মধ্যপ্রদেশের গ্রামীণ কৃষি কর্মীরা (এমপি), যাঁরা শুক্রবার বিধানসভা নির্বাচনে ভোট দিয়েছেন, তাঁরা দেশের সর্বনিম্ন দৈনিক মজুরি পান। যা, কৃষিক্ষেত্রে জাতীয় গড় মজুরির থেকে অনেক কম। ভারতীয় রিজার্ভ ব্যাংক (আরবিআই)-এর তথ্য অনুসারে, মধ্যপ্রদেশের গ্রামীণ এলাকায় পুরুষ কৃষিকর্মীরা দৈনিক মজুরি পেয়েছিলেন মাত্র ২২৯.২ টাকা। আর, মডেল রাজ্য গুজরাতে দৈনিক মজুরি ২৪১.৯ টাকা। ২০২৩ সালের মার্চে শেষ হওয়া আর্থিক বছরে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী এমনটাই জানা গেছে। এবছর মজুরির জাতীয় গড় ছিল ৩৪৫.৭ টাকা। যদি একজন গ্রামীণ কৃষি কর্মী মধ্যপ্রদেশে মাসে ২৫ দিনের জন্য কাজ পান, তাহলে তাঁর মাসিক আয় হয় প্রায় ৫,৭৩০ টাকা। যা, চার বা পাঁচ জনের পরিবারের খরচ মেটানোর পক্ষে যথেষ্ট না-ও হতে পারে। কেরলের একজন গ্রামীণ খামার বিভাগের কর্মী এক্ষেত্রে পান সর্বোচ্চ মজুরি, দৈনিক ৭৬৪.৩ টাকা। যা মাসে ২৫ দিনের কাজের হিসেবে হয় ১৯,১০৭ টাকা। আর, গুজরাতের ক্ষেত্রে, একজন খামার শ্রমিকের মাসিক মজুরি হয় প্রায় ৬,০৪৭ টাকা।
রেটিং ফার্ম ক্রিসিলের হিসেব অনুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দেশে নিরামিষ থালির দাম ছিল গড়ে ২৭.৯ টাকা এবং আমিষ থালির দাম ছিল ৬১.৪ টাকা। এর অর্থ হল পাঁচজনের একটি পরিবারকে ভেজ থালি খাবারের জন্য দৈনিক ১৪০ টাকা বা প্রতিমাসে ৮,৪০০ টাকা খরচ করতে হবে। কোভিড অতিমারি চাকরি এবং আয়ের স্তরকে আঘাত করার সঙ্গেই ২০২১-২২ অর্থবর্ষে গ্রামীণ অর্থনীতিতেও আঘাত হেনেছে। উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি এবং সুদের হার, ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে আবার গ্রামীণ চাহিদাকে আঘাত করেছে। অন্যান্য দুর্বল বেতনভুক্ত রাজ্যগুলোর মধ্যে, উত্তরপ্রদেশে গ্রামীণ খামার কর্মীরা ২০২১-২২ সালে গড় দৈনিক মজুরি ৩০৯.৩ টাকা এবং ওড়িশায় ২৮৫.১ টাকা পেয়েছে। যে মহারাষ্ট্র সবচেয়ে শিল্পোন্নত রাজ্য বলে গর্বিত, সেই মহারাষ্ট্রের পুরুষ খামার কর্মীরা দৈনিক গড়ে ৩০৩.৫ টাকা পান। যার ফলে, কেরলের উচ্চ মজুরি অন্যান্য দুর্বল বেতনভুক্ত রাজ্যের খামার কর্মীদের আকৃষ্ট করেছে। সেখানে প্রায় ২৫ লক্ষ অভিবাসী শ্রমিক বসবাস করছেন বলে জানা গেছে।
আরও পড়ুন- ‘হালাল’ কী, এর আবার সার্টিফিকেট কীসের, কারা দেয়?
জম্মু ও কাশ্মীরে (J&K) খামার শ্রমিকরা গড় মজুরি পান ৫৫০.৪ টাকা, হিমাচল প্রদেশে পান ৪৭৩.৩ টাকা এবং তামিলনাড়ুর খামার শ্রমিকরা গড় মজুরি পান ৪৭০ টাকা। আরবিআইয়ের তথ্য অনুসারে, পুরুষ অ-কৃষি কর্মীরা মধ্যপ্রদেশে পেয়েছেন গড়ে ২৪৬.৩ টাকা। গুজরাতের কর্মীরা পেয়েছেন দৈনিক ২৭৩.১ টাকা এবং ত্রিপুরার শ্রমিকরা পেয়েছেন ২৮০.৬ টাকা। এই তিনটি রাজ্যই বিজেপিশাসিত। আর, তিনটি রাজ্যেরই গজ মজুরি ছিল জাতীয় গড়ের থেকে কম। কারণ, অ-কৃষি শ্রমিকদের জাতীয় গড় মজুরি ছিল ৩৪৮ টাকা। অন্যদিকে কেরলে আবার অ-কৃষি শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি জনপ্রতি ৬৯৬.৬ টাকা। ২০২৩ সালের মার্চে শেষ হওয়া বছরে কেরলের পরেই শ্রমিকদের দৈনিক মজুরি সবচেয়ে বেশি ছিল জম্মু-কাশ্মীরে, জনপ্রতি ৫১৭.৯ টাকা। এরপর তামিলনাড়ুর ৪৮১.৫ টাকা এবং হরিয়ানার ৪৫১ টাকা। গ্রামীণ পুরুষ নির্মাণ শ্রমিকদের ক্ষেত্রে গুজরাত এবং মধ্যপ্রদেশে আবার শ্রমিকদের দৈনিক গড় মজুরি ছিল জাতীয় দৈনিক গড় মজুরি ৩৯৩.৩ টাকার থেকেও নীচে। বিজেপিশাসিত গুজরাতের গ্রামীণ নির্মাণ শ্রমিকরা ২০২৩ সালের মার্চে শেষ হওয়া অর্থবছরে গড়ে ৩২৩.২ টাকা, মধ্যপ্রদেশে ২৭৮.৭ টাকা এবং ত্রিপুরায় ২৮৬.১ টাকা মজুরি পাবে।