বিলকিস বানো গণধর্ষণ ও হত্যা মামলায় ১১ জন আসামির মুক্তির বিরুদ্ধে দেশজুড়ে বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন প্রতিবাদ বিক্ষোভে সামিল হয়েছেন। একাধিক সং গঠনের পক্ষ থেকে গতকাল দিল্লির যন্তর-মন্তরে বিক্ষোভ আন্দোলনে অংশ নেন সমাজের বিশিষ্ট মানুষ-জন। মুম্বাইয়ের ফ্রিডম পার্কেও এদিন বিক্ষোভ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। বিক্ষোভে অংশ নেওয়া বিপুল সংখ্যক মহিলা গুজরাট সরকারের সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা করেন এবং দোষীদের যাবজ্জীবন সাজা পুনর্বহাল করার দাবি জানান।
যন্তর মন্তরে বিক্ষোভে শাবানা আজমি বিলকিস বানো সম্পর্কে বক্তব্য রাখার সময় আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন। তিনি বিলকিসের পক্ষে আওয়াজ তুলে বলেন, "নির্ভয়ার জন্য যারা পথে নেমে আন্দোলন করেছিলেন তারা এখন আন্দোলনের পথে নামছেন না? তিনি আরও বলেন, “ মহিলা হিসাবে, ভারতীয় হিসাবে, আমাদের সকলের কর্তব্য হল সবচেয়ে বড় দায়িত্ব হল দোষীদের মুক্তির বিরুদ্ধে আওয়াজ তোলা। এই ধরনের পদক্ষেপ আমরা সহ্য করব না। বিলকিস বানো, তার পরিবারের সঙ্গে যা ঘটেছে, তা আমাদের দেশের সম্মান নষ্ট করেছে। আমরা সবাই একত্রে প্রতিবাদে সামিল হব”।
এর সঙ্গেই তিনি প্রশ্ন তোলেন গুজরাট সরকার কি কেন্দ্রের নির্দেশ ছাড়া এমন পদক্ষেপ নিতে পারে? বিলকিস বানো মামলায় ১১ আসামিকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্তের নিন্দা জানিয়ে দিল্লি, বেঙ্গালুরু এবং মুম্বাইতে এদিন বিক্ষোভ আন্দোলন অনুষ্ঠিত হয়।
গোধরার বিজেপি বিধায়ক সিকে রাউলজি (মুক্তির সুপারিশকারী কমিটির সদস্যও) বলেছিলেন যে ধর্ষকরা উচ্চ মানসম্পন্ন ব্রাহ্মণ পরিবারের। এ-সংক্রান্ত প্রশ্নে শাবানা আজমি বলেন, "আমি এই বক্তব্যে তীব্র নিন্দা করছি। এরা সংস্কৃতিমনস্ক মানুষ? শাসক দলের সদস্যরা যদি এসব বলেন, তাহলে আমরা কাদের ভরসা করব? তাই যারা এই ধরণের বলেছেন, তাদের দল থেকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেওয়া উচিৎ”।
আরও পড়ুন: < ৯ সেকেন্ডেই ভ্যানিস হবে ৪০ তলা ভবন! টুইন টাওয়ার গুঁড়িয়ে ফেলতে মজুত ৩৭০০ কেজি বিস্ফোরক >
বিলকিস বানো মামলার আসামিদের মুক্তির বিরুদ্ধে করা আবেদনের ভিত্তিতে ইতিমধ্যেই গুজরাট সরকারকে নোটিশ দিয়েছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত। ১১ দোষীর মুক্তির সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ সংক্রান্ত মামলায় গুজরাত সরকারকে বৃহস্পতিবার নোটিস দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। ১১ ধর্ষকের মুক্তি নিয়ে গুজরাত সরকারকে জবাব দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই মামলায় ১১ দোষীকে যুক্ত করতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
আগামী দু’সপ্তাহ পর আবার এই মামলার শুনানি হবে। উল্লেখ্য, গোধরা ঘটনার পর গুজরাটে দাঙ্গা শুরু হয় এবং এই দাঙ্গায় বিলকিস বানার পরিবারের সাত সদস্য নিহত হয়। শুধু তাই নয়, বিলকিস বানোকেও গণধর্ষণ করেছিল দাঙ্গাকারীরা। ১ লা জানুয়ারী, ২০০৮-এ সকল আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হলেও এখন তারা মুক্তি পেয়েছে। ২১ শে জানুয়ারী, ২০০৮-এ, মুম্বাইয়ের একটি বিশেষ সিবিআই আদালত হত্যা এবং গণধর্ষণ মামলায় ১১ অভিযুক্তকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়।
পরে বম্বে হাইকোর্ট তার সাজা বহাল রাখে। দোষীরা ১৫ বছরেরও বেশি সময় ধরে জেলে ছিলেন, যার পরে তাদের মধ্যে একজন তার অকাল মুক্তির জন্য সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন। মওকুফ নীতির অনুসারে তাদের মুক্তি দেয় গুজরাট সরকার। এনিয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে তোপ দাগে সব বিরোধী দলগুলি।