যত দিন এগোচ্ছে ভাগাড়ে পচা মাংসকাণ্ডে নতুন নতুন তথ্য পাচ্ছেন তদন্তকারীরা। পচা মাংস কারবারীদের পর্দা ফাঁস করতে ইতিমধ্যেই তোড়জোড় শুরু করে দিয়েছে পুলিশ। এবার পুলিশের নজরে রয়েছে একটি পোলট্রি ফার্মের মালিক। কৌশর আলি ঢাল নামে ওই ব্যক্তির নাগাল পেলে এ ঘটনায় আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য হাতে মিলবে বলেই মনে করছেন তদন্তকারীরা। বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় মরা মুরগির মাংস সরবরাহের পিছনে কৌশরের হাত রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। শনিবার ওই খামারে তল্লাশি চালিয়ে বেশ কিছু নথি মিলেছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। পচা মাংস সরবরাহকারীদের মধ্যে কৌশরই নাটের গুরু বলে প্রাথমিক ভাবে মনে করছে পুলিশ।
এদিকে ভাগাড়ে পচা মাংসকাণ্ডের তদন্তে নেমে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য হাতে পেয়েছে পুলিশ। পচা মাংস কারবার চক্রের সঙ্গে যোগসাজশ রয়েছে কিছু পুরকর্মীদের। কলকাতা ও সংলগ্ন এলাকার ভাগাড়ে পশুর দেহ ফেলা হলেই সেসব পুরকর্মীদের মারফত খবর পৌঁছে যেত পচা মাংস কারবারিদের কাছে। এজন্য ৫০ থেকে ১০০ টাকা মতো বকশিস পেতেন পুরকর্মীরা। এমনটাই জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। রীতিমতো আঁটঘাট বেঁধেই পশুর মাংস বাজারে সরবরাহ করা হত। পশুর মাংসে ফর্মালিন, অ্যালুমিনিয়াম সালফেটের মতো রাসায়নিক মিশিয়ে প্রক্রিয়াকরণ করে তা হিমঘরে সংরক্ষণ করা হত। যা পরে কলকাতার বিভিন্ন রেস্তোরাঁয় পাঠানো হত।
আরও পড়ুন, ভাগাড়ে পচা মাংসকাণ্ডে চাঞ্চল্যকর তথ্য, জড়িত পুরকর্মীরাও!
কেজি প্রতি ১০০টাকা থেকে ২৮০ টাকা দরে বাজারে এই মাংস সরবরাহ করা হত বলে জানতে পেরেছেন তদন্তকারীরা। ফ্রোজেন মিটের পাইকারি বিক্রেতা হিসেবে রেস্তোরাঁ কর্তৃপক্ষগুলিকে পরিচয় দিত পচা মাংস কারবারীরা। এমন তথ্যই তাঁদের কাছে মিলেছে বলে জানিয়েছেন এক তদন্তকারী।
পচা মাংস কারবার রুখতে ইতিমধ্যেই শহরের বিভিন্ন হোটেল, রেস্তোরাঁয় অভিযানে নেমেছে পুরসভা। কলকাতার বেশ কিছু হোটেল এবং রেস্তোরাঁয় হানা দিয়ে মাংসের নমুনা সংগ্রহ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মেয়র পারিষদ(স্বাস্থ্য) অতীন ঘোষ। বেশ কয়েকটি বিরিয়ানির দোকান পুলিশের নজরে রয়েছে বলে সূত্র মারফৎ জানা গেছে। ওই বিরিয়ানির দোকানগুলিতে নিম্নমানের মাংস বিক্রি করা হত বলে খবর। অনেক বিরিয়ানির দোকানেই মরা পশুর মাংস বিক্রি করা হত বলে সন্দেহ। ভাগাড়ে পচা মাংসকাণ্ডের খবর সামনে আসতেই, বেশ কিছু বিরিয়ানির দোকান আচমকাই বন্ধ হয়ে গেছে বলে জানিয়েছেন এক পুলিশ অফিসার। ওই বিরিয়ানির দোকানগুলোতে পচা মাংস বিক্রি করা হত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন, ভাগাড় মাংসকাণ্ডে ধৃত সিপিএম নেতা, বাংলাদেশেও পাঠানো হত পচা মাংস
রাজ্যে মোট ২ কোটি ৪০ লক্ষ হাজার কেজির মতো মুরগির মাংস উৎপাদন করা হয়। যার মধ্যে ১ কোটি ৯০ লক্ষ কেজি মাংস এ রাজ্যে জোগান দেওয়া হয়। বাকিটা ঝাড়খণ্ড ও বিহারে সরবরাহ করা হয় বলে জানিয়েছেন বেঙ্গল পোলট্রি ফেডারেশনের জেনারেল সেক্রেটারি মদন মোহন মাইতি।
হাসপাতালগুলিতে সরবরাহ করা মাংসের গুণমাণ যাচাই করতে নোটিস পাঠিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর।
আরও পড়ুন, ভাগাড়ের পচা মাংস বিক্রি: পুলিশি জালে আরও ৬, উদ্ধার ২০ টন মাংস
অন্যদিকে পচা মাংস কারবারের জেরে হোটেল, রেস্তোরাঁয় ভিড় কমেছে। মাংসের বদলে মাছ এবং নিরামিষ পদের চাহিদা ক্রমশই বাড়ছে বলে জানিয়েছেন পূর্ব ভারতে হোটেল ও রেস্তোরাঁর প্রেসিডেন্ট সুদেশ পোদ্দার। প্রতিষ্ঠিত মাংস সরবরাহকারীদের থেকেই মাংস নিতে রেস্তোরাঁ মালিকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন।
এ ঘটনার কিংপিনকে ইতিমধ্যেই গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডায়মন্ডহারবার পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার কোটেশ্বর রাও। কলকাতা ও বিভিন্ন জেলা থেকে কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে জানা গেছে। গত ২৫ এপ্রিল এ ঘটনার কিংপিন সানি মল্লিককে বিহার থেকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে খবর। প্রাক্তন কাউন্সিলর মানিক মুখোপাধ্যায়সহ এ ঘটনায় ধৃতের সংখ্যা ১০ জনেরও বেশি।