শবরীমালা ঘিরে উত্তাল কেরালা। সুপ্রিম রায়ে দীর্ঘদিনের রীতি ভেঙে মন্দিরে প্রবেশের অনুমতি পেয়েছেন সব বয়সের মহিলারা। কিন্তু, দেশের শীর্ষ আদালত লিঙ্গ সাম্য প্রতিষ্ঠা করতে রায় দিলেও তা বাস্তবায়িত করতে নারাজ 'ভক্তবৃন্দ'। ইতিমধ্যে শবরীমালায় মহিলাদের প্রবেশের বিরুদ্ধে উস্কানিমূলক মন্তব্য করায় অভিনেতা কোল্লাম তুলসীর বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে তাঁকে আটক করেছে কেরালা পুলিশ। তিনি বলেছিলেন, "যেসব মহিলারা শবরীমালা মন্দিরে প্রবেশের সাহস দেখাবেন, তাঁদের দু'টুকরো করে দেওয়া উচিত"।
২০১৬ সালে কেরালা বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপি-র টিকিটে দাঁড়ানো অভিনেতা কোল্লাম তুলসীর এমন মন্তব্যের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছিলেন স্থানীয় ডিওয়াইএফআই কর্মী রথিসান। এরপরই আটক হন তুলসী। এছাড়া কেরালা রাজ্য মহিলা কমিশনও এই অভিনেতার বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিতভাবে (সুয়ো মোটো) পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। তবে শনিবার তুলসী তাঁর বক্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়েছেন। তিনি বলেছেন , "আমার এমন মন্তব্য করা উচিত হয়নি। আসলে প্রবল ভক্তি থেকেই আমি ওভাবে প্রতিক্রিয়া দিয়ে ফেলেছিলাম। আমি আমার মন্তব্য প্রত্যাহার করছি এবং ক্ষমা চাইছি..."।
আরও পড়ুন- মহিলারা শবরীমালায় প্রবেশ করলে দু’টুকরো করে দেওয়া উচিত: মালয়ালম অভিনেতা কোল্লাম তুলসি
এদিকে, কেরালার অবস্থা এই মুহূর্তে অগ্নিগর্ভ। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ যাতে বাস্তবায়িত না হয়, অর্থাৎ মহিলারা যাতে কোনওভাবেই 'পবিত্র' শবরীমালায় প্রবেশ করতে না পারেন, সে জন্য দলে দলে মানুষ পথে নেমেছেন। এদিকে সমাজকর্মী তৃপি দেশাই শবরীমালা মন্দিরে যাওয়ার পরিকল্পনা ঘোষণা করেছেন। সিপিআইএম-এর নেতৃত্বাধীন রাজ্যের এলডিএফ সরকার তৃপ্তির এই পরিকল্পনার বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও মন্তব্য না করলেও, ভীষণভাবে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন আয়াপ্পা ভক্তরা এবং বিজেপি। তৃপ্তি দেশাই-এর এই পরিকল্পনাকে 'ভয়ঙ্কর প্রচেষ্টা' আখ্যা দিয়ে কেরালার বিজেপি সভাপতি পি এস শ্রীধারণ পিল্লাই বলেছেন, "দেশাইকে বাধা দেওয়ার দায়িত্ব ভক্তকুলের। আর তাঁরা এ জন্য পথে নামলে বিজেপিও পাশে দাঁড়াবে... তিনি আগুনে ঘি ঢালতে আসছেন"।
সংবাদ সংস্থা পিটিআই জানাচ্ছে, 'ভূমাতা ব্রিগেড'-এর নেত্রী তৃপ্তি মুম্বইতে জানিয়েছেন যে তিনি এবং বেশ কিছু মহিলা শীঘ্রই শবরীমালায় প্রর্থনা করতে যাবেন। একটি মালায়লাম টিভি চ্যানেলকেও তিনি বলেছেন, "ভক্তদের এই উত্তেজনা সৃষ্টি আদপে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশের অবমাননা...আমি কংগ্রেস ও বিজেপি-কে প্রশ্ন করতে চাই, তারা কি নারীদের মৌলিক অধিকারের বিরুদ্ধে"?
আরও পড়ুন- শবরীমালা মন্দিরে মেয়েদের প্রবেশাধিকার কি সমতাই সূচিত করে?
১৭ অক্টোবর মাসিক পূজার জন্য শবরীমালা মন্দির খোলা হবে। এদিকে, সুপ্রিম নির্দেশ কার্যকর করতে বদ্ধপরিকর কেরালার পিনারাই বিজয়ন সরকার। তাই নিরাপত্তা ও অন্যান্য প্রশাসনিক প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে তিরুঅনন্তপুরমে বৈঠক ডেকেছে রাজ্য সরকার। অন্যদিকে আবার সমাজকর্মী রাহুল এসওয়ার জানিয়েছেন তিনি শবরীমালার সামনে অনশনে বসবেন। আয়াপ্পার মন্দিরে যাতে তৃপ্তি দেশাই প্রবেশ করতে না পারেন, সে জন্যই রাহুলের এমন উদ্যোগ। সব মিলিয়ে দেবতার মন্দিরে প্রবেশ নিয়ে এক অভূতপূর্ব পরিস্থিতির সামনে ঈশ্বরের আপন দেশ।
Read this story in English