চলতি মাসেই এক টেবিলে বসতে পারেন ইন্দো-পাক বিদেশমন্ত্রী। মার্চের সেশ সপ্তাহে তাজিকিস্থান যাবেন এস জয়শঙ্কর। সেখানে দুষাবেতে আফগানিস্থানের বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করবেন দেশের বিদেশমন্ত্রী। সেই সফরের ফাঁকেই শাহ মাহমুদ কুরেশির সঙ্গে বৈঠকের কথা জয়শঙ্করের।
জানা গিয়েছে, হার্ট অফ এশিয়া কনফারেন্সে যোগ দিতেই তাজিকিস্থান সফর করবেন জয়শঙ্কর। আফগানিস্থানের সঙ্গে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সম্পর্ক কোন জায়গায় দাঁড়িয়ে, সেটা ঝালিয়ে নিতেই এই সম্মেলন। তাঁর ফাঁকেই পড়শি দুই দেশের বিদেশ মন্ত্রীর সাক্ষাতের সম্ভাবনা। একটি সুত্র মারফৎ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানতে পেরেছে, এই বৈঠক সফল করতে ইতিমধ্যে কূটনৈতিক স্তরে দৌত্য শুরু হয়ে গিয়েছে। প্রাথমিক ভাবেই ইসলামাবাদই বৈঠকের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
জানা গিয়েছে তাজিকিস্থানে আয়োজিত এই সম্মেলন ইস্তানবুল শান্তি বৈঠকের অংশ। শান্ত ও উন্নত আফগানিস্থান বানাতে পারিপার্শ্বিক নিরাপত্তা ও সহযোগিতা বারাতে উদ্যোগ গ্রহণের সঙ্কল্প ইস্তানবুল শান্তি বৈঠকে রয়েছে। ২০১১ সালে তুরস্কে প্রথম এই সম্মেলন আয়োজিত হয়।
এর আগে দুই মন্ত্রীর কোনও সাক্ষাৎ হয়নি। ২০১৯ সালে নিউ ইয়র্কে মুখোমুখি দেখা হলেও কোনও দ্বিপাক্ষিক বৈঠক হয়নি। এমনকি, সার্ক সম্মেলনে জয়শঙ্কর মঞ্চ ছাড়ার পর সেই মঞ্চে ওঠেন কুরেশি।
ইতিমধ্যে, অতীত ভুলে উপমহাদেশে শান্তি স্থাপনের সওয়াল করলেন পাক সেনা প্রধান। পড়শি দেশের পদাতিক বাহিনীর প্রধান জেনারেল কামার বাজওয়া জানিয়েছেন, অতীতের বৈরিতা ভুলে সুসম্পর্ক স্থাপনে এগিয়ে আসুক দিল্লি-ইসলামাবাদ। ইসলামাবাদ নিরাপত্তা আলোচনা চক্রে অংশ নিয়ে বাজওয়া বলেন, ‘দক্ষিণ এবং মধ্য এশিয়ার সঙ্গে পূর্ব-পশ্চিম এশিয়ার সংযোগ স্থাপনে ভারত-পাকিস্তানের মিত্রতা বাড়ানো উচিত।‘
আমাদের মধ্যে কাশ্মীর সমস্যা একটা বড় মতভেদের কারণ। কিন্তু সেই সমস্যার বাইরে বেরিয়ে শান্তিপূর্ণ সমাধানসুত্র দুই দেশের খোঁজা উচিত। এমনটাই জানান পাক সেনা প্রধান। তাঁর বার্তা, ‘আলোচনার একটা ইতিবাচক পরিবেশ তৈরি করুক আমাদের পড়শি দেশ। বিশেষ করে অধিগৃহীত কাশ্মীরে আগ্রাসন বন্ধ করুক দিল্লি।‘
এদিকে, একই সুর সনা গিয়েছে পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের গলায়। পাকিস্তানের সঙ্গে শান্তি বজায় রাখলে প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ মধ্যএশিয়ার সঙ্গে সরাসরি সম্পর্ক স্থাপণ করতে পারবে ভারত। এতে ভারতের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ঘটবে। এমনটাই মনে করেন পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান কান। সীমান্ত সন্ত্রাস বন্ধের দায় প্রতিবেশী পাকিস্তানের উপরই ছেড়েছে নয়াদিল্লি। তারপরই শান্তি রক্ষায় ইমরানের তরফে ভারতকে এই বার্তা বলে মনে করা হচ্ছে।
নিরাপত্তা বিষয়ক দু’দিনের এক সম্মেলনে ইসলামাবাদে পাক প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘ভারতকে এখন ঘুরপথে মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখতে হচ্ছে। কিন্তু ওরা (ভারত) শান্তি বজায় রাখলে সরাসরি তা সম্ভব।’ ফলে কমবে জ্বালানীর খরচ, সময়ও কম লাগবে। যার দরুন ভারত অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ হতে পারবে বলে মনে করেন ইমরান খান।
যদিও ভারত-পাকিস্তান সম্পর্কের উন্নতিতে কাশ্মীর সমস্যাই প্রধান অন্তরায় বলে জানিয়েছেন পাক প্রধানমন্ত্রী। কাশ্মীরিদের অধিকার রাষ্ট্রসংঘের রেজোলিউশন অনুযায়ী ভারতের দেওয়া উচিত বলে জানান ইমরান। এ প্রসঙ্গে ইমরান বলেছেন, ‘রাষ্ট্রসংঘের রেজোলিউশন অনুযায়ী কাশ্মীরিদের অধিকার নিশ্চত হলে তা দুই প্রতিবেশী দেশেরই লাভদায়ক হবে।’
উরি ও পাঠানকোট হামলার জেরে বারত-পাক সম্পর্ক তলানীতে গিয়ে পৌছায়। ভারত জানিয়েছে সন্ত্রাসে পাকিস্তান মদত দেওয়া যতক্ষণ না বন্ধ করবে ততক্ষণ তাদের সঙ্গে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কোনও প্রয়োজন নেই। এরপরই ২০১৯ সালের অগাস্টে কাশ্মীরকে দু’টি কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলে ভাগ করে ৩৭০ দারা বিলোপ করে মোদী সরকার। যা নিয়ে সরব হয় ইসলামাবাদ। কিন্তু শহ চেষ্টাতেও পাকিস্তানের পক্ষে এই ইস্যুতে বিশ্বের অন্যান্য দেশের সমর্থন আদায় সম্ভব হয়নি।
কয়েক সপ্তাহ আগে অবশ্য, সীমান্তে যুদ্ধবিরতী চুক্তিতে সহমত পোষণ করেছে ভারত ও পাকিস্তান। যদিও দুই দেশের সম্পর্কের উন্নতির চেষ্টা ভারতকেই উদ্যোগী হতে হবে বলে জানিয়েছেন পাক প্রধানমন্ত্রী। এপ্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘২০১৮ সালে সরকারে এসে আমার সরকার ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের উন্নতিতে যথাসাধ্য চেষ্টা করেছে। কিন্তু উল্টো দিক থেকে সাড়া মেলেনি। তাই এবার সব চেষ্টা নয়াদিল্লিকেই করতে হবে।’