১০ থেকে ৫০ বছরের মহিলাদের প্রবেশাধিকার নিয়ে উত্তাল কেরালার শবরীমালা মন্দির। সুপ্রিম কোর্টের রায়কে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে মহিলাদের মন্দিরের গর্ভগৃহে প্রবেশ করতে দিলেন না কর্তৃপক্ষ এবং ভক্তরা। এই অবস্থাতে ২২ অক্টোবর রাত ১০ টায় সন্ধের প্রার্থনার পর এ মাসের মতো বন্ধ হল মন্দির। ১৭ অক্টোবর বিকেলবেলা দর্শনার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছিল মন্দির চত্বর। সুপ্রিম কোর্ট গত মাসেই রায় দিয়েছে, যে কোনও বয়সের নারীই প্রবেশ করতে পারবেন কেরালার শবরীমালা মন্দিরে। কিন্তু শীর্ষ আদালতের রায়কে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সে রাজ্য জুড়ে চলছে প্রতিবাদ। কেরালার আয়াপ্পা ভক্তদের বক্তব্য ছিল, ঋতুমতী মহিলারা মন্দিরে প্রবেশ করলে নাকি দেবতার কৌমার্যে ব্যাঘাত ঘটতে পারে।
মন্দির খোলার পর ১০ থেকে ৫০ বছর বয়সী কম করে ১২ জন মহিলাকে মন্দিরের গর্ভগৃহে ঢুকতে বাধা দেওয়া হয়। কেরালার শাসক দল জানিয়েছে, সুপ্রিম কোর্টের রায়কেই সমর্থন করবে তারা। এদিকে শীর্ষ আদালতের রায়ের বিরোধিতা করে তার পুনর্বিবেচনা দাবি করেছে কেরালার বিজেপি এবং কংগ্রেস সমর্থকরা।
অক্টোবর মাসে মন্দির খোলার প্রথম দিন থেকেই মহিলাদের প্রবেশ নিয়ে বিতর্ক দানা বাঁধতে শুরু করে। সংবাদমাধ্যমের ওপরেও আক্রমণের ঘটনা ঘটে। অন্ধ্র প্রদেশের চার সদস্যের একটি পরিবার মন্দির চত্বরে পৌঁছনোর চেষ্টা করেন ট্রেক করে। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ৪০ বছরের এক মহিলা থাকায় প্রতিবাদে ফেটে পড়েন আয়াপ্পা ভক্তরা। মহিলাকে পুলিশি নিরাপত্তা দেওয়া হলে পুলিশের ভূমিকার প্রতিবাদে ২৪ ঘণ্টার বন্ধ ডাকা হয়। তৃতীয় দিনে তিনজন মহিলাকে মন্দিরের গর্ভগৃহে ঢুকতে না দিয়ে ফিরিয়ে দেওয়া হয়। এদের মধ্যে ছিলেন হায়দ্রাবাদের সাংবাদিক কবিতা জাক্কাল এবং কোচির সমাজকর্মী রেহানা ফতিমা। রেহানার বাসভবনেও হামলা চালান আয়াপ্পা ভক্তরা। এর মাঝে মন্দিরের প্রধান পুরোহিত জানিয়ে দেন, মহিলারা মন্দিরে প্রবেশ করলে তালা বন্ধ করে দেওয়া হবে মন্দির। চতুর্থ দিনে পরিচয়পত্র দেখে বয়স যাচাই করে ঢুকতে দেওয়া হয় ৫২ বছরের এক মহিলা ভক্তকে। পঞ্চম দিনেও পাঁচ মহিলাকে ফিরে যেতে হয় মন্দির চত্বর থেকে।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর সুপ্রিম কোর্টের পাঁচ বিচারপতি নিয়ে গঠিত বিশেষ বেঞ্চ রায় দেয়, কেরালার শবরীমালা মন্দিরে প্রবেশ করতে পারবেন সব বয়সের মহিলারা। ঐতিহাসিক এই রায় নিয়ে বিক্ষোভ শুরু হয়েছিল রায়ের পর থেকেই। আয়াপ্পা ডিভোটিজ অ্যাসোসিয়েশন-এর পাশাপাশি নাইয়ার সোসাইটি এবং দিল্লির চেতনা কনশিয়েন্স অব উইমেন-এর পক্ষ থেকেও রায় পুনর্বিবেচনার আর্জি জানানো হয়। তাদের মতে, শীর্ষ আদালতের রায় “অসমর্থনযোগ্য এবং বিরক্তিকর”।
এতদিন ধরে শবরীমালা মন্দিরে প্রথানুযায়ী ১০ থেকে ৫০ বছর পর্যন্ত মহিলাদের প্রবেশাধিকার ছিল না। এর বিরুদ্ধে কেরালা হাইকোর্টে যে আবেদন করা হয়েছিল, তাতে হাইকোর্ট রায় দিয়েছিল যে, কেবলমাত্র তন্ত্রী (পুরোহিত)-ই এই প্রথার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকারী। এর বিরুদ্ধে যাঁরা আবেদন করেছিলেন, তাঁদের বক্তব্য ছিল, এই প্রথা প্রকৃতিগত ভাবেই বৈষম্যমূলক এবং মহিলাদের প্রার্থনার স্থান বাছাইয়ের অধিকারে হস্তক্ষেপকারী।