যুদ্ধের জেরে বহু ভারতীয় ডাক্তারি পড়ুয়া ছাত্রকে ফিরতে হয়েছে ডিগ্রি অর্জন না করেই। অনেকেরই বছর দুয়েকের বেশি করে পড়াশোনা বাকি। এমত অবস্থায় তারা জানেন আগামী দিন কী হতে চলেছে। জানেন না সেখানে আর ফিরে গিয়ে পড়াশোনা সম্পূর্ণ করতে পারবেন কী না। ইউক্রেন থেকে জীবন বাঁচিয়ে দেশে ফিরে এলেন প্রচুর ভারতীয় ছাত্রদের ভবিষ্যৎ এখন আবারও অন্ধকারে। তার আরও প্রমাণ মিলেছে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশনের কথায়।
এমএমসি জানিয়েছে, বিদেশী মেডিকেল কলেজের স্নাতকদের, যারা ইন্টার্নশিপ শেষ করেনি, তাদের ভারতে এটি সম্পূর্ণ করার অনুমতি দিতে পারে, কিন্তু ইউক্রেন থেকে আসা সবাই এতে উপকৃত হবে না কারণ যারা স্নাতক এমবিবিএস কোর্স শেষ করতে পারেনি তারা এই সুবিধা পাবে না। এমন ছাত্রের সংখ্যা প্রচুর। ফলে তাদের ভবিষ্যৎ যে অন্ধকারে পড়ে গিয়েছে তা স্পষ্ট।
দিন কয়েক আগেই, পশ্চিম ইউক্রেনের ড্যানিলো হ্যালিটস্কি লভিভ ন্যাশনাল মেডিকেল ইউনিভার্সিটির কর্তৃপক্ষ আন্তর্জাতিক ছাত্রদের জানিয়েছিল যে যারা দেশের বাইরে অন্য প্রতিষ্ঠানে স্থানান্তর করতে চাইছেন তাদের মূল নথির সফট কপি প্রদান করা হবে, যেমন মার্কশিট এবং গবেষণাপত্র ইত্যাদি।
এদিকে ইউক্রেন ফেরত ভারতীয় পড়ুয়ারা আশা করছেন ন্যাশনাল মেডিক্যাল কমিশন শীঘ্রই একটি সিদ্ধান্তে পোঁছাবেন যাতে তারা দেশে তাদের বাকী কোর্স শেষ করতে পারেন।ফাইনাল ইয়ারের শিক্ষার্থীরা, যারা এই বছরের এপ্রিলের মধ্যে তাদের সেমিস্টার শেষ করবে, তারা বলেছে যে তারা পরীক্ষায় অংশ নিতে এবং ভারতে বাধ্যতামূলক ইন্টার্নশিপ করতে ইচ্ছুক। প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন যে এটি তাদের জন্য খুবই চিন্তার একটি কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, অনেকেই একটা বছর নষ্টের আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন।
পুনের বাসিন্দা হেমন্ত নিগদে, এই ভেবেই স্বস্তি পেয়েছেন যে তার মেয়ে নেহা, ইউক্রেনের টারনোপিল বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিবিএস প্রথম বর্ষের ছাত্রী, আপাতত নিরাপদে দেশে ফিরে এসেছে। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস দেওয়া একান্ত এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, “কী ঘটতে পারেত সেই চিন্তা করেই আমার ভয়ে হাত পা কাঁপতে থাকত । ওদেশে ফেরত পাঠানোর কোন তাড়াহুড়ো নেই। আমরা কেবল কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করতে পারি যাতে আমাদের সন্তানরা তাদের ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন অনুসরণ করতে পারে,”
বেশ কিছু চতুর্থ এবং পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থীরা আগামী ১৩ মার্চের মধ্যে কিছু আপডেটের আশা করছেন। নাগপুরের রাভিনা তাহকিত, ইউক্রেনের ভিন্নিতস্যার এমআই পিরোগভ জাতীয় মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী, বলেছেন, “আমাদের মার্চ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে বলা হয়েছে। তারপরে অনলাইন ক্লাস পুনরায় শুরু হতে পারে। যুদ্ধ শেষ হলে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে আমি আশাবাদী। সম্পূর্ণ কোর্সটি ৫.৮ বছরের। আমরা এখানে জুন পর্যন্ত অপেক্ষা করব এবং তারপর সিদ্ধান্ত নেব।”
অনিল রাঠোর, কিইভের বোগোমোলেটস ন্যাশনাল মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটির চতুর্থ বর্ষের ছাত্র, যিনি মধ্যপ্রদেশের রতলাম থেকে ইউক্রেনে ডাক্তারি পড়তে গিয়েছিলেন তিনি বলেন, “অনেক অনিশ্চয়তা রয়েছে, কিন্তু আমরা ১৩ মার্চের মধ্যে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলি থেকে আপডেটের ব্যাপারে আশাবাদী। ভারতে সুযোগ না পেলে আমাদের ওদেশে আবারও ফিরতে হবে”।বেশ কিছু ছাত্র আরও বলেছেন যে তারা পোল্যান্ড এবং আর্মেনিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলিতে কোর্স স্থানান্তর করার কথা বিবেচনা করছে৷ইউক্রেনের ইভানো-ফ্রাঙ্কিভস্ক ন্যাশনাল মেডিকেল ইউনিভার্সিটির পঞ্চম বর্ষের ছাত্র সুরেশ চৌধুরীর কথায় “আমি এপ্রিলের মধ্যে আমার সেমিস্টার শেষ
হবে এবং তারপরই ইন্টার্ন করতে ইচ্ছুক। এটি আমার শেষ বছর ছিল এবং তাই ভারতে ফিরে আসা এবং এখানে ইন্টার্নশিপ করতে আগ্রহী,”।বেশ কয়েকজন পড়ুয়ার কথা উঠে এসেছে কোর্স ফির কথাও। অনেকেই বলেছেন ইউক্রেনে যেখানে পুরো ৫.৮-বছরের কোর্সের জন্য ফি ২০ থেকে ২৫ লাখ টাকার মধ্যে, সেখানে ভারতে সেই খরচ প্রায় ৫০ লাখ টাকার কাছাকাছি। সেই সঙ্গে আসন সংখ্যা নিয়েও বিস্তর অভিযোগ ধরা পড়েছে পড়ুয়াদের গলায়।