মাত্র দুদিনের ব্যবধান। ভারতের মৃত্যু হল ২রুশ পর্যটকের। রায়গড় জেলার একটি হোটেল থেকে উদ্ধার হয়েছে মৃতদেহ। মৃতদের নাম পাভেল ও ভ্লাদিমির । পুলিশ সূত্রে খবর, পাভেল আন্তোনভ আত্মহত্যা করেন। পুলের পাশ থেকে উদ্ধার করা হয় তার রক্তাক্ত দেহ।
বৃহস্পতিবার উদ্ধার হয় ভ্লাদিমিরের মৃতদেহ। পরপর একই হোটেলে ২ ভিনদেশি পর্যটকের মৃত্যুর খবরে চরম উত্তেজনা ছড়ায়।
পুলিশ ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু মামলা রুজু করে তদন্ত শুরু করেছে। এদিকে ময়না তদন্তের রিপোর্ট ইতিমধ্যেই পুলিশের হাতে এসেছে তাতে উল্লেখ রয়েছে "অভ্যন্তরীণ আঘাতের" কারণেই মৃত্যু হয়েছে পাভেলের। রুমমেট ভ্লাদিমির বিদেনভ আগেই হার্ট অ্যাটাকের মারা যান।
ওড়িশা পুলিশ ২ রাশিয়ান পর্যটকের মৃত্যুর তদন্ত ইতিমধ্যেই সিআইডির হাতে তুলে দিয়েছে। ক্রাইম ব্রাঞ্চের একটি দল এই মুহূর্তে তদন্তের স্বার্থে রায়গড়ে রয়েছেন। ওড়িশা পুলিশের ডিআইজি (দক্ষিণ পশ্চিম রেঞ্জ) রাজেশ পন্ডিত হোটেলটি পরিদর্শন করেন। আন্তভ ওড়িশায় পৌঁছেছিলেন তার ৬৫ তম জন্মদিন অন্য তিন রাশিয়ান পর্যটকদের সঙ্গে উদযাপন করার জন্য এবং সঙ্গে ছিলেন ভারতীয় পর্যটক গাইড জিতেন্দ্র সিং। হোটেলের তৃতীয় তলায় পড়ে আন্তভের মৃত্যুকে ‘রহস্যময়’ বলে অভিহিত করেছে রাশিয়ান সংবাদ মাধ্যম। পাভেলের পোস্টমর্টেম রিপোর্টে বলা হয়েছে যে "হোটেলের তৃতীয় তলায় পড়ে যাওয়ার পরে তিনি গুরুতর 'অভ্যন্তরীণ' আঘাত পেয়েছিলেন", পুলিশ জানিয়েছে।
গত জুনেই, সোশ্যাল মিডিয়ায় ইউক্রেন বিরোধী একটি বার্তা পোস্ট করেছিলেন। তিনি পরে এটি প্রত্যাহার করে নেন। পরে এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, পোস্টটি "প্রযুক্তিগত ত্রুটির" কারণে হয়েছিল। অন্য দুই রাশিয়ান এবং ট্যুর গাইডকে কটকের ক্রাইম ব্রাঞ্চ সদর দফতরে তলব করা হয়। উভয় রাশিয়ানকে রাজ্য ত্যাগ না করতে বলা হয়েছে।
গত ২২ ডিসেম্বর অচৈতন্য অবস্থায় ভ্লাদিমিরকে হোটেলের একতলার ঘর থেকে উদ্ধার করা হয়। উদ্ধারকারীরা জানান, দেহ উদ্ধারের সময় চারপাশে অনেক মদের বোতল ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে দেখা গিয়েছিল। তড়িঘড়ি ওই পর্যটককে জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। হাসপাতালে পৌঁছনোর পর চিকিৎসক তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন। এর ঠিক তিন দিন পর অর্থাৎ ২৫ ডিসেম্বর আরেক রুশ পর্যটক পাভেল আন্তোনভের রহস্যমৃত্যু হয় একই হোটেলেই। হোটেলের তিন তলা থেকে পড়ে গুরুতর আহত হন তিনি। জেলা হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
পুলিশ জানিয়েছে, মৃত পাভেল আন্তোনভ তার বন্ধু ভ্লাদিমির বিদেনভ (৬১) এর মৃত্যুর পর হতাশায় ভুগছিলেন। প্রাথমিকভাবে এটি আত্মহত্যার ঘটনা বলে মনেই করা হচ্ছে। এই বিষয়ে ওড়িশার ডিজিপি সুনীল কুমার বনসাল জানিয়েছেন, সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর পাশাপাশি, আমরা কলকাতায় রাশিয়ান কনস্যুলেটের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। তিনি আরও বলেন, পাভেলের মৃত্যুর ঘটনা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। আমরা সব দিক খোলা রেখেই তদন্ত শুরু করছি। পরিবারের অনুমতি নিয়ে সোমবার মৃতদেহ দাহ করেন আধিকারিকরা।
এ বিষয়ে রুশ ট্যুরিস্ট গাইড জিতেন্দ্র সিং সাংবাদিকদে্র জানান, ‘রায়গড়ে হোটেলে চার পর্যটক ছিলেন। তাদের মধ্যে একজন, ৬১ বছর বয়সী বি. ভ্লাদিমির,গত কয়েকদিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন। পরদিন সকালে যখন আমরা তার ঘরে আসি, তাকে ঘরেই অজ্ঞান অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখি, আমরা তড়িঘড়ি পুলিশকে ফোন করে বিষয়টি জানাই’।তদন্ত সম্পূর্ন না হওয়া পর্যন্ত পাভেলের সঙ্গে আসা আরও দুই রুশ পর্যটককে দেশের বাইরে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।