ভারতের বেশ কয়েকজন সাংবাদিক এবং মানবাধিকার কর্মীর উপর নজরদারি চালাতে ইজরায়েলি স্পাইওয়্যার পেগাসাস ব্যবহার করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই তা স্বীকারও করেছে হোয়াটঅ্য়াপ কর্তৃপক্ষ। নজরদারির তালিকায় রয়েছেন বেশ কয়েকজন ভারতীয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভারতের অধিকার অন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদেরকেই নিশানা করা হয়েছে। এছাড়াও ওই তালিকায় রয়েছেন, আদিবাসীদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আইনজীবী, এলগার পরিষদ মামলায় অভিযুক্ত, ভীমা কোরেগাঁও মামলার সঙ্গে যুক্ত আইনজীবী, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও প্রতিরক্ষা বিষয়ে খবর করা সাংবাদিক।
আরও পড়ুন: বিশ্লেষণ: পেগাসাস স্পাইওয়ার ঠিক কী?
অভিযোগ, অপারেটররা স্পাইওয়্যার ইনস্টল করতে ভিডিও মিসড কলের মাধ্যমে স্মার্টফোনে প্রবেশ করে তথ্যে নজরদারি চালায়। সংবাদ সংস্থায় রয়টার্সের খবর, মার্কিন প্রশাসনের উচ্চ এক আধিকারিক জানিয়েছেন, আমেরিকার বন্ধু বহু রাষ্ট্রের সরকারি কর্মীদের তথ্য নজরদারিতে এই বছরের শুরুতে সফটওয়্যার হ্যাক করা হয়েছিল।
যাদের উপর ইজরায়েলি স্পাইওয়্যার পেগাসাস ব্যবহার করে নজরদারি চালানো হয়েছে তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন তেলেঙ্গানা হাইকোর্টের আইনজীবী ও রাজনৈতিক বন্দিমুক্তি আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত রবীন্দ্রনাথ ভাল্লা। তাঁর কাছে প্রথমে সতর্কতামূলক ফোন এলেও বিশ্বাস করেননি ভাল্লা। পরে কর্তৃপক্ষের ফোনের পর বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিৎ হন তিনি।
বাস্তারের মানুষের অধিকার আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত সুধা ভরদ্বাজের আইনজীবী শালিনি গেরার উপরও নজরদারি করা হয়। তিনি বলেন 'আমার কাচে বহুবার ভিডিও মিসডকল এসেছিল। তখন কারণ জানতে পারিনি। পরে সিটিজেন ল্যাব আমাকে একদিন আগেই বিষয়টি জানিয়েছে।'
এছাড়াও তালিকায় রয়েছেন, দলিত আধিকার আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত আনন্দ তেলতুম্বে। তিনি বলেন, 'টরেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের তরফে আমার কাছে দশদিন আগে একটি ফোন আসে। আমি কিছু বলিনি। তবে এখন এবিষয়ে সতর্ক হয়েছি।'
বাস্তারের বেলা সোমারি ভাটিয়া বলেন, 'আমি আগে কিছুই বুঝতে পারিনি। তবে, সিটিজেন ল্যাবের কথায় আমি অনেকটাই সতর্ক হয়ে যাই।' ভীমা কোরেগাঁও মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তির আইনজীবী নিহাল সিং রাঠোরের কথায়, 'চলতি বছর শুরুর দিকে আমার কাছে হোয়াটআ্য়াপ থেকেই বহু ভিডিও কল আসত। আমি ফোন পাল্টে ফেলি। গত অক্টোবরে সেই কলের কারণ জানতে পারি।' গাদচিরোলির বাসিন্দা ও ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অফ পিপল'সের সঙ্গে যুক্ত আইনজীবী জগদীশ মেসরাম বলেন, 'গত মার্চে আমার কাছে প্রচুর ভিডিও কল আসত। আমি বেশ কয়েকটি কল ধরেওছি। এবার জানতে পারলাম নজরদারির কথা।'
আরও পড়ুন: সাংবাদিক এবং মানবাধিকার কর্মীদের উপর চলছে নজরদারি, নিশ্চিত করল হোয়াটসঅ্যাপ
এছাড়াও তালিকায় নাম রয়েছে, মানব অধিকার কর্মী অঙ্কিত গ্রেওয়াল। 'মে মাসে আমার কাছে প্রচুর ভিডিও কল এসেছে। আমি বসুন্ধরা ভরদ্বাজের আইনজীবী। হরিয়া হাইকোর্টে আমিই তাঁর হয়ে মামলা লড়েছি।' পরিবেশ আন্দোলন কর্মী বিবেক সুন্দারা বলেন, 'আমার কাছেও ভিডিও কল এসেছিল। আমি ধরেছি বেশ কয়েকবার। এবার বুঝতে পারছি কেন সেই ভিডিও কল।' ছত্তিশগড়ের দেগ্রি প্রসাদ চৌহান, সীমা আজাদ, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপিকা ডঃ সরোজ গিরি জানিয়েছেন, 'দেড় মাস আগেই আমার কাছে ফোন আসে ল্যাব থেকে। আমি তাদের রিপোর্ট দিতে বলেছিলাম।' এছাড়াও এঅকই তালিকাভূক্ত অমর সিং চাহাল, কলমিস্ট রাজীব শর্মা, সাংবাদিক শুভ্রাংশু চৌধুরি ও আশিস গুপ্ত, সিদ্ধান্ত শিবাল। এদের বেশিরভাগের কাছেই কোনও না কোনও সময় মিসড ভিডিও কল এসেছিল বলে জানা গিয়েছে। কলমিস্ট রাজীব শর্মা জানান, ''গত ২৯ অক্টোবর আমার কাছে প্রথম ফোন আসে। কানাডার একটি এনজিও থেকে ভিডিও কল এসেছিল। আমাকে ফোন বদলের কথা বলা হয়। আজমল খান জানিয়েছেন, 'আগে ভিডিও কল এসেছিল। পরে হোয়াটআ্যাপ থেকে ভিডিও কল আসে। পরে আমি বিষয়টি বুঝতে পারি।' সিদ্ধান্ত শিবাল জানিয়েছেন, 'সিটিজেন ল্যাবের মাধ্যমে বুঝতে পারি আমার ফোন টার্গেট করা হয়েছে।'
Read the full story in English