গাজা উপত্যকায় হাড়হিম পরিস্থিতি, চলছে ভয়ঙ্কর যুদ্ধ। কতটা নিরাপদ ইজরায়েলে থাকা ভারতীয়রা?
গাজা উপত্যকায় হাড়হিম পরিস্থিতি। হামাসের হামলার পর ইজরায়েল পাল্টা হামলা চালিয়েছে। এখনও পর্যন্ত যুদ্ধে ৪৮০ জন নিহত, হাজার হাজার মানুষ আহত হয়েছেন। সর্বশেষ রিপোর্ট অনুযায়ী, হামাসের হামলায় ইসজরায়েলে ৩০০ জনেরও বেশি নিহত হয়েছেন। একই সঙ্গে ইজরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনীর অপারেশন আয়রন সোর্ডস-এ ২৩০ জনের বেশি প্রাণ দিয়েছেন।
শক্তিধর ইজরায়েলে শনিবার হামলা চালিয়ে তছনছ করেছে প্যালেস্তাইনি জঙ্গি সংগঠন হামাস। শনিবার থেকে দফায় দফায় চলে রকেট হামলা। মুহুর্মুহু বেজে ওঠে সাইরেন। ফের একবার মধ্যপ্রাচ্যে তৈরি হয় যুদ্ধ পরিস্থিতি। সংবাদ সংস্থা বিবিসি জানিয়েছে, শনিবার থেকে শুরু হওয়া জঙ্গি সংগঠন হামাসের হামলায় অন্তত ৩০০ জন ইজরায়েলি নিহত এবং এক হাজারের বেশি আহত হয়েছেন। এরপরই প্রাথিমক ধাক্কা সামলে উঠে আসরে নামে ইজরায়েল।
সীমান্তে হামাস জঙ্গি গোষ্ঠী ও ইজরায়েলি সেনাদের মধ্যে তুমুল সংঘর্ষ চলছে। শনিবার ভোরে ইজরায়েলে নজিরবিহীন হামলা চালায় প্যালেস্তাইনের জঙ্গি সংগঠনের হামাস। এর পরই ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন এবং সতর্ক করেছেন যে এই হামলার কারণে হামাসকে তার মূল্য দিতে হবে। তারপর থেকে, ইজরায়েল গাজা উপত্যকায় বেশ কয়েকটি বিমান হামলা চালিয়েছে, যার জেরে ২৩০ জনের মৃত্যু হয়েছে বলেই দাবি করা হয়েছে।
ইজরায়েলি সেনাবাহিনী বলেছে যে তাদের সেনা সাতটি জায়গায় অনুপ্রবেশকারীদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে, অন্যদিকে ইজরায়েলি নৌবাহিনী বলেছে যে “হামাস” এর সন্ত্রাসবাদীরা আকাশ ও সমুদ্রপথে দেশে অনুপ্রবেশ করেছে। ইজরায়েলি সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে আহতদের মধ্যে অনেককে দক্ষিণ ইজরায়েলের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ইজরায়েলের ওপর প্যালেস্তাইনের জঙ্গি সংগঠনের নৃশংস হামলার পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ইজরায়েলের সমর্থনে সুর চড়িয়েছে। এর পর আমেরিকা এখন ইজরায়েলের পাশে দাঁড়ানোর কথা জানিয়েছে। একই সঙ্গে বিশ্বের বৃহত্তম জঙ্গি গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে ইজরায়েলকে যুদ্ধে সব ধরনের সাহায্যের বার্তা দিয়েছে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে যুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলেছেন। এরপর তিনি তার বিবৃতিতে বলেন, ‘আমরা ইজরায়েলকে সাহায্য করতে সবরকমভাবে প্রস্তুত’।
নেতানিয়াহুর সঙ্গে কথা বলার পর জো বাইডেন এক বিবৃতিতে বলেন, “আমি প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে স্পষ্ট বলেছি যে আমরা ই্জরায়েলের সরকার ও জনগণকে সাহায্য করার প্রস্তুত।”
মার্কিন বিদেশ সচিব অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনও হামাসের হামলার নিন্দা জানিয়েছেন। এন্টনি ব্লিঙ্কেন বলেন, “আমরা ইজরায়েলের বিরুদ্ধে প্যালেস্তাইনের জঙ্গি সংগঠন হামাসে ভয়াবহ হামলার নিন্দা জানাচ্ছি। আমরা ইজরায়েলের সরকার ও জনগণের পাশে রয়েছি। করছি এবং এই হামলায় নিহত ইজরায়েলি জনগণের প্রতি আমাদের সমবেদনা প্রকাশ করছি।”
সেনাবাহিনীর মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি বলেছেন, এই হামলায় অন্তত ৩০০ জন নিহত ও হাজারের বেশি আহত হয়েছেন। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে ইজরায়েলে এটাই সবচেয়ে মারাত্মক হামলা। প্রশাসন সূত্রে খবর গাজায় কিছু ইজরায়েলি সেনা ও সাধারণ নাগরিককে বন্দী করেছে হামাস।
ইজরায়েলের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেছে প্যালেস্তাইনের জঙ্গি সংগঠন হামাস। ইজরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট দাবি করেছেন, এই যুদ্ধে ইজরাইল জিতবে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, দক্ষিণ ও মধ্য ইকরায়েলে রকেট হামলা চালিয়ে হামাস বড় ভুল করেছে। পাশাপাশি ইজরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘ধ্বংসস্তূপে পরিণত হবে হামাস। চরম হুঁশিয়ারি দিয়েছেন নেতানিয়াহুর।
এদিকে যুদ্ধপরিস্থিতিতে হাজার হাজার ভারতীয়র মধ্যে বেশিরভাগই কেরলের। তারা বেশিরভাগ বৃদ্ধদের সেবা যত্ন নেওয়ার কাজে ইজরায়েলে এসেছেন। কেরলের ইদুক্কি জেলার স্থানীয় বাসিন্দা ইয়োহান্নান বলেছেন, আততায়ীরা যানবাহনে চেপে এসে রাস্তায় সাধারণ নাগরিকদের উপর গুলি ছুড়েছে। তিনি বলেছিলেন যে দেশে ভারতীয় সম্প্রদায় "এখন পর্যন্ত নিরাপদ" । ইজরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী আমাদের বাইরে না বেরোনোর পরামর্শ দিয়েছে। সকালের দিকে ব্যাপক গোলাগুলির শব্দ শুনতে পেয়েছি।
শাইনি বাবু, গত ১৩ বছর ধরে ইজরায়েলে রয়েছেন। পরিচর্যার কাজের সঙ্গে যুক্ত। তিনি জানিয়েছেন, “আমরা কেরলে পরিবার এবং বন্ধুবান্ধব সকলেই আতঙ্কিত। তাদের কাছ থেকে বারে বারে ফোন পাচ্ছি। বয়স্কদের যত্ন নেওয়ার কারণে আমরা খুব কমই বাইরে যাই। তাই এখন পর্যন্ত আমরা সবাই নিরাপদ। এখানে সমস্ত বাড়িতে বাঙ্কার রয়েছে এবং আমরা অ্যালার্ম শুনে নিরাপদে সেখানে গিয়ে আশ্রয় নিই”।