শিলচরে গেরুয়া তাণ্ডবের মুখে পড়লেন বাংলার কবি শ্রীজাত। শনিবার একটি সাংস্কৃতিক সংগঠনের আহ্বানে শিলচর গিয়েছিলেন তিনি। সেখানে ছিলেন স্থানীয় অন্যান্য কবি-শিল্পী সাহিত্যিকরাও। ওই অনুষ্ঠানে গেরুয়া হাঙ্গামায় আটকে পড়েছেন তাঁরাও।
এসো বলি নামের এক সাংস্কৃতিক সংগঠনের উদ্বোধন উপলক্ষে শিলচর পার্ক রোডের রিয়া প্যালেস হোটেলে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এ উপলক্ষে সেখানে হাজির ছিলেন বাংলার এই কবি। সেখানে অনুষ্ঠান শুরু হতেই হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের জনা কয়েকজন কর্মী বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করে বলে খবর। বিক্ষোভ শুরু হওয়ার কিছু পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। আটকে পড়া সংগঠকদের একজনের অভিযোগ, পুলিশ প্রশাসনের লোক এসে পৌঁছলেও দুষ্কৃতীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে না।
জানা গিয়েছে, এদিন অনুষ্ঠানের চলাকালীন কয়েকজন ব্যক্তি সভাকক্ষে উপস্থিত হয়ে অনুষ্ঠানের মধ্যে বক্তব্য পেশ করার ইচ্ছাপ্রকাশ করেন। শুরুতে তাঁদের অপেক্ষা করতে বলা হয়, কিন্তু তাঁরা অধৈর্য হয়ে উঠলে তাঁদের মাইক ছেড়ে দেওয়া হয়। মাইক নিয়ে শ্রীজাতর লেখা কবিতার লাইন উল্লেখ করে সেই লাইনের ব্যাখ্যা দিতে বলা হয় কবিকে। এ ঘটনার প্রতিবাদ ওঠে সভাস্থল থেকেই। উপস্থিত অতিথি ও অংশগ্রহণকারীদের তরফ থেকে সমস্যাসৃষ্টিকারীদের বের করে দিতে বলা হয়। বিক্ষোভকারীরা সে সময়ে হল ছেড়ে বেরিয়ে গেলেও, বাইরে জড়ো হতে থাকেন তাঁরা। কিছুক্ষণ পর ইট ছোড়া শুরু হয়। অভিযোগ, ভেঙে যায় হোটেলের জানালার কাচ।
শিলচরের ওই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ছিলেন কাছাড় কলেজের অধ্যাপক জয়দীপ বিশ্বাস। তিনি জানান, হোটেল কর্তৃপক্ষ এরপর বলে দেন, সভার কাজ তাঁরা আর চালাতে দিতে পারবেন না। বন্ধ করে দেওয়া হয় মাইকের সংযোগ। এর পরেও বিনা মাইকে সভার কাজ চলতে থাকে। কিন্তু পরিস্থিতি ক্রমশ ঘোরালো হতে থাকে, আটকে পড়েন অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসা অভ্যাগতরাও। তাঁদের তরফ থেকেই পুলিশ সুপারকে খবর দেওয়া হলে ঘটনাস্থলে অতিরিক্ত বাহিনী পাঠানো হয়। তবে পুলিশ এলেও কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি বলেই অভিযোগ।
অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত চিকিৎসক রাজীব কর জানান, এ ঘটনার প্রতিবাদে রবিবার নিন্দাসভা হবে শিলচরে। তিনি জানিয়েছেন, "শ্রীজাত-র গায়ে আঁচ পড়তে দেওয়া হয়নি।" তিনি বলেন, এ শহরে ৪৬ লক্ষ বাঙালি বাস করে। এ শহরে ১১ জন বাংলাভাষার জন্য শহিদ হয়েছেন। আজকের যে ঘটনা, তা আমার শহরের সংস্কৃতি হতে পারে না।
স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক চার্বাক বলেন, "শিলচরের পরিস্থিতি দীর্ঘদিন ধরেই খারাপ হচ্ছে। বাইরে থেকে এ শহর সম্পর্কে নানা ধারণা সম্প্রতি তৈরি হচ্ছে বটে, কিন্তু এ অবস্থা একদিনে তৈরি হয়নি।"
সংগঠকদের মূল অভিযোগ শ্রীজাতর বিতর্কিত কবিতা নিয়েই, যে কবিতা লেখার জন্য তাঁর বিরুদ্ধে পুলিশ কেসও করা হয়েছিল।