চলন্ত ট্রেনে পরপর গুলি….! কিছু বুঝে ওঠার আগেই মাটিতে লুটিয়ে পড়েন এক সিনিয়ার আরপিএফ আধিকারিক সহ চার যাত্রী। এফআইআর অনুসারে, অভিযুক্ত কনস্টেবল চেতন সিং রিপোর্ট করেছিলেন যে তিনি অসুস্থ ছিলেন যার কারণে তিনি তাঁর শিফ্ট শেষ হওয়ার কয়েক ঘন্টা আগে ডিউটি থেকে অব্যাহতি পেতে চেয়েছিলেন কিন্তু তাঁর সিনিয়ররা তাঁর দায়িত্ব শেষ করার জন্য জোর দেওয়ায়, এটি তাকে উত্তেজিত করে যার ফলে সে মীনাকে গুলি করে। এবং দ্রুতগামী ট্রেনে আরও তিনজন যাত্রীকে গুলি করেন।
অন্য আরপিএফ কনস্টেবল অময় আচার্যের বরিভলি জিআরপি-র বিবৃতি অনুসারে, “সিং, মীনা এবং আরও তিনজন টিকিট চেকার সোমবার ভোরবেলা প্যান্ট্রি কোচে আমার সঙ্গে দেখা করেছিলেন। মীনা আমাকে বলেছিলেন যে সিং অসুস্থ, তারপরে আমি তাঁকে ছুঁয়ে দেখেছিলাম কিন্তু আমি বুঝতে পারিনি তার জ্বর হয়েছে কিনা।
সিং তাড়াতাড়ি ডিউটি থেকে অব্যাহতি এবং ভালসাড় রেলওয়ে স্টেশনে নামানোর জন্য জোর দিয়েছিলেন। যাই হোক, মীনা তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করছিল যে তাঁরা দুই বা তিন ঘন্টার মধ্যে মুম্বই পৌঁছে যাবে এবং তাঁর দায়িত্ব শেষ করার জন্য জোর দিয়েছিল।
এবং সিং তাঁর সঙ্গে একমত না হওয়ায়, মীনা মুম্বই সেন্ট্রাল কন্ট্রোল রুমকে জানান যিনি পরিবর্তে তাঁকে বোঝাতে বলেছিলেন। এএসআই এমনকি তাঁদের সহকারী নিরাপত্তা কমিশনার সুজিত কুমারকে ফোন করেছিল এবং এমনকি তিনি তাঁকে বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন কিন্তু সিং কারও কথা শুনতে প্রস্তুত ছিলেন না।
সোমবার ভোরে জয়পুর-মুম্বই সেন্ট্রাল সুপারফাস্ট এক্সপ্রেসে রেলওয়ে প্রোটেকশন ফোর্স (RPF) কনস্টেবল চেতন সিং (৩৩) এর হাতে নিহত চতুর্থ ব্যক্তির নাম সৈয়দ সাইফুল্লাহ (৪৩), হায়দ্রাবাদের বাসিন্দা। অন্য তিনজন সাব-ইন্সপেক্টর টিকারাম মীনা (৫৭) বিহারের মধুবনীর আসগর আব্বাস আলী (৪৮); এবং আব্দুল কাদের মহম্মদ হোসেন (৬৪) মহারাষ্ট্রের পালঘরের বাসিন্দা।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে সাইফুল্লাহ আজমির শরীফ থেকে মুম্বই হয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। তার একটি মোবাইল রিপিয়ারিংয়ের দোকান ছিল এবং তিনিই তার পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী ছিলেন। ৬ বছর, ২ বছর ও ৬ মাসের তিন সন্তান রয়েছে তাঁর । দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সঙ্গে কথা বলার সময়, তাঁর এক নিকট আত্মীয়, জানান, চেতন সিং তাদের বি ২ কোচে ঢুকে সাইফুল্লাহর নাম জিজ্ঞাসা করেছিল। "সাইফুল্লাহ তাকে তাঁর নাম বলার সঙ্গে সঙ্গে, আরপিএফ কনস্টেবল তাকে টার্গেট করেন”। সাইফুল্লাহকে প্যান্ট্রি কারে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে তাকে গুলি করা হয় বলে জানা গেছে।
মঙ্গলবার বিকেলে একটি টুইটে এআইএমআইএম প্রধান আসাদউদ্দিন ওয়াইসি জানিয়েছেন, “তিনি নামপালির বাজারঘাটের বাসিন্দা ছিলেন। তিন সন্তান রয়েছে মৃত সাইফুল্লাহ’র। সবচেয়ে ছোট জনের বয়স মাত্র ৬ মাস”। গত কয়েক ঘন্টা ধরে পরিবারের পাশে রয়েছেন তিনি। মৃতদেহ হায়দ্রাবাদে আনার জন্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছেন আসাদউদ্দিন ওয়াইসি। হায়দরাবাদে নামপালির বিধায়ক জাফর হুসেন মেহরাজও অভিযোগ করেছেন যে হত্যার আগে সাইফুল্লাহকে তার নাম জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। সাইফুল্লাহর পরিবারের তরফে ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়েছে। বিধায়ক জানিয়েছেন, কর্ণাটকের বিদারে তাঁর গ্রামে সাইফুল্লাহর শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হবে।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ‘চেতন সিং, যিনি তাঁর স্বয়ংক্রিয় রাইফেল থেকে প্রায় ১২ রাউন্ড গুলি ছুড়েছিলেন, প্রথমে তার সিনিয়র এবং তারপরে তিনজন যাত্রীকে হত্যা করেন। পালানোর চেষ্টা করলে অস্ত্রসহ আটক করা হয় অভিযুক্তকে’। এদিকে, মঙ্গলবার সকালে শেষকৃত্য অনুষ্ঠিত হওয়ার সময়, আব্বাস আলীর পরিবার তাদের দাবিমত ক্ষতিপূরণ না হওয়া পর্যন্ত দেহ নিতে অস্বীকার করে। পরিবারের তরফে স্ত্রীর জন্য আর্থিক ক্ষতিপূরণ ও সরকারি চাকরির দাবি জানানো হয়েছে।
দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের সঙ্গে কথা বলার সময়, বিহারের অভিবাসী শ্রমিকদের সাহায্যকারী সংস্থা রিলায়েবল ফাউন্ডেশনের সভাপতি মহম্মদ আসিফ শেখ বলেছেন “আব্বাস আলীর পরিবারে তার স্ত্রী এবং পাঁচ সন্তান রয়েছেন। চাকরির খোঁজে তিনি মুম্বই যাচ্ছিলেন। তার পাঁচ সন্তানের মধ্যে চারটি মেয়ে। তারা এখন বাঁচবে কী করে? পরিবারটি রেলের তরফে ১০ লক্ষ টাকা আর্থিক ক্ষতিপূরণ পেয়েছে। পরিবারের আয়ের আর কোন উৎস নেই। এই সামান্য টাকায় কতদিন চলবে”। তিনি আর ও বলেন, “যে ব্যক্তি গুলি চালিয়েছিল সে একজন RPF আধিকারিক, একজন সরকারি কর্মচারী। তাই পরিবারের দাবি কেন্দ্রীয় সরকারকে আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। সেই সঙ্গে স্ত্রী’র চাকরিরও দাবি জানান হয়েছে’।