পয়গম্বরে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের জের পড়ল দেশজুড়ে। ঝাড়খণ্ডের রাঁচিতে দুই ব্যক্তির বুলেটের আঘাতে মৃত্যু হয়েছে। পুলিশকে লক্ষ্য করে ঢিল ছুঁড়তে থাকা জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে শূন্যে গুলি চালানো হয়। তখনই ওই ব্যক্তির শরীরে বুলেটের আঘাত লাগে।
উত্তরপ্রদেশের প্রয়াগরাজন্ড, পশ্চিমবঙ্গের হাওড়াতেও ব্যাপক বিক্ষোভ, হিংসার ঘটনা ঘটেছে। দিল্লি, মধ্যপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা, গুজরাট, বিহার এবং মহারাষ্ট্রের বেশকিছু অংশে বিক্ষোভ হয়েছে। তবে তা শান্তিপূর্ণ ছিল। শ্রীনগরে হরতাল পালন করা হয়।
রাঁচিতে শনিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত এবং হাওড়ায় সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ রাখা হয়েছে।
দিল্লিতে, শাহী ইমাম নিজেকে বিক্ষোভ থেকে দূরে সরিয়ে নিয়ে শান্তি আহ্বান জানান। অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ড (এআইএমপিএলবি), ইতিমধ্যেই ইসলামিক পণ্ডিত এবং বুদ্ধিজীবীদের 'সেইসব টেলিভিশন বিতর্কে অংশ না নেওয়ার জন্য আবেদন করেছে যেগুলির একমাত্র উদ্দেশ্য ইসলাম এবং মুসলমানদের অপমান করা।' একটি টিভি বিতর্কের সময় পয়গম্বর সমন্ধে বিজেপি নেত্রীর (বর্তমানে বহিষ্কৃত) নূপুর শর্মা বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন বলে অভিযোগ।
নূপুর শর্মা এবং নবীন জিন্দালের মন্তব্য উপসাগরীয় দেশগুলি ভালোভাবে নেয়নি। মুখ পুড়েছে ভারতের। এই সমালোচনার কয়েকদিন পরেই দেশজুড়ে প্রতিবাদ আন্দোলনে নামে মানুষ। দিল্লি জানিয়েছে, 'কয়েকজন ব্যক্তির মত সরকারের মতামতকে প্রতিফলিত করে না।' এরপরই বিজেপি শর্মা ও জিন্দালকে বরখাস্ত করে।
রাঁচিতে, পুলিশকে লক্ষ্য করে পাথর ছুড়ছিল উত্তেজিত জনতা। জমায়েতকে ছত্রভঙ্গ করতে শূন্যে গুলি চালায় পুলিশ। রাঁচির এসএসপি সুরেন্দ্র ঝাঁ, অন্য এক অফিসার এবং একজন পুলিশ কর্মী আহত হন। ঝাঁও বিক্ষোভকারীদের ছোড়া পাথরে আঘাত পেয়েছিলেন। পরে জেলা প্রশাসন মেইন রোড এলাকায় কড়া নিষেধাজ্ঞা জারি করে।
দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সাথে কথা বলার সময়, রাঁচির এসপি (গ্রামীণ) নওশাদ আলম বলেছেন,'একজন বিক্ষোভকারী গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা গিয়েছে। আরও ১২ জন, যাদের রাজেন্দ্র ইনস্টিটিউট অফ মেডিক্যাল সায়েন্সে ভর্তি করা হয়েছে।' চিকিৎসাধীনদের মধ্যে অন্তত একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
পুলিশ সূত্র খবর, একটি গাড়ি বিক্ষোভকারীদের কয়েকজনকে চাপা দেওয়ার পর পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। কীভাবে গুলি লেগেছে তাও তদন্ত করছে পুলিশ।
প্রয়াগরাজেও বিক্ষোভ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। ভারী পাথর ছোড়ার ফলে বেশ কয়েকজন পুলিশ কর্মী সামান্য আহত হন। সন্ধ্যায়, মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ ঊর্ধ্বতন আধিকারিকদের সঙ্গে একটি বৈঠক করেছেন এবং তাদের নির্দেশ দিয়েছেন যে, 'রাজ্যে হিংসা ছড়ানো এবং বেআইনি বিক্ষোভের ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোরতম পদক্ষেপ করছে।'
রাজ্য সরকারের এক মুখপাত্র বলেছেন, 'যেখানে সরকারি সম্পত্তির ক্ষতি হয়েছে সেসব জায়গায় আধিকারিকদেরকে পুনরুদ্ধারের কাজ শুরু করতে বলা হয়েছে।' বৈঠকে অতিরিক্ত মুখ্য সচিব (স্বরাষ্ট্র) অবনীশ কুমার অবস্থি, ইউপি ডিজিপি দেবেন্দ্র সিং চৌহান এবং অন্যান্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ইউপি পুলিশ জানিয়েছে যে বিক্ষোভের জন্য মোট ১৩৬ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যার মধ্যে সাহারানপুরে ৪৫ জন, প্রয়াগরাজে ৩৭ জন, আম্বেদকরনগরে ২৩ জন, হাতরাসে ২০ জন, মোরাদাবাদে ৭ জন এবং ফিরোজাবাদে ৪ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
প্রয়াগরাজের এসএসপি অজয় কুমার জানান, দুপুরের নমাজ শেষ হওয়ার অনেক পরে রাস্তায় লোক জড়ো হলে খুলদাবাদ থানার সীমানার মধ্যে হিংসা শুরু হয়। তাদের মধ্যে অনেক নাবালক ছিল। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশকে হালকা শক্তির প্রয়োগ করেত হয়েছিল
জম্মু ও কাশ্মীরের শ্রীনগরে সমস্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। দিনের বেশিরভাগ সময় মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ করে দিয়েছিল প্রশাসন। কিশতওয়ার এবং ডোডা জেলার ভাদেরওয়াহ শহরে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করার একদিন পরে বিক্ষোভ ছড়ায়।
পুলিশের দাবি অনুসারে দিল্লিতেপ্রায় ১৫০০ লোক জামা মসজিদে জুমার নামাজের জন্য জড়ো হয়েছিল। পরে প্রায় ৩০০ জন বিক্ষোভ করেছিল। মহারাষ্ট্রে, সোলাপুর, নভি মুম্বাই, নন্দুরবার, ঔরঙ্গাবাদ, পারভানি এবং জালনা থেকে বৃহত্তর বিক্ষোভ সমাবেশের রিপোর্ট এসেছে।
মধ্যপ্রদেশের ছিন্দওয়াড়া জেলায়, বিক্ষোভকারীরা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের অফিসে মিছিল করে গিয়ে নূপুর শর্মার গ্রেফতারির দাবিতে স্মারকলিপি জমা দেন। বিদিশাতেও একই ধরনের স্মারকলিপি জমা দেওয়া হয়।
গুজরাটের ভাদোদরা এবং আমেদাবাদেও বিক্ষোভ হয়। বেশ কয়েকটি এলাকায় দোকানপাট বন্ধ ছিল। বিহারের ভোজপুর, মুজাফফরপুর এবং নওয়াদা জেলাতেও বিক্ষোভের খবর পাওয়া গিয়েছে। হায়দ্রাবাদে মক্কা মসজিদের বাইরে কিছুক্ষণের জন্য উত্তেজনা ছিল। বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারী বিজেপি-বিরোধী স্লোগান তোলেন
পশ্চিমবঙ্গের কলকাতার পার্ক সার্কাসে শুক্রবার জুম্মার নামাজ শেষ বিক্ষোভ, অবরোধ হয়েছি। গবে হাওড়ার ধঘুলাগড়, উলুবড়িয়া সহ একাধিক জায়গায়া অবরোধের নামে তাণ্ডব চলেছে। পুলিশের গাড়িতে ভাঙচুর, কিয়স্কে আগুন ধরানো হয়। পুলিশকে নিশানা করে পাথর ছোড়ার ঘটনাও ঘটেছে। হাওড়ায় আগামী সোমবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ বলে ঘোষণা করেছে প্রশাসন।