Advertisment

ভাগাড়ে পচা মাংসকাণ্ডে চাঞ্চল্যকর তথ্য, জড়িত পুরকর্মীরাও!

কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকার ভাগাড়ে পশুর দেহ ফেলা হলেই পুরকর্মীদের মারফত খবর পৌঁছে যেত পচা মাংস কারবারিদের কাছে। এজন্য ৫০ থেকে ১০০ টাকা মতো বকশিস পেতেন পুরকর্মীরা।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
rotten meat, kolkata

পচা মাংস কারবারে ডড়িত পুরকর্মীরাও, এমন তথ্যই পেয়েছেন তদন্তকারীরা। ছবি- শুভম দত্ত, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস।

রাভীক ভট্টাচার্য

Advertisment

ভাগাড়ে পচা মাংসকাণ্ডে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য হাতে এল তদন্তকারীদের। তথ্য অনুযায়ী পচা মাংসের ব্যবসায়ী চক্রের সঙ্গে আঁতাত রয়েছে কিছু পুরকর্মীর ও। কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকার ভাগাড়ে পশুর দেহ ফেলা হলে তৎক্ষণাৎ পুরকর্মীদের মারফত বার্তা পৌঁছে যেত পচা মাংস কারবারিদের কাছে। এজন্য ৫০ থেকে ১০০ টাকা মত বকশিস পেতেন সেই পুরকর্মীরা। মৃত সেই পশু তাঁদের হিমঘরে নিয়ে গিয়ে ফর্মালিন এবং অ্যালুমিনিয়াম সালফেটের মতো রাসায়নিক মিশিয়ে তা সংরক্ষণ করা হত। পরে তা যথাযোগ্য প্রসেস করে তারপর শহরের বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় পাঠানো হত।

এই  মাংস কেজি প্রতি ১০০টাকা থেকে ২৮০ টাকা বাজারদরে সরবরাহ করা হত বলে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। ফ্রোজেন মিটের পাইকারি বিক্রেতা হিসেবে এইসমস্ত রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষগুলিকে নিজেদের পরিচয় দিতেন পচা মাংস কারবারীরা। এমন তথ্যই তাঁদের কাছে মিলেছে বলে জানিয়েছেন এক তদন্তকারী।

এপ্রসঙ্গে এই তদন্তের মুখ্য আধিকারিক পুলিশ সুপারিন্টেডেন্ট কোটেশ্বর রাও জানালেন, "আমরা এই দলের মূল পাণ্ডাকে অবশেষে অ্যারেষ্ট করেছি। এই দলটি মৃত পশুদের ভাগাড় থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে বিভিন্ন রাসায়নিক দিয়ে প্রসেস করে সেই মাংস খোলা বাজারে এবং বিভিন্ন রেঁস্তোরায় জোগান দিত। এই ঘটনায় জড়িত মুল চাঁইদের কলকাতা, এরাজ্যের অন্যান্য জেলা এবং বিহারের নওয়াদা জেলা থেকে কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।"

রাও আরও বলেন সংগৃহীত মাংসের স্যাম্পেল ইতিমধ্যেই ল্যাবোরেটরিতে পাঠানো হয়েছে। "এই মাংস পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও আর কোন কোন জেলায় সরবরাহ করা হত এই বিষয়ে আমরা সমস্ত দিকগুলিই খতিয়ে দেখছি।"

rotten meat, kolkata পচা মাংসকাণ্ডে এখনও পর্যন্ত গ্রেফতারের সংখ্যা ১০ জনেরও বেশি। ছবি- শুভম দত্ত, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস

আরও পড়ুন, ভাগাড়ের পচা মাংস বিক্রি: পুলিশি জালে আরও ৬, উদ্ধার ২০ টন মাংস

এই র‍্যাকেটে জড়িত বজবজের দুজন স্থানীয়কে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারের সময় তাঁরা ভাগাড় থেকে একটি পশুর মৃতদেহ ট্যাক্সিতে তুলছিলেন। তদন্তকারীরা ধৃত অভিযুক্তদের কাছে পাওয়া সূত্র অনুযায়ী কলকাতার রাজাবাজার অঞ্চল থেকে ২০ কিলো ওজনের প্রায় ১০০০ প্যাকেট মাংস উদ্ধার করেন।

প্রাক্তন কাউন্সিলর মানিক মুখোপাধ্যায়সহ এই র‍্যাকেটে জড়িত আরও দশ জন অভিযুক্তদের পুলিশ গ্রেফতার করেছে। গত ২৫ এপ্রিল এই কাণ্ডের মূল চাঁই সানি মল্লিককেও পুলিশ বিহার থেকে গ্রেপ্তার করেছে বলে জানিয়েছেন।

আরও পড়ুন, ভাগাড় মাংসকাণ্ডে ধৃত সিপিএম নেতা, বাংলাদেশেও পাঠানো হত পচা মাংস!

এদিকে পচা মাংস কারবার রুখতে ইতিমধ্যেই শহরের বিভিন্ন হোটেল, রেস্তোরাঁয় অভিযানে নেমেছে পুরসভা। কলকাতার হোটেল, রেস্তোরাঁয় হানা দিয়ে মাংসের নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মেয়র পারিষদ(স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ।

হাসপাতালগুলিতে সরবরাহ করা মাংসের গুণমাণ যাচাই করতে নোটিস পাঠিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর। অন্যদিকে, এ ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে রিপোর্ট পেশ করছে ক্রেতা বিষয়ক দফতর।

আরও পড়ুন, কলকাতা মেট্রো: বিতর্কিত উপদেশ দিয়ে কমেন্ট ডিলিট করল কর্তৃপক্ষ

অন্যদিকে পচা মাংস কারবারের জেরে হোটেল, রেস্তোরাঁয় ভিড় কমেছে। মাংস নয়, মাছ ও নিরামিষ পদের চাহিদা বাড়ছে বলে জানিয়েছেন পূর্ব ভারতে হোটেল ও রেস্তোরাঁর প্রেসিডেন্ট সুদেশ পোদ্দার। প্রতিষ্ঠিত মাংস সরবরাহকারীদের থেকেই মাংস নিতে রেস্তোরাঁ মালিকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন। তিনি আরও বলেন, সংগঠনে যুক্ত প্রতিটি রেস্তোরাঁকে ইতিমধ্যেই শুধুমাত্র প্রসিদ্ধ বিক্রেতাদের কাছ থেকেই মাংস কেনার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

অনুলিখন- সৌরদীপ সামন্ত

kolkata rotten meat
Advertisment