ভাগাড়ে পচা মাংসকাণ্ডে জালে আরও একজন। বুধবার সন্ধ্যায় গড়িয়া স্টেশন থেকে বিশ্বনাথ ঘোড়াই নামে আরও একজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ৫২ বছর বয়সী ওই প্রৌঢ় পচা মাংস কারবারের অন্যতম অভিযুক্ত বলে জানা গেছে। বাজার ও রেস্তোরাঁয় পচা মাংস সরবরাহ করার পিছনে বিশ্বনাথের হাত রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। বুধবার সন্ধ্যায় বিশ্বনাথ ঘোড়াই ওরফে বিশুকে বিশেষ তদন্তকারী দল(সিট) গ্রেফতার করেছে বলে জানিয়েছেন ডায়মন্ডহারবার পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার কোটেশ্বর রাও। এ নিয়ে পচা মাংসকাণ্ডে ধৃতের সংখ্যা বেড়ে হল ১১।
ভাগাড় থেকে পশুর দেহ সংগ্রহ করতেন বিশ্বনাথ। পরে তা প্রক্রিয়াকরণ করে রেস্তোরাঁ ও বাজারে সেই মাংস পাঠাতেন তিনি। প্রাথমিক ভাবে এমনটাই মনে করছে পুলিশ। শুধু তাই নয়, ভাগাড়ে কবে, কখন পশুর দেহ ফেলা হচ্ছে, তা তাঁকে জানানোর জন্য নিজের লোক রাখতেন বিশ্বনাথ। তাঁরাই বিশ্বনাথকে এ ব্যাপারে খবরাখবর দিতেন। সূত্র মারফৎ জানা গেছে, মানিকতলা, টালা, তারাতলাসহ বিভিন্ন এলাকায় পচা মাংস সরবরাহ করার কথা স্বীকার করেছেন বিশ্বনাথ। তবে কতদিন থেকে এ কারবারে বিশ্বনাথ জড়িত রয়েছেন, তা এখনও জানা যায়নি। নারেকলডাঙায় একটি হিমঘরে পুলিশের তল্লাশির পর থেকেই গা ঢাকা দিয়েছিলেন বিশ্বনাথ।
আরও পড়ুন, ভাগাড়ে পচা মাংসকাণ্ডে এবার পথে নামল বিজেপি ও কংগ্রেস
ভারতীয় দণ্ডবিধির ২৭২, ২৭৩ ধারা ও ফুড স্ট্যান্ডার্ড অ্যাক্টের ৫৯ ধারার পাশাপাশি এ মামলায় ১২০বি ধারাও যোগ করেছে পুলিশ। পচা মাংস কারবারের জাল বড় বলেই মনে করা হচ্ছে। আগেই পচা মাংস সরবরাহের অভিযোগে ৮ জনকে গ্রেফতার করেছে বিধাননগর থানার পুলিশ। তবে এ ঘটনায় আরেক অন্যতম অভিযুক্ত কৌশর ঢাল এখনও পলাতক। এর আগে পচা মাংস কারবারের ঘটনায় নদিয়া জেলা থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে প্রাক্তন কাউন্সিলর মানিক মুখোপাধ্যায়কে।
আরও পড়ুন, ভাগাড়ে পচা মাংসকাণ্ডে এবার পুলিশের নজরে একটি পোলট্রি ফার্মের মালিক
এদিকে পচা মাংসকাণ্ডে পুরসভার ভূমিকার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার কলকাতা পুরসভার সামনে বিক্ষোভ দেখাল বিজেপি। অন্যদিকে বিধান ভবন থেকে মৌলালি পর্যন্ত মিছিল করল কংগ্রেস নেতৃত্ব। কলকাতা পুরসভার সামনে বিক্ষোভ দেখাতে গিয়ে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তিও বাধে বিজেপি কর্মীদের। ভাগাড়ের ঘটনায় অভিযুক্তদের শাস্তির দাবি ওঠে বিজেপির বিক্ষোভে। ব্যানার, প্ল্যাকার্ড, কুকুরের প্রতিকৃতি নিয়ে বিক্ষোভে শামিল হন বিজেপি কর্মীরা। বিরোধীদের বিক্ষোভ কর্মসূচি প্রসঙ্গে মেয়র পারিষদ(স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ বলেন যে, এই ইস্যুতে রাজনীতি না করে যদি বিরোধীরা রাস্তায় নেমে সচেতনতামূলক প্রচার করত, তাহলে বেশি ভাল হত।
আরও পড়ুন, ভাগাড়ে পচা মাংসকাণ্ডে চাঞ্চল্যকর তথ্য, জড়িত পুরকর্মীরাও!
ভাগাড়ে পচা মাংসকাণ্ডের তদন্তে নেমে চাঞ্চল্যকর তথ্য হাতে পেয়েছে পুলিশ। পচা মাংস কারবার চক্রের সঙ্গে যোগসাজশ রয়েছে পুরকর্মীদের একাংশের। কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকার ভাগাড়ে পশুর দেহ ফেলা হলেই কয়েকজন পুরকর্মীদের মারফৎ খবর পৌঁছে যেত পচা মাংস কারবারিদের কাছে। এজন্য ৫০ থেকে ১০০ টাকা মতো বকশিস পেতেন ওই পুরকর্মীরা। এমনটাই জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। রীতিমতো আঁটঘাট বেঁধেই পশুর মাংস বাজারে সরবরাহ করা হত। পশুর মাংসে ফর্মালিন, অ্যালুমিনিয়াম সালফেটের মতো রাসায়নিক মিশিয়ে প্রক্রিয়াকরণ করে তা হিমঘরে সংরক্ষণ করা হত। যা পরে কলকাতার বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় পাঠানো হত।