যত দিন গড়াচ্ছে, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দুর্দশার ছবি যেন ততই প্রকট হচ্ছে। দেশ ছেড়ে পালাতে গিয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দিশেহারা অবস্থা আরও একবার সামনে এল। শুক্রবার সুমাত্রা দ্বীপের কাছে ৫ রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুকে উদ্ধার করলেন ইন্দোনেশিয়ার মৎস্যজীবীরা। অসমর্থিত সূত্রে জানা গেছে, মায়ানমার থেকে পালাতে সমুদ্র পেরোতে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে আরও ৫ জনের। শুক্রবার রাত দেড়টা নাগাদ ওই ৫ রোহিঙ্গা শরণার্থীকে উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন নৌবাহিনীর আধিকারিক রাজালি।
সুমাত্রা দ্বীপের উত্তর প্রান্ত থেকে ২ পুরুষ, ২ মহিলা ও এক শিশুকে উদ্ধার করেন পূর্ব আচেহ এলাকার মৎস্যজীবীরা। অনেক রোহিঙ্গা শরণার্থীই মায়নমার থেকে পালাতে গিয়ে বিপজ্জনক ভাবে সমুদ্র পার হচ্ছেন বলেও জানা গেছে। যার জেরেই দুর্ঘটনার কবলে পড়ছেন ওই শরণার্থীরা।
২০১২ সালে রাখাইন প্রদেশে হিংসার ঘটনার পর থেকেই মায়ানমার থেকে পালাতে শুরু করেন হাজার হাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী। ২০১৫ সালেই সবথেকে বেশি সংখ্যক রোহিঙ্গা শরণার্থীরা সেদেশ ছাড়েন বলে খবর। প্রায় ২৫ হাজার মানুষ আন্দামান সমুদ্র পেরিয়ে থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়ায় পালিয়ে এসেছে। সমুদ্র পেরনোর সময় অনেকেই প্রয়োজনীয় সুরক্ষা না নিয়েই নৌকায় ওঠেন বলে জানা গেছে। এমনকি, বহু ক্ষেত্রে প্রাণভয়ে পালানোর জন্য নৌকায় অতিরিক্ত যাত্রী ওঠায় বিপদ বেড়েছে বৈ কমেনি।
গত বছর মায়ানমার সেনার অত্যাচারে প্রায় ৭ লক্ষ রোহিঙ্গা শরণার্থী রাখাইনে নিজেদের বাসস্থান ছেড়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রসংঘ। দেশে অবাঞ্ছিত নাগরিকদের নির্মূল করতেই গত বছর অগাস্ট মাসে মায়ানমার সেনা অত্যাচার চালিয়েছে বলে মত রাষ্ট্রসংঘ ও পশ্চিমি দেশগুলির। যদিও এ অভিযোগ কার্যত খারিজ করেছে মায়ানমার সরকার। জঙ্গি দমন করতেই সে দেশের সেনা অভিযানে নেমেছিল বলে জানিয়েছিল মায়ানমার।
নৌকায় করে আসা শরণার্থীদের আশ্রয় দেয় ইন্দোনেশিয়া। কিন্তু সে দেশে শরণার্থীদের সেই অর্থে কিছু করারই থাকে না। অধিকাংশরাই উদ্বাস্তু শিবির কিংবা ডিটেনশন সেন্টারে বাকি জীবনটা কাটান।
অন্যদিকে এ সপ্তাহের শুরুতে লঙ্কায়ি দ্বীপে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের একটি নৌকা আটক করে মালয়েশিয়া। ওই নৌকায় করে ৫৬ জন রোহিঙ্গা শরণার্থী মায়ানমার থেকে সে দেশে এসেছিলেন বলে জানা গেছে।
রোহিঙ্গা ইস্যুর আঁচ পড়েছে ভারতেও। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সেদেশে ফেরাতে তৎপর হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। এ নিয়ে মায়ানমারের সঙ্গে কূটনৈতিক স্তরে আলোচনাও চালাচ্ছে ভারত সরকার।
অন্যদিকে কিছুদিন আগেই জানা গিয়েছিল, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের গ্রাম দখল করে সেখানে নিজেদের ক্যাম্প তৈরি করেছে মায়ানমার সেনা। যে ছবি স্যাটেলাইটে ধরা পড়েছে বলেও দাবি উঠেছিল।