল ত্রিপুরায় আসেন। দুদিনের সফরে তাঁরা মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব, রাজ্য মন্ত্রিসভার সদস্য, উপজাতি স্বশাসিত জেলা পরিষদের কর্মকর্তা, বাণিজ্যিক মহল, রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিসহ রাজ্যের উন্নতির প্রয়োজনিয়তা নিয়ে সবার মতামত জানেন।
বৃহস্পতিবার এক সাংবাদিক সম্মেলনে সিং জানান, ত্রিপুরার বর্তমান রাজ্য সরকারের কাজকর্মে উন্নয়নের গতিমুখ ঊর্ধ্বগামী বলে তাঁরা মনে করছেন। তিনি আরও বলেন, ত্রিপুরার বিশেষ প্রয়োজনীয়তা ও অর্থনৈতিক অবস্থার কথা মনে রেখেই অর্থ কমিশন তাদের সুপারিশ দাখিল করবে।
প্রসঙ্গত, চতুর্দশ অর্থ কমিশন ত্রিপুরা রাজ্যের প্রয়োজনীয় বিভিন্ন বিষয়ে অর্থ বরাদ্দ করেনি বলে পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকার বহুবার কেন্দ্রীয় বঞ্চনার অভিযোগ তোলে। তখন বিরোধী দলে থাকা বিজেপি, যারা এখন রাজ্যে শাসন ক্ষমতায় রয়েছে, বাম দলগুলির বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় বঞ্চনার জিগির তুলে মানুষকে বিভ্রান্ত করার অভিযোগ করেছিল।
আজ সাংবাদিক সম্মেলনে অবশ্য অর্থ কমিশনের প্রধান বলেন, চতুর্দশ অর্থ কমিশনের সুপারিশে তারা অখুশি বলে তাদের জানিয়েছে বিজেপি নেতৃত্বাধীন রাজ্য সরকার। "আমাদের কাছে রাজ্য সরকারের পক্ষে একটি দাবি সনদ পেশ করা হয়েছে। আমরা পূর্বতন অর্থ কমিশনের কাজের বিষয়ে কিছু বলতে চাই না। তবে সরকার তাদের কাজে আশাহত বলে জানিয়েছে। আমরা ত্রিপুরার প্রয়োজনীয়তা ও অর্থনীতিকে মাথায় রেখে কাজ করব," বলেন তিনি।
রাজ্য সরকারের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক আজ জানিয়েছেন, অর্থ কমিশনের কাছে দাখিল করা দাবি সনদে উন্নত যোগাযোগ পরিকাঠামো স্বাস্থ্য পরিষেবা, বিদ্যুৎ, দুর্যোগ মোকাবিলা, আই টি, পর্যটন সহ একগুচ্ছ বিষয় গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে অর্থ কমিশনকে আবেদন জানিয়েছে সরকার।
কর বহির্ভূত রাজস্ব, যেমন প্রাকৃতিক তেল ও গ্যাস থেকে প্রাপ্ত রাজস্বের ৫০ শতাংশ রাজ্যকে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে ত্রিপুরা সরকার। রাজ্যের ৬০ শতাংশ এলাকায় বনায়ন নিশ্চিত রাখা, বাংলাদেশের সাথে আন্তর্জাতিক সীমান্ত প্রবন্ধন করা ও উপজাতি উন্নয়নের জন্য প্রকল্পভিত্তিক কাজ করা সহ বেশ কয়েকটি বিষয়ে অর্থ কমিশনের কাছে বিশেষ বরাদ্দ চেয়েছে রাজ্য সরকার।
এ বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে অর্থ কমিশনের চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব ও তাঁর সরকারের দৃষ্টিভঙ্গির সাথে তাঁরা একমত।
কর পুনঃবিবেচনা করার বিষয়ে প্রশ্ন করে হলে শ্রীসিং জানান, উত্তরপূর্বের রাজ্যগুলিকে আরও বেশি করে নিজস্ব রাজস্বের উপর নির্ভরশীল হতে হবে।
ত্রিপুরার পর মেঘালয়, মিজোরাম এবং সিকিমে যাবেন অর্থ কমিশনের প্রতিনিধিরা।